আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেসব খাবার গ্রহণ করেছেন, তা ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। নবীজি (সা.) মোরগ, লাউ, জলপাই, সামুদ্রিক মাছ, মরুভূমির এক প্রকার পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর-ডুমুর, মাশরুম, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ইত্যাদি খাবার সমূহ পছন্দ করতেন। দেড় হাজার বছর পর আজকের বিজ্ঞান গবেষণা করে দেখেছে নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেসব খাবার আহার করতেন তার গুণাগুণ ও উপাদান মানব দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও যথাযথ। নিম্নে সংক্ষেপে রাসুল (সা.)-এর ১২টি প্রিয় খাবারের আলোচনা তুলে ধরা হলো-
১।
পনিরঃ তাবুকের যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু পনির নিয়ে আসা হয়। রাসুল (সা.) বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো টুকরো টুকরো কাটেন এবং সবাইকে নিয়ে পনির খান।
পনির হলো- ছানা থেকে তৈরি একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় প্রায় সবাই পনির পছন্দ করেন। পনির তৈরির মূল উপাদান হলো দুধ।
২।
মাখনঃ একবার রাসুল (সা.) এক সাহাবীর ঘরে যান। তখন তারা নবীজিকে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করেন। আল্লাহর রাসূল, মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।
দুধের পরেই দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হল ঘি ও মাখন। খাবারের স্বাদ বাড়াতে মাখনের বিকল্প নেই। স্বার আর পুষ্টিতে ভরা মাখন সকালের নাস্তায় অনেকেই খেয়ে থাকেন।
৩।
মিঠাই ও মধুঃ ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন। আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মধু হলো উত্তম ওষুধ।
মধুর অন্য একটি গুণ হল এটি কখনো নষ্ট হয় না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম।
৪।
ঘি মাখা রুটিঃ রাসুল (সা.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমের তৈরি ও ঘিয়ে ভাজা সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসে।
ঘি কেন জানি আমার ভালো লাগে না। তবে সুরভি খুব খায়। তাকে দেখি, ঘি হালকা গরম করে নিয়ে ময়দার সঙ্গে মেশায়। প্রয়োজনমতো লবণ ও পানি দিয়ে ভালো করে ময়দা মাখায়। ময়দা মাখা হয়ে গেলে গোল গোল করে বেলে নিয়ে রুটি বানায়।
৫।
দুধঃ রাসুল (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে বায়তুল মোকাদ্দসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে, জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দু’টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।
দুধ শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবারগুলোর মধ্যে একটি। দুধ এ আমিষ, চর্বি, শর্করা ও নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলে।
৬।
খেজুরঃ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা। অন্য হাদিসে আছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই।’ এমনকি প্রিয় নবী (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নবীজি নিজ হাতে বহু খেজুর গাছ রোপন করেছেন।
খেজুর খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। খেজুরকে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়। খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফল। করোনাকালীন সময়ে খেজুর খেলেই উপকার পাবেন যে কেউ। ফ্রুক্টোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
৭।
কিশমিশঃ ‘রাসুল (সা.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।
আঙুর ফলের শুকনা রূপই হচ্ছে কিশমিশ। যা তৈরি করা হয় সূর্যের তাপ অথবা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সাহায্যে। স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি একটি খাবার। আর যদি রাতভর ভিজিয়ে খেতে পারেন তাহলে তো শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়ে যাবে। রক্তশূন্যতা দূর করতে এবং গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়া উচিত। প্রতিদিন কিশমিশের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন ওষুধ ছাড়াই। এছাড়া কিশমিশ হৃদয় ভালো রাখে। নিয়ন্ত্রণে রাখে কোলেস্টেরল।
৮।
সারিদঃ ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। আর হায়স হলো মাখন, ঘি ও খেজুর দিয়ে যৌথভাবে বানানো খাবার।
প্রচণ্ড পুষ্টিকর খাবার। সবার সারিদ খাওয়া দরকার। গায়ে বল হবে।
৯।
সিরকাঃ ‘রাসুল (সা.) তার পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তারা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী (সা.)-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। তারপর বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন!
প্রতিদিন একটু সিরকা বা ভিনেগার এবং এর সঙ্গে খানিকটা পনির—এই খাবার খালি পেটে রক্তের শর্করা ৪ থেকে ৬ শতাংশ কমাতে পারে। সিরকায় সাধারণত ৫ শতাংশ অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে।
১০।
তরমুজ ও শসাঃ রাসুল (সা.) তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তাজা) খেজুর খেতেন। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি।
তরমুজে প্রচুর পানি ও ডায়েটারি ফাইবার থাকে। শরীরে পানিশূন্যতা পূরণে তরমুজ খুবই উপকারী। শশা খাওয়া শরীরে জন্যও বেশ উপকারী।
১১।
খরগোশের গোশতঃ আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, মাররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে ধরতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তবে আমি ধাওয়া করে সেটি ধরি এবং হজরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মারওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে পাঠান। রাসুল (সা.) সেগুলো আহার করেন।’ তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন।
আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব মেটাতে খরগোশের মাংস গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আমাদের দেশে খরগোশের মাংসের চাহিদা কম হলেও বহির বিশ্বে খরগোশের মাংসের প্রচুর চাহিদা।
১২।
খাসির পায়াঃ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।
সুস্বাদু খাসির পায়া গরম পরোটা বা লুচির সঙ্গে দারুন জমে। নেহারি বাংলাদেশের সর্বাধিক ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৩:৪৩