সময় রাত তিনটা পনের মিনিট।
অনেক রাত। বলা যায় কিছুক্ষন পরেই ভোর হতে শুরু করবে। শাহেদ জামাল মাত্রই একটা কোরিয়ান ভূতের মুভি দেখে শেষ করলো। মুভির নাম 'The wailing'। মুভিটা ভালো লাগেনি। যাদুটোনা, ঝাড়ফুক, আত্মা, শয়তান নিয়ে ফালতু মুভি একটা। এই আধুনিক যুগে এসে এরকম ফালতু মুভি দেখার কোনো মানে হয় না। তার আড়াই ঘন্টা সময় নষ্ট হলো। এই আড়াই ঘন্টা একটা বই পড়লেও ভালো হতো। নিজের উপরই প্রচন্ড রাগ লাগছে শাহেদ জামালের। ভালো একটা মুভি দেখলে মনটা আনন্দে ভরে যায়। আবার ফালতু মুভি দেখলে মেজাজ বিগড়ে যায়। বাকি রাতটুকুতে হয়তও আর ঘুম আসবে না। অসুবিধা নাই, তার একটা ছোট্র ব্যলকনি আছে। মাথা ভরতি নানান রকম চিন্তা আছে। সময় চলে যাবে। শাহেদ ব্যলকনিতে বসলো। এখন সে একটা সিগারেট খাবে।
ব্যলকনি ছোট হলেও অনেকখানি দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
দুই বিল্ডিং এর ফাক দিয়ে, মসজিদের পাশের গলিটা দেখা যায়। গলিটা দীর্ঘদিন ভাঙ্গা ছিলো। রাস্তার লাইট গুলোও জ্বলতো না। এখন রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। নতুন লাইটও লাগিয়েছে। সারারাত রাস্তাটা এখন আলোতে ঝলমল করে। দেখতে ভালো লাগে। কয়েকদিন আগে রাস্তাটার বাম পাশের দেয়ালে কে বা কারা যেন বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেখানে লেখা 'আপনার পরিবারের কেউ কি মাদকাসক্ত'? নিচে দুটা মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। শাহেদ জামালের ইচ্ছা একদিন সে এই নাম্বারে ফোন দিবে অথবা সরাসরি ওদের সাথে অফিসে গিয়ে দেখা করে আসবে, চা খেয়ে আসবে। ব্যলকনিতে বসলেই বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ে। এই গলিটা দিনের চেয়ে রাতের বেলা বেশী সুন্দর লাগে। এর কারন কি? এর কারনটা শাহেদ জামালকে খুঁজে বের করতে হবে।
শাহেদ জামাল সিগারেটে লম্বা একটা টান দিলো।
সে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছে। চারপাশ অন্ধকার। রাস্তটার লাইট জ্বলে, ঝলমল করছে বলেই নিজের অজান্তেই সেখানে চোখ চলে যায়। হঠাত শাহেদ জামাল দেখলো- চারজন লোক যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। তাদের কাঁধে একটা খাট। যে খাটে করে মৃত মানুষ কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। দৃশ্যটা দেখে শাহেদ প্রচন্ড ভয় পেলো। একটু আগে সে হরর মুভি দেখেও এতটা ভয় পায়নি। চারজন লোক এখন দাঁড়িয়ে আছে। হয়তও বিশ্রাম নিচ্ছে। অথচ তাদের কাঁধে লাশ। তারা খাটিয়াটা নামায়নি। শাহেদ কি করবে বুঝতে পারছে না। চারজন লোক শাহেদের দিকে তাকালো। কিন্তু শাহেদকে দেখার প্রশ্নই আসে না। শাহেদ অন্ধকারে বসা। ব্যলকনির বাতি জ্বালায় নি। আলো থেকে অন্ধকারে দেখা যায় না। কিন্তু তাদের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তারা শাহেদকে দেখতে পারছে।
শাহেদ জামাল প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।
সে দৌড়ে ঘরে চলে এলো। বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। তার বুক কাঁপছে। দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। শাহেদ জামাল নিজেকে বলল, ভয় পাচ্ছো কেন? ভয় পাওয়ার কি হয়েছে? তুমি না গর্ব করো- তুমি আধুনিক মানুষ, কুসংস্কার মুক্ত? তাহলে এখন ভয় পাচ্ছো কেন? একজন মানুষ মারা গেছেন, তাকে কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছে। রাত বলে লোকজনের সংখ্যা কম। সামনেই মসজিদ। কিছুক্ষন পর ফযরের নামাজ হবে। নামাজ শেষে জানাজা হবে। তারপর লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে অস্বাভাবিকের কি আছে? ভয়ের কি আছে? শাহেদ জামাল নিজেকেই নিজে বলল, তারা এখানে থামলো কেন? আমার দিকেই বা তাকালো কেন? তারা এখানে থেমেছে এমনিই থেমেছে। এটা কাকতালীয়। আর তারা তোমার দিকে তাকায় নি। তুমিই এমনটা ভেবে নিয়েছো।
নিজের যুক্তিতে ভয় চলে গেলো।
এখন শাহেদ জামালের একটুও ভয় করছে না। বরং কিছুক্ষন আগে যে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো- তার জন্য এখন লজ্জা লাগছে। লজ্জা কাটানোর জন্য শাহেদ ছাদে গেলো। ভোর হওয়া দেখবে। ভোরের আকাশ দেখা দারুন একটা ব্যাপার। তার খুব ইচ্ছা নীলার সাথে একসাথে ভোর হওয়া দেখবে- পাহাড়ে, সমুদ্রে, জঙ্গলে। ভোরের আলোতে নীলাকে দেখতে কেমন লাগবে কে জানে! মসজিদে ফযরের আযান হচ্ছে। নিশ্চয়ই নামাজের পর মৃত ব্যাক্তিটির জানাজা হবে। শাহেদ কি পারে না জানাজায় অংশ নিতে? কবর দিতেও যেতে পারে। কবরস্থান তো দূরে নয়। খুব কাছেই। আচ্ছা, কে মারা গেলো এটাও তো জানা দরকার। কিভাবে মারা গেলো? যে মারা গেছেন সে কি নারী না পুরুষ। বয়স কত? করোনায় মরেনি তো?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৮