somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

এক যে ছিলো সুকান্ত ভট্টাচার্য

২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ই আগস্ট, ১৯২৬- ১৩ই মে, ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াব্যাপী যে চরম অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল সেই যুগ ও সমাজ পরিবেশে ঔপনিবেশবিরোধী লেখক, বাংলা সাহিত্যের ‘বিপ্লবের কবি’ সুকান্ত ভট্টাচার্য। পিতা, নিবারন ভট্টাচার্য, মা, সুনীতি দেবী। পিতা নিবারণ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুনীতি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র সুকান্ত।
সুকান্তের বাবা ছিলেন পণ্ডিত ও রসঙ্গ মানুষ। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট (বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩০ শ্রাবণ) মাতামহ সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৪৩, (মতান্তরে ৮২ নং) মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়ির দোতলায় একটি ছোট্ট ঘরে ‘কিশোর কবি’ অভিধায় অভিহিত বাংলা সাহিত্যে আসন করে নেয়া সুকান্তের জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে)।

দারিদ্র্য এবং দুঃখকষ্টের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পরিস্থিতি ও ঘটনার মধ্যেই তাঁর পিতা-পিতামহ কলকাতার জীবন শুরু করেন। সুকান্ত তাঁর ভাইদের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়; অন্যরা হলেন মনমোহন, সুশীল, প্রশান্ত, বিভাস, অশোক ও অমিয়। সুকান্ত তাঁর বড় ভাই মনমোহন ভট্টাচার্য ও বৌদি সরযূ দেবীর সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একটি বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারে, পঠন-পাঠন এবং প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য ও শাস্ত্র চর্চার পরিবেশে সুকান্ত বড় হন। রবীন্দ্রকাব্য, কল্লোল, কালিকলম, প্রগতি-র আধুনিক সাহিত্য পাঠ ও শ্রুতির মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যবোধের হাতেখড়ি।

সুকান্তের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি ছিলেন তার রাণী দি।
সে-সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মণীন্দ্রলাল বসুর ‘সুকান্ত’ গল্পটি পড়ে রাণী দিই তার নাম রেখেছিলেন ‘সুকান্ত’। সুকান্তের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন তার এই জেঠতুতো বোন। ছোট্ট সুকান্তকে গল্প-কবিতা শুনিয়ে তাঁকে সাহিত্যের প্রথম ছোঁয়া তিনি দেন। সুকান্তকে কোলে নিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করতেন। তাঁর মা তাকে রামায়ন-মহাভারত পড়ে শোনাতেন। ক’দিন পর আকস্মিকভাবে রাণীদি মারা গেলে সুকান্ত প্রচণ্ড আঘাত পান। এর কিছুদিন পর ১৯৩৭ সালে কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মা-ও চিরবিদায় নেন। এর এক বছর পরেই সবচেয়ে বড় জ্যাঠতুতো দাদা গোপাল ভট্টাচার্য মারা যায়। একের পর এক মৃত্যুশোক যেন ১১-১২ বছরের সুকান্তকে করে তুলেছিলো হতাশাগ্রস্থ। বিষাদাচ্ছন্ন করে তোলে তাঁকে। নিঃসঙ্গ থেকে নিঃসঙ্গতর হয়ে ওঠে। কবিতাই ছিল তাঁর একাকীত্বের সঙ্গী। কিশোর সুকান্ত হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেল। অন্তর্মুখী মন নিয়ে সুকান্ত রচনা করেন একের পর এক কবিতা, ছড়া।

সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু।
সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠি গুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্র স্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র।

শৈশব কাটিয়েছেন বাগবাজারের তাদের নিবেদিতা লেনের বাড়িটিতে। সেখানকারই কমলা বিদ্যা মন্দিরে তাকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়। কমলা বিদ্যা মন্দিরেই সুকান্তের সাহিত্যের হাতেখড়ি হয়। শৈশবেই তার সাহিত্যানুরাগ স্পষ্ট হতে থাকে। আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়’ এ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দিন কয়েক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তাঁর লেখা ‘বিবেকানন্দের জীবনী’।
মাত্র এগার বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন। এটি পরে তাঁর ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়। পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রুব’ নাটিকার মূল চরিত্রে অভিনয় সুকান্তকে বয়সের তুলনায় অনেক পরিপক্ক করে তুলেছিল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি বাল্যবন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন।

কমলা বিদ্যা মন্দিরে লেখাপড়ার পাঠ শেষ করে সুকান্ত ভর্তি হন বেলেঘাটা দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে। সুকান্ত সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন ভারতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মাধ্যমে। ১৯৪৪ সালেই 'ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’ এর প্রকাশনা ‘আকাল’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন তিনি সম্পাদনা করেন। ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।

সুকান্তের কবি জীবন সত্যিকার অর্থে শুরু হয় যখন তাঁর বয়স চৌদ্দ কি পনেরো। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় চৌদ্দ বছরের বালক সুকান্তের কবিতার খাতা পড়ে বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁকে সুকান্ত কবিতা দেখাতেন, পরিমার্জন আশা করতেন। এক স্মৃতিচারণে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেন, ‘কীভাবে কবিতা লিখতে হবে তার জন্য সুকান্ত তাঁর কাছে আসতেন, কিন্তু কী লিখতে হবে সেই সংকট তার কখনোই ছিল না।’ এরই মধ্যে বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা এসে পড়ে কলকাতায়ও। মানবতা তখন লাঞ্ছিত। যুদ্ধের তান্ডব চোখের সামনে তখনো দেখা না গেলেও এর ভয়াবহতা অনুমান করে সবাই শঙ্কিত।
এ সময় সুকান্ত বেশ কিছু কবিতা লেখেন। পূর্বাভাস গ্রন্থে এসব কবিতা সংকলিত হয়েছে। স্বভাবগতভাবেই সুকান্ত গভীর ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তার কবিতায়। পরাধীন দেশের দুঃখ-দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্মজীবন এবং ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা। পৃথিবীব্যাপী অনাচার-অত্যাচারের বিরোধিতার পাশাপাশি নিজ দেশে যাবতীয় অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি সোচ্চার হন। কবিতায়, চিঠিপত্রে, নাটিকা, গল্প-গানে সর্বত্র তার একই মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’, ‘চাষি-মজুর’ বিষয়গুলোকে বিশ্বস্ততা ও প্রতিশ্রুতি-র সাথে তিনি তুলে ধরেছেন। সৃষ্টির বেদনার অস্থিরতা তার ভেতরে ক্রিয়াশীল ছিল সেসময়ে। বিতর্ক চর্চা, আলোচনা, গান, নাটক, কবিতা পাঠের আয়োজনকে মার্কসবাদের প্রচার ও বিপ্লবী চেতনার সৃষ্টির হাতিয়ার ছিল, এরই বাহক ছিলেন অন্য সবার মতো সুকান্তও। দেশব্যাপী গণআন্দোলনের বৃহৎ জোয়ারে যুক্ত হয়ে সুকান্ত যে তীক্ষ্মধী ও মেধাবী ভাষায় কবিতা রচনা করলেন তা বিস্ময়কর। যুগ চেতনা নয় শুধু, যুগে যুগে দেশে দেশে অত্যাচার-অনাচার-শোষণের বিরুদ্ধে সুকান্তের কবিতা মূর্তিমান কবিতা।

১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিও-র গল্প দাদুর আসরের যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। গল্প দাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তাঁর লেখা গান মনোনীত হয়েছিল আর তাঁর সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক। রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ। তেমনি সুকান্তও ওই বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তাঁর ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্ত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।

১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। বিপ্লবী রোমান্টসিজম বা প্রথাগত কমিউনিজমের আদতে নয়, প্রকৃতঅর্থে কমিউনিজম ছিল সুকান্তের প্রেরণা, ধ্যান-জ্ঞান। এক্ষেত্রে কলম ছিল তার সংগ্রামের সাথী। আর খেটে-খাওয়া মেহনতি মানুষ ছিল তাঁর বেঁচে থাকার জীবনীশক্তি ও সৃষ্টির মৌলিক উপাদান। কমিউনিজমের দর্শনের আলোয় প্রতিনিয়ত তিনি চেতনাকে শান দিতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।

সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি।
বিত্তহীন, গরিব, মুটে, মজুর-কৃষক, অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণি বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি।
বরং রাজপথে শোষিত মানুষের অধিকার আদায় ও শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সংগ্রাম আর লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরার অবিচল অঙ্গিকারে তিনি ছিলেন ইস্পাত দৃঢ়। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। তাঁর কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংঘঠিত করে তোলে। সুকান্তের লেখনি গভীরভাবে প্রভাবিত হতো তার সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে। চারপাশের মানুষকে নিয়ে সুকান্তের যে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি ছিলো, তাই তিনি ঢেলে দিতেন কলমে-কাগজে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। কবিতায় যতটা গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন তা অনেক কবিই পারেননি। যে কারণে তাঁকে ‘গণমানুষের কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

সুকান্তের জীবদ্দশায় তিনি নিজের কবিতা সমাদৃত হতে দেখেছেন। নানা পত্র-পত্রিকায় দেশে-বিদেশে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। অনূদিত হয়েছে। অসুস্থাবস্থায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের আয়োজন চলছিল, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে এই বইয়ের সমস্ত কবিতাগুলো হাসপাতাল নিয়ে গিয়ে যখন সুকান্ত-র হাতে দেয়া হয়, তখন সে আনন্দ উঠে বসেছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই তার আকস্মিক প্রয়াণে কিছুটা থমকে নামকরণ করে ১৯৪৭ সালে তা প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩, নাটিকা), ঘুম নেই (১৯৫৪, কাব্যগ্রন্থ), হরতাল (১৯৬২, গল্প), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫, গানের সংকলন) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। বলাবাহুল্য, তার সবগুলো বই-ই প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুর পর।

একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কমিনিস্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতা-র ‘কিশোর সভা’ বিভাগ তিনি সম্পাদনা করতেন। তখন বিভিন্ন স্থানে এর শাখাও গড়ে উঠেছিল। তাই পার্টির কাজ, নিজস্ব লেখালেখির পাশাপাশি শাখার কমরেডদের প্রচুর চিঠি ও পোস্ট কার্ড লিখলেন। এ দিকটি লক্ষ্য করলে ও চিঠি পাঠে দেখা যায়, তিনি শুধু কবি হতে চাননি, চেয়েছিলেন সবার ভেতরেই সৃষ্টির স্ফূরণ ঘটুক। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তাঁর শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রিটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬-৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×