somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমার দাদী

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ আমার তোলা।

আমার দাদী খুবই সুন্দরী মহিলা ছিলেন।
তার ১৩ জন ছেলে মেয়ে। দুই জন মারা গেছেন। দাদী আক্ষেপ করে বলতেন তোমার দাদা বিয়ের পর থেকে আমাকে শান্তি দেয় নি। প্রতি বছর আমার পেট উঁচু হয়ে থাকতো। এত বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার কি দরকার ছিলো? দাদী সব সময় চোখে মোটা করে কাজল দিয়ে থাকতেন। একদিন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, দাদী সব সময় চোখে কাজল দেন কেন? দাদী বললেন, তোমার দাদার জন্য চোখে কাজল দেই। তোমার দাদা কাজল পছন্দ করেন। আমি বললাম, দাদা তো অন্ধ। (দাদা তার পয়ত্রিশ বছর বয়সে একদিন হঠাত অন্ধ হয়ে যান) দাদী বললেন, প্রতিদিন আমি গোসল করে আসার পর তোমার দাদা জিজ্ঞেস করেন, আমি চোখে কাজল দিয়েছি কিনা।

আমার দাদা দাদী সারা জীবন গ্রামেই থেকেছেন।
কিন্তু একদিন তারা ঢাকা শহরে চলে আসেন। কারন ফুপুদের বিয়ে দিতে হবে। আমার ফুপুদের বিয়ে দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। কারন সব ফুপুরা খুবই রুপসী ছিলেন। এই সমাজে সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে দিতে কোনো বেগ পেতে হয় না। ধনী লোকোদের সাথে সব ফুপুদের বিয়ে হয়ে গেলো। দাদা দাদী ঢাকা এসে আর গ্রামে ফিরে যান নি। আমৃত্যু ঢাকা থেকে গেছেন। তবে প্রতি মাসে এক দুই দিনের জন্য গ্রামে যেতেন। দাদা দাদী তার কোনো ছেলে মেয়ের বাসায় উঠেন নি। তারা আলাদা বাসা নিয়ে থেকেছেন ঢাকায়। আমি প্রতি শুক্রবার দাদীর সাথে দেখা করতে যেতাম। দাদী আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার মনে আছে, দাদা দাদীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় আমি পান জর্দা আর সুপারি নিয়ে যেতাম।

শেষ জীবনটা দাদীর খুব কষ্টে গেছেন।
আমার দাদা আগে মারা গেছেন। তার তিন বছর পর দাদী। এই তিন বছর দাদীর সীমাহীন কষ্ট গেছে। তার হাতে ঘা হয়েছিলো। সেই ঘা কিছুতেই ভালো হয় নি। ঘা এর জায়গাতে মাছি ভন ভন করতো। তার পুরো শরীরে এক ছটাক মাংসও ছিলো না। শুধু হাড্ডি। হাড্ডি চামড়ার সাথে মিশে একাকার অবস্থা। তিনি কোনো খাবার খেতে পারতেন না। নাকে নল দিয়ে তাকে তরল খাবার খাওয়ানো হতো। হাঁটা চলা করতে পারতেন না। কথা বলতে পারতেন না। কাউকে চিনতে পারতেন না। এর মধ্যে বহুবার তার দম প্রায় আটকে গিয়েছে। আমরা সবাই ভেবেছি দাদী এবার শেষ। হাসপাতালে নিয়ে গেছি। ডাক্তার ভরতি নেয় নাই। বলেছেন, যে কোনো সময় উনি মারা যাবেন। কিন্তু তবুও এভাবেই দাদী তিন বছর টিকে ছিলেন। তিন বছরে আমি দাদীকে কমপক্ষে ত্রিশ বার এম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল নিয়ে গেছি। কোলে করে বিল্ডিং থেকে নামিয়েছি। উঠিয়েছি। দাদির পুরো শরীর লোহার মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিলো।

আমার দাদী দারুন রান্না করতেন।
তার হাতের রান্না ছিলো অসাধারণ। তার হাতের বিবিখানা পিঠার তুলনা হয় না। সেই সব স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। দাদা অন্ধ হয়ে যাবার পর দাদী তাকে ছেড়ে এক মুহুর্তের জন্যও কোথাও যান নি। অনেক সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তো, দাদী দাদাকে ছেড়ে যেতে চাইতেন না। আমার দাদার একটা নিয়ম ছিলো, দাদা সাত পদ ছাড়া খেতে বসতেন না। তাও সব গুলো খাবার দাদীর হাতের রান্না হতে হবে। দাদী নিজের হাতে সব রান্না করতেন। আমার দাদী খুব গান গাইতেন। যদিও তার গলা ভালো ছিলো না। তবু তিনি গান গাইতেন। দাদী আমাকে বহু গান শুনিয়েছেন। গ্রামে গেলে দাদী সকালে আমাকেসহ বাড়ির সকলকে রঙ চা আর মুড়ি দিতেন। কারন নাস্তা হতে দেরী হবে। বাড়ি ভরতি মানুষজন। এত মানুষের রান্না দেরী হওয়াটা স্বাভাবিক।

একদিন দাদীর সাথে দেখা করতে গিয়েছি।
দেখি, দাদী বেলকনিতে বসে কাঁদছেন। সুর করে কাঁদছেন। আমি বললাম, দাদী কাঁদছেন কেন? দাদী ফোপাতে ফোঁপাতে বলছেন, তার বিয়ের সময় তার বাবা তাকে একটা সীতা হার দিয়েছিলেন। সেই হারটা বাড়ির এক কামলা রমিজ চুরী করে পালিয়ে ছিলো। যদিও পরে রমিজ এসে মাফ চেয়েছিলো। এবং তার কাজে জয়েন করেছিলো। দাদী সেই হারের কথা মনে পড়েছিলো। হারের কথা মনে করে কান্না করছিলেন। দাদা বলছেন, মঞ্জুর মা (আমার এক ফুপুর নাম মঞ্জু) কান্না করো না। এরপর তো আমি তোমাকে কলকাতা থেকে দুই টা হার বানিয়েছিলাম। দাদী বললেন, সেই সীতা হারটা আমার বাবার সৃতি ছিলো। আবার কান্না। একসময় দাদী পান খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সিগারেট ধরলেন। সিগারেট সাপলাই দিতাম আমি। সেই সিগারেট সে বাথরুমে লুকিয়ে খেতো। একদিন বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×