মন্দ লোকের সবচেয়ে সস্তা বিনোদন হলো-
পর্ণ মুভি দেখা, দল বেঁধে ইভটিজিং করা, ভিড়ের মধ্যে মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া, রাস্তায় কুৎসিত ভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা, স্ত্রীকে বাপের বাড়ি নিয়ে খোটা দেওয়া, অনুমতি ছাড়া কারো ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগে তা ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা প্রতিদিন বেঁচে থাকি কিছুটা শরীরে, বাকিটা মনে, মানে আত্মায়। কোনটার সুস্থতার জন্য কিছু কি করি? খাই-দাই, সবই তো মনের তুষ্টি। পুষ্টি কোথায়? জীবনটা হচ্ছে আপনার মটর সাইকেল। আপনি জানেন কিভাবে এটি চালাবেন। যত্ন নিলে ঝড়-বাদলের দিনে মটর সাইকেলকে সাঁই করে কর্দমাক্ত রাস্তায় টান দিয়ে ছুটাতে পারবেন। আবার যত্ন না নিলে, বাড়ির গ্যারেজে শরীর-মন পরে থাকতে থাকতে তা মরিচায় আঁকড়ে ধরবে।
অন্যকে ক্ষমা করতে শিখুন, আপনি শান্তিতে থাকবেন।
ইদানিং ইচ্ছে হয় সংসারের ঝামেলা থেকে দুরে কোথাও একা যদি কিছুদিন কাটিয়ে আসতে পারতাম। দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছে আছে আমার। দিন পনেরোর জন্য একটা পাহাড়ি ছোট্ট জায়গায় থাকাবো। একদম একা। শুধু আমি। একটা ছোট্ট ঘর, চারদিকে কিচ্ছু নেই। তবে ঘর একটা জানালা থাকবে, সেই জানালা দিয়ে অনেকখানি দেখা যাবে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। চারদিক গাঢ সবুজ। নীল ঝকঝকে স্বচ্ছ আকাশ। পাশ দিয়ে একটা পাহাড়ি নদী বয়ে যাবে। পাইন গাছের নীচে চেয়ারে গরম এক কাপ কফি নিয়ে চুপ করে বসে থাকবো। হাতে থাকবে প্রিয় কোনো বই। আকাশপাতাল ভাববো আর প্রকৃতিকে মন দিয়ে অনুভব করবো। একাএকা চড়াই উৎরাই ভেঙে অনেক দুর হাঁটবো। রাতে বই পড়তে পড়তে নদীর কলকল শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বো। কারো সাথে যোগাযোগ রাখবো না। নো মোবাইল, নো ইন্টারনেট।
মানুষ যার কাছে বার্তা পাঠাতে পছন্দ করে তাকে দ্রুত বার্তার প্রত্যুত্তর পাঠায়। আর কাউকে অপছন্দ করলে তার প্রেরিত বার্তাকে অবজ্ঞা করে। জাতির এক শ্রেণির মানুষের আসলে রুচিশীলতা নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে। দেখবেন আজকাল মুনীর চৌধুরীর 'কবর' নাটকের মত নাটক এখন কেউ দেখে না। মঞ্চনাট্য কেউ দেখে না। খোয়াবনামা বা চিলেকোঠার সেপাই এর মত উপন্যাসও এখন আর কেউ লেখে না আর পড়েও না। দৈনন্দিন সামাজিক জীবনে অহরহ আশেপাশে এত বেশি অমানবিক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এসবের কোন সুরাহা তো হচ্ছেই না। আমরা সুশীল লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে খুব আলতো ভাবে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি আর মনে মনে মনকলা খাচ্ছি, ‘নট মাই বিজনেস' মানসিকতা। কিন্তু দিন শেষে সামান্য খচখচানো তো থেকেই যায়, ওটাকেই সহজে ভুলায়ে রাখার জন্য দরকার ‘সহজ’, ’ইজি গোইং’ বিনোদন, ‘চিত্ত বিনোদন’ নয়। সেই সস্তা বিনোদন আসে ইন্সট্রাগ্রাম, টিকটক আর ফেসবুক থেকে।
নিজেকে মোবাইল-ফোন নির্ভর করবেন না।
এই জিনিসটা ছাড়া বাঁচতে শিখুন। শান্তি পাবেন। আমাদের এক শিক্ষক বলেছিলেন- খেলাধুলা, বিনোদন এগুলো পড়াশুনার জন্য লেবুর মতো। এগুলো পড়াশুনার জন্য উৎসাহ যোগাবে, রুচি বাড়াবে। কথাটি আমার কাছে বেশ লেগেছিলো। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার কথা খুব ভাবছি। যদিও চালান নেই আমার। ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে খুব বুঝতে পেতেছি, হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের ব্যবসার সুযোগ এখন অবারিত। ফার্মেসী ব্যবসা চলছে পাগলের মতো। মানুষ ভাত খাক আর না খাক তিনবেলা ওষুধ তাদের খেতেই হয়। ফিটনেস বা শরীরচর্চায়, জিমনেশিয়াম বা ফিটনেস সেন্টারের ব্যবসা বেশ রমরমা। শিশু পণ্য, ডায়াপার, ওয়েট টিস্যুসহ শিশুদের পণ্যের বাজার বেশ চলছে। যে কোনো চায়ের দোকানের ব্যবসা খুব রমরমা। রেস্টুরেন্ট গুলোতে খুব ভিড়। একটা তন্দুর রুটি বানাতে খরচ হয় চার টাকা অথচ দাম নিচ্ছে ২৫ টাকা। আপনি যদি মনে করেন আপনার ডিগ্রি, ধর্ম, জব আপনাকে অন্যদের চাইতে সেরা করে তোলে, তাহলে আপনি একটা চুদির ভাই।
ঢাকা শহরে প্রতিটা দিন শুরু হয় যুদ্ধের মাধ্যমে।
অফিসে যাওয়ার জন্য বাসে উঠতে আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে। এই শহরে বিশুদ্ধ বাতাস আর বিশুদ্ধ মানুষের অনেক অভাব। আমি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটি শুধু দেখি বিল্ডিং আর বিল্ডিং। গাছ নাই। বড় কষ্ট হয়। ঢাকা শহরে বৃষ্টি মানেই রাস্তায় জলাবদ্ধতা। ঢাকা বর্তমানে হচ্ছে রেষ্টুরেন্টের শহর। ৬-৭ বছর আগেও ঢাকায় এত্ত এত্ত রেষ্টুরেন্ট ছিলো না। ঢাকাবাসীর সাপ্তাহিক ছুটি এখন রেষ্টুরেন্টে খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাতে এয়ারপোর্ট রোড হয়ে কুড়িলের দিকে ফুটপাত দিয়ে হাটবেন না অথবা সাইক্লিং করবেন না ,প্রচুর ছিনতাই হয়। সম্ভব হলে যানবাহন ব্যবহার করুন। এই শহরের কোনো মানুষের কাছে কখনও মানবতা আশা করবেন না। এই শহরের প্রতিটা মানুষ বদমাশ। অমানবিক। হৃদয়বান। আধুনিক মানুষেরা প্রচুর তথ্য খাচ্ছে প্রতিদিন, কিন্তু সৃষ্টিশীল কাজ করছে খুবই কম। ফলে হতাশার অসুখ বাড়ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৩