অনেকদিন 'আজকের ডায়েরী' লিখছি না।
গতকাল রাতে ঠিক করেছি ঘুম থেকে উঠেই 'আজকের ডায়েরী' লিখব। লেখার অনেক কিছু জমে আছে। এখন মাছ কিনতে বাজারে যাই না। বাসার সামনেই সব রকম মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এমন কি তারা কেউ কেউ মাছ কেটেও দিচ্ছে। গতকাল দেখি, পুঁটি মাছ বিক্রি হচ্ছে। ছোট গুলো কেজি দুই শ' টাকা। আর একটু বড় সাইজের পুঁটি মাছ তিন শ' টাকা কেজি। আমি বড় সাইজের এক কেজি পুঁটি মাছ কিনে নিলাম। পুঁটি মাছ ভাজা খেতে ভালোই লাগবে। একলোক খইলসা মাছ বিক্রি করছে। সাইজে দেখতে পুঁটি মাছের মতোনই। কিনে নিলাম এক কেজি তিন শ' টাকা দিয়ে। খইলসা মাছ কিভাবে খায় কে জানে! সুরভি কিছু একটা ব্যবস্থা করবে নিশ্চয়ই। খইলসা আর পুঁটি মাছ কেনার কারন হলো- এগুলো খাল, বিল নদীর মাছ। চাষের মাছ না। চারিদিকে শুধু চাষের মাছ। চাষের মাছ খেয়ে আরাম নাই। আবার দামও বেশী।
বাসায় মাছ নিয়ে আসলাম।
মাছ দেখে সুরভি এক লাফ দিলো। বুয়া লাফ দিলো তিনটা। কারন বুয়াকেই এই মাছ কাটতে হবে। সুরভির মাছ কাটার অভ্যাস নাই। সুরভি বলল, এই গুড়া মাছ কাটবে কে? আমি বললাম, মাসুমা (বুয়া) আর তুমি দুজনে মিলে কাটবে। একদম দেশী মাছ। টাটকা। খেয়ে আরাম পাওয়া যাবে। সুরভি বলল, এরকম গুড়া মাছ তো তুমি কোনো দিন আনো নাই! আমি বললাম, খেতে ইচ্ছা করলো। তাছাড়া চাষের মাছ থেকে এই মাছ ভালো। দামেও কম। সুরভি বলল, ঠিক আছে কিন্তু এক কেজি না এনে আড়াই শ' গ্রাম আনতে পারতে। আমি বললাম, আমি কোনো কিছুই কম কিনতে পারি না, জানো তো। মাছ হোক বা ফল হোক। পেয়ারা, আপেল, আনার বা অন্য যে কোন ফল কিনলেও তিন কেজির কম কিনি না। কিনতে পারি না। শেষমেষ মাছ বুয়াকে অর্ধেক দিয়ে দেওয়া হলো। আমার জন্য সামান্য রেখে। দুপুরে পুঁটি মাছ ভাজা আর ডাল দিয়েই ভাত খেলাম। কাতলা মাছ ছিলো ছুয়েও দেখি নাই। কাতলা মাছটা ছিলো চাষের। পুঁটি মাছ ভাজা ছাড়া আর কি কিভাবে খাওয়া যায়? পুঁইশাক দিয়ে কেমন হবে?
খাবার নষ্ট করা আমার মোটেও পছন্দ না।
কিন্তু আমার ঘরে খাবার নষ্ট হয়। হচ্ছে। সেদিন ময়লার ঝুড়িতে দেখলাম, কয়েক রকমের ফল ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি সুরভিকে বললাম, ঘটনা কি? সুরভি বলল, দেড় মাস আগের ফল। ফ্রিজে থাকে এত দিন? নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ফেলে দিয়েছি। আমি বললাম, নষ্ট হবে কেন? নষ্ট হওয়ার আগে খেয়ে নিলেই তো হতো। সুরভি বলল, আলসেমি লেগেছে। আমি সুরভির কথায় প্রচন্ড অবাক। এখন থেকে আমি নিজে আনার, পেয়ারা, কমলা, আপেল কেটে দেই। তারা খায়। কিন্তু নিজেরা কেটে/ছিলে খাবে না। আজিব। যেহেতু আমি টাকা দিয়ে কিনেছি, তাই আমার মায়া লাগে। নষ্ট হওয়ার আগেই নিজের গরজে কেটে ওদের খেতে দেই। পরীকে দুধ খেতে দেই প্রতিদিন এক গ্লাস। একদিন দেখি পরী লুকিয়ে দুধ বেসিনে ফেলে দিচ্ছে। এই দুধ আমি বনশ্রী থেকে আনাই। এক কেজি দুধের দাম ৯০ টাকা। ভাড়া খরচ হয় এক শ' টাকা। অপচয় আমার ভালো লাগে না।
আগামী একমাসের মধ্যে একটা বিয়ে হবে।
এই বিয়ে নিয়ে আমি, সুরভি আমরা খুব ব্যস্ত। আমরা খুব উত্তেজিত। পাত্র আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। পাত্রী সুরভির বান্ধবী। তারা দুইজন'ই ঠিক করেছিলেন বাকি জীবনে বিয়ে করবেন না। চাকরি, অফিস-বাসা আর ঘুরে বেড়িয়ে জীবন পার করে দিবেন। অলরেডি তাদের দুজনের বয়স ৩৫ পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। দিনরাত নানান প্লান প্রোগ্রাম করে আমরা একটু একটু করে এগিয়েছি। বড় ভাইয়ের বন্ধু আর সুরভির বান্ধবীকে আমাদের বাসায় ডেকে এনেছি। অবশ্য সেদিন বাসায় একটা অনুষ্ঠান ছিলো। সেই অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় করে দেওয়া হয়েছে। এবং রাতে তারা আমাদের প্লান মোতাবেক একসাথে বাসায় ফিরেছে। এইভাবে তাদের শুরু। এখন খুব শীঘ্রই তাদের বিয়ে হবে। দুই পক্ষের গার্জেনের দেখা এবং কথা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে। পাত্রপাত্রী এখন রাতে মোবাইলে কথা বলে। এর মধ্যে তারা তিন দিন বাইরে দেখাও করেছে।
আজ রাতে তারা আমাদের বাসায় আসবেন।
রাতে ভাবীর ঘরে রান্না হবে। বিরাট খাওয়া দাওয়া হবে আজ। পাত্র পাত্রীর পিতা মাতাও আসবেন। পাত্রী ভালো চাকরি করে। পাত্রও ভালো চাকরি করে। অবশ্য তারা চাকরি না করলেও সমস্যা নাই। বংশগত ভাবেই তারা বিরাট ধনী। ঢাকা শহরে নিজেদের বিরাট বাড়ি আছে। অনেক টাকা তারা বাড়ি ভাড়াও পায়। ও ভালো কথা, পাত্রীর দাম সুমনা। সুমনা আপা ভালো রান্না জানেন। সেদিন আমাদের বাসায় নিজে রান্না করে খাবার পাঠিয়েছেন। পরীর জন্য লইট্রা শুটকি রান্না করে পাঠিয়েছেন। পরী যে কার কাছ থেকে শুটকি খাওয়া শিখলো! আজিব! আমার জন্য গরুর মাংস, রোষ্ট আর পোলাউ। পাত্ররে নাম আলম। আলম ভাই চাকরি করলেও মূলত তিনি একজন কৃষক। তার বাড়ির ছাদে সব রকম ফলের গাছ আছে। সবচেয়ে বড় কথা তার গাছের ফল গুলো অনেক ভালো। অনেক মজা। তার চাষকরা ফল গত দশ বছর ধরে নিয়মিত আমাদের বাসায় আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪