somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল (আঠারো)

২৩ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত দুই দিন ধরে শাহেদ জামাল বাইরে বের হয়নি।
গতকাল সারাদিন মেঘলা ছিলো। সামান্য বৃষ্টিও হয়েছে। আজ তো ভোর রাত থেকেই বৃষ্টি। আকাশ প্রচন্ড মেঘলা এবং বৃষ্টি হচ্ছে। হয়েই যচ্ছে। মনে হয় সারাদিন এভাবেই যাবে। এই বৃষ্টিই সম্ভবত শীত নামিয়ে দেবে। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকা শাহেদ জামালের পক্ষে সম্ভব না। আর বেকার মানুষ সারাদিন ঘরে থাকলে নিজের বাপ, মাও যেন কেমন কেমন করে তাকায়। বিড় বিড় করে যেন কি বলে। মনে হয় গালিটালি দেয়। শাহেদ জামাল আজ যাবে তার পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে। গতকাল মোবাইলে কথা হয়েছে। বন্ধুর নাম রাজীব। রাজীব বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী, সুরভি ভাবী অসাধারণ একজন মানুষ। সমস্ত পৃথিবীর মায়া ধারন করে তিনি বসে আছেন। তাদের পরীর মতো সুন্দর একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা ভীষন মিষ্টি। দারুন বুদ্ধিমতি।

বৃষ্টি মাথায় নিয়েই শাহেদ জামাল বের হলো।
তাদের একটা ছাতা ছিলো। কিন্তু শাহেদ জামালের মা ছাতা দিলেন না। কারন এর আগে শাহেদ জামাল দুটা ছাতা হারিয়েছে। আজ শুক্রবার। লোকজন বৃষ্টির মধ্যে জুম্মার নামাজ পড়তে বের হয়েছে। শাহেদ মনে মনে বলল, ওহে মুসলমান ধার্মিক হওয়ার আগে 'মানুষ' হও। তোমরা এখনও মানুষ হতে পারো নি। প্রতি বছর দূর্গা পূজার সময় বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও দূর্গার মাথা ভেঙ্গে ফেলা হয়। শাহেদ জামাল পরীর জন্য এক বক্স দামী চকলেট কিনলো। সুরভি ভাবীর জন্য সুন্দর দেখে একটা শাড়ি কিনলো। শাড়িটা আসলেই সুন্দর। সাদার মধ্যে ছোট ছোট নীল ফুল আঁকা। সবচেয়ে সুন্দর শাড়ির আঁচলটা। আচলটা দেখলে মনে হয়- সত্যি সত্যি একটুকরো আকাশ। আকাশে কিছু মেঘও জমে আছে। বন্ধুর জন্য কিনলো একটা পাঞ্জাবী। ওদের বিয়ের সময় কিছু দেওয়া হয়নি। তাছাড়া হাতে কিছু টাকা আছে। সব সময় তো হাতে টাকা থাকে না। গতকাল শাহেদ জামাল তার শান্তিনগরে যে ছেলেটাকে পড়ায় তার বাবা বকেয়া দুই মাসের বেতন একসাথে দিয়েছেন। টাকা টা ভালো কাজে লেগেছে।

রাজীবের বাসা খিলগাও এর দিকে।
একসময় প্রায় প্রতিদিনই রাজীবের কাছে যাওয়া হতো। খুব পুরোনো বন্ধু। কাছের বন্ধু। প্রানের বন্ধু। একবার শাহেদ জামাল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলো। তিনদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। রাজীব একটানা তিন দিন হাসপাতালে ছিলো। আরেকবার অনার্স পরীক্ষার ফিসের টাকাও রাজীব দিয়ে দিয়েছিলো। শাহদ জামাল কলিং বেল এ হাত রাখলো। সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো। তিনটা হাসি মুখ শাহেদ জামালের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসি খুশী ঝামেলা বিহীন এই পরিবারটাকে শাহদ জামালের শহরের সবচেয়ে সুখি পরিবার বলে মনে হয়। ওদের দেখতেও ভালো লাগে। রাজীব শাহেদ জামালকে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল, Old friend
It's so nice to feel you hold me again
No, it doesn't matter where you have been
My heart welcomes you back home again

সুরভি বলল, জামাল ভাই আপনাকে বহুদিন পর দেখলাম।
শাহেদ জামাল একটা হাসি দিলো। শাড়িটা দেখে সুরভি মুগ্ধ! বুঝাই যাচ্ছে শাড়িটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। সুরভি বলল, শাড়িটা আমি এখনই পড়বো। এরকম একটা শাড়ির আমার খুব শখ ছিলো! রাজীব বলল, বন্ধু এত কিছু আনতে গেলে কেন? তোর এই অভ্যাস আর গেলো না। যা দেখিস পকেটে টাকা থাকলে তাই কিনে ফেলিস। পরী বলল, এত চকলেট খেয়ে খেয়ে তো আমি বেশ মোটা হয়ে যাবো চাচ্চু। পরীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। পুরো বাড়ি খাবারের গন্ধে ভরে গেছে। সুরভি ভাবীর রান্নার বেশ সুনাম আছে। যতবার শাহদ সুরভির রান্না খেয়েছে ততবার মুগ্ধ হয়েছে। শাহদ জামাল বলেছে, ভাবী আমি যে মেয়েকে বিয়ে করবো- তার প্রধান শর্ত থাকবে সেই মেয়ে যেন আপনার মতো সুন্দর রান্না জানে। এবং আপনার মতো যেন মায়াবতি হয়। সুরভি বলল, নীলাকে সাথে আনলেন না কেন? নীলাকে অনেকদিন দেখি না। শাহেদ বলল, এরপর যখন আপনার বাসায় আসবো তাকে নিয়ে আসবো।

সবাই একসাথে খেতে বসলো।
এত এত খাবার দেখে শাহেদ জামাল অবাক! প্রচন্ড অবাক। টেবিল ভরতি খাবার। এমন কিছু নেই যা সুরভি ভাবী রান্না করেন নাই। রাজীব বলল, সুরভি রান্না করতে পছন্দ করে। মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করে। কেউ আরাম করে বসে তার রান্না করা খাবার খাচ্ছে এটা দেখতে সুরভির খুব ভালো লাগে। বহুদিন পর শাহদ জামাল বেশ তৃপ্তি করে খেলো। প্রচুর খেলো। মুগ্ধ হয়ে খেলো। পরী শাহেদ জামালকে জিজ্ঞেস করলো, চাচু রুই মাছ ইংরেজী কি? শাহেদ বলল, Salmon। পরী বলল, চাচু তুমি কি সব মাছের ইংরেজী নাম জানো। শাহেদ বলল, হুম জানি। বলো, তুমি কোন মাছে ইংরেজী নাম জানতে চাও?
পরী বলল, পাঙ্গাশ। শাহেদ বলল, Halibut
পরী বলল, বোয়াল। শাহেদ বলল, Sheet fish
পরী বলল, তিমি ৷শাহেদ বলল, Whale
শাহেদ জামালের প্রতিভায় পরী মুগ্ধ!

খাওয়া দাওয়া শেষ।
এত বেশি খেয়ে ফেলেছে শাহেদ জামাল, এখন তার ঘুম পাচ্ছে। সুরভি ভাবী জোর করে সমস্ত খাবার প্লেটে দিয়েছেন। শাহেদ বলল, ভাবী আপনাদের বাসায় আর আসা যাবে না। আপনি খাইয়ে খাইয়ে মেরে ফেলবেন। সুরভি বলল, জামাল ভাই আপনি তো খুব সামান্য খেলেন। শাহদ বলল, জ্বী ভাবী এতই সামান্য খেয়েছি যে এখন আমার হাঁসফাঁস লাগছে। সুরভি ভাবী বলল, এবার বিশ্রাম নিন। বিকেলে ছাদে যাবো। ছবি তুলবো নতুন শাড়িটা পড়ে। নতুন জামা পড়লে আমার ছবি তুলতে ইচ্ছা করে। শাহেদ বলল, রাজীবকে দেখতাম যেখানে যেত ক্যামেরা নিয়ে যেত। প্রচুর ছবি তুলতো। পরী বলল, বাবা এখনও প্রচুর ছবি তুলে। আমার ছবি সবচেয়ে বেশি তোলে। শাহেদ বলল, তা আমি খুব ভালো করেই জানি। শাহেদ সুরভির ভাবীর দিকে তাকিয়ে বলল, একসময় যে মেয়ের বিয়ে হতো না, রাজীব সে মেয়ের ছবি তুলে দিতো। এবং ছবি দেখে পাত্রপক্ষ মেয়েকে পছন্দ করে ফেলতো। সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে যেত।

পরী কার্টুন দেখছে।
'ফ্লিনস্টোন ফ্যামিলি'। এটা তার প্রিয় কার্টুন। এদিকে তারা তিনজন তুমুল আড্ডা দিচ্ছেন। পরী কার্টুনে মনোযোগ দিতে পারছে না। বাবা বলল, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি শি জিনপিং। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব ও চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি। শাহেদ জামাল বলল, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে আজ অবধি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি নয়তো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সুরভি বলল, তৃতীয় অবস্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি তিনি। পরী কার্টুন দেখার পাশাপাশি আড্ডার কথা গুলোও মন দিয়ে শুনছে। তারা এক কথা থেকে আরেক কথায় চলে যাচ্ছে দ্রুত।

এখন বাবা বলছে, PS, I Love You উপন্যাসটির কথা।
উপন্যাসের রচয়িতা হলেন একজন আইরিশ লেখিকা Cecelia Ahern। শাহেদ বলল, উপন্যাসের কাহিনী কি রকম? রাজীব বলল, উপন্যাসটি একটি সুখী দম্পতিকে নিয়ে, যাদের বয়স তিরিশের আশপাশে। হাসি মজায় ভালোবাসায় তাদের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। হঠাৎ একদিন ছেলেটির ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে এবং সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। মেয়েটি তার স্বামীর চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। খাওয়া দাওয়া, বাইরে বেরোনো, লোকজনের সাথে কথা বলা সব বন্ধ করে দেয়। তার দিন রাত্রি দুঃখের অন্ধকারে ঢেকে যায়।

এরকম সময়ে একদিন তার কাছে তার মায়ের ফোন আসে। তার মা জানায় যে তার কাছে একটা চিঠি এসেছে যেটি তার মেয়ের মৃত স্বামীর লেখা। তার কাছে এরকম দশটা চিঠি আসবে, প্রত্যেক মাসে একটা করে। মেয়েটি শুনে পাগলের মতো দৌড়ে যায় এবং চিঠিটি খুলে পড়ে। প্রত্যেক চিঠিতে তার জন্য কিছু নির্দেশ ছিল তার স্বামীর দেওয়া আর প্রত্যেকটি চিঠির শেষে লেখা থাকতো 'PS, I Love You'। এভাবেই তার স্বামী নিজের মৃত্যু আসন্ন জেনেও তার স্ত্রীকে তার পরবর্তী জীবনের জন্য আলোর পথে এগিয়ে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:০১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×