
সূরা আল আরাফ কুরআনের সপ্তম সূরা।
এর আয়াত সংখ্যা ২০৬টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ২৪টি। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে- রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত। সূরার ৪৬ ও ৪৭নং আয়াতে (পঞ্চম রুকূতে) আরাফ বাসীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই জন্যে এর নামকরণ করা হয়েছে 'আল আরাফ'। আল্লাহ প্রেরিত রসূলের আনুগত্য করার জন্যে শ্রোতাদের উদ্বদ্ধ করাই এর সমগ্র আলোচনার মৌল উদ্দশ্য ও লক্ষ্য। রাসূল হিসাবে তাঁর প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তাঁর প্রতিটি নির্দেশের অনুসরণ করতে হবে। নবীজী (স.) বলেছেন- যে কেউ কোরআনের প্রথম সাতটি সূরা গ্রহণ করবে সে আলেম হিসেবে গণ্য হবে। সুরা আল আরাফ পড়তে চাই্লে। বাংলা উচ্চার ও অর্থসহ।
আল আরাফ অর্থ উঁচু স্থান।
ফেরাউনের সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল।
আল্লাহ তা’আলাই তাদের হেদায়াতের জন্য হুদ আলাইহিস সালামকে নবীরূপে প্রেরণ করেন। তিনি 'আদ' জাতিকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং অত্যাচার উৎপীড়ন ত্যাগ করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে আদেশ করেন। আদ জাতির উপর বিকট ধরনের শব্দের আযাব এসেছিল।
‘আদ’ ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি।
আল্লাহ সৎ ও মুমিন বান্দাদের জন্য এইসব নেয়ামত সৃষ্টি করলেও কাফেরদেরকেও এসব নেয়ামত ভোগের সুযোগ দিয়েছেন। অবশ্য পরকালে কাফেরদের জন্য কোনো নেয়ামতের ব্যবস্থা নেই। পরকালে খোদায়ী নেয়ামতগুলো শুধু মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট থাকবে। সূরা আল-আরাফ এর ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- 'তোমরা তোমাদের রবকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে। নিশ্চয় তিনি পছন্দ করেন না সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে'। আয়াত নং ২০৫ এ বলা হয়েছে- আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে।
সূরা আল আরাফ একটি মক্কি সূরা।
আপনি পৃথিবীতে আসার পূর্বেই আল্লাহর আনুগত্য করার ওয়াদা দিয়ে এসেছেন। তাই পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া বিধান উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। ১৭৯ নং আয়াতে আল্লা বলেছেন, বহু জ্বীন ও মানুষ আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয় তারা দেখে না। তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা চরম গাফলাতির মধ্যে হারিয়ে গেছে। এখানে আল্লাহ তায়ালা বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমি মানুষকে হাত পা, চোখ, কান, হৃদয় দিয়েছি কিন্তু বেকুফরা এগুলোর যথাযথ ব্যাবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। এখানে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য জাহান্নামী নিজেই দায়ী। কেননা সে আল্লাহর দেয়া চোখ, কান, হৃদয় তার বিরুদ্ধে (খারাপ কাজে) ব্যাবহার করেছে।
সব নবী-রাসূলই নিষ্পাপ এবং তারা কখনও কোনো পাপ করেননি। আল্লাহর উপদেশ বা নির্দেশ অমান্য করা মানে নিজের ওপরই জুলুম করা। কারো পাপ কখনও আল্লাহর কোনো ক্ষতি করে না, বরং পাপীদেরই ক্ষতি করে। সুরা আরাফের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তাআলা এ সুরার চার স্থানে মানবজাতিকে ‘হে আদম সন্তান!’ বলে সম্বোধন করেছেন। এ সুরায় হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের ক্ষমা প্রার্থনার ঐতিহাসিক দোয়া তুলে ধরা হয়েছে। 'আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।
সূরা আরাফের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হিসেবে অপচয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা, আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস স্থাপনকারী কাফেরদের অন্তিম অবস্থা, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব সাধ্যের বেশি না হওয়া, জান্নাতবাসীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, আরাফের বর্ণনা, জাহান্নামীদের কামনা ও প্রার্থনার আদেশও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সূরা আরাফের দ্বিতীয় আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন- 'এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার ওপর নাজিল হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভয় দেখান। তাই এটি পৌঁছে দিতে আপনার মনে কোনোরূপ দুঃখ থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ বা সতর্কবাণী।
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



