আচ্ছা বলুন তো ১-১-১, এটা কী?
বুঝতে পারছেন না? আচ্ছা তাহলে বলুন তো ১৪-০৪-২০১০, এটা কী? এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, ২০১০ সালের চতুর্থ মাসের ১৪ তারিখ। আর ১-১-১ হচ্ছে ১ সালের প্রথম মাসের প্রথম দিন। এই তারিখটা খ্রিস্ট সালেরও হতে পারে, আবার হিজরি সালেরও হতে পারে। কিন্তু এই তারিখটা বঙ্গাব্দে নেই। অবাক হচ্ছেন? তাহলে খুলেই বলি।
বঙ্গাব্দের শুরু হয়েছিল কবে থেকে সেটা তো অনেকেই জানেন- ১৫৫৬ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে। তবে শুরুর দিন কিন্তু ১ সাল ছিল না, ছিল ৯৬৩ সাল। আপনি কপাল কুঁচকে বলবেন, কেন? তখন এ দেশে হিজরি সাল প্রচলিত ছিল। কিন্তু ফসল তোলার ঝামেলার কারণে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তো সেই হিজরি বছরটিকে ঠিক রেখেই নতুন একটি বর্ষপঞ্জি চালু করা হয়। তবে আপনারা যারা চটপট হিসাব করে ফেলতে পারেন তাদেরও কপাল কুঁচকাতে পারে।
দুনিয়ায় দুই ধরনের ক্যালেন্ডারের প্রচলন আছে, চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ।
সূর্যকে মানদণ্ড ধরে সৌরবর্ষের দিনের হিসাব হয় আর চন্দ্রবর্ষের দিনের হিসাবে মানদণ্ড ধরা হয় চাঁদকে। খ্রিস্টাব্দ, বঙ্গাব্দ হচ্ছে সৌরবর্ষ। আর হিজরি হচ্ছে চান্দ্রবর্ষ। সৌরবর্ষের চেয়ে ১১ দিন ছোট চান্দ্রবর্ষ। হিজরি ৯৬৩ থেকে বঙ্গাব্দ শুরু বছর থেকে এ পর্যন্ত পেরিয়েছে (১৪৩১-৯৬৩)=৪৬৮ বছর। প্রতিবছর ১১ দিন হিসাবে ৪৬৮ বছরে দিনের পার্থক্য (৪৬৮১১)= ৫১৪৮ দিন। মানে (৫১৩৭/৩৬৫)= ১৪.০৭৩৯ বছরের পার্থক্য। কাজেই এবার হিসাবটা মিলল?
বঙ্গাব্দের ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্র মণ্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে। আর মাসের এ নাম গুলো নেওয়া হয়েছে সূর্য সিদ্ধান্ত নামে জ্যোতি র্বিজ্ঞানবিষয়ক একটা প্রাচীন গ্রন্থ থেকে।
মাসের নাম যে নক্ষত্রের নামেঃ
বৈশাখ বিশাখা।
জ্যৈষ্ঠ জ্যেষ্ঠা।
আষাঢ় উত্তরাষাঢ়া।
শ্রাবণ শ্রবণা।
ভাদ্র পূর্বভাদ্রপদ।
আশ্বিন অশ্বিনী।
কার্তিক কৃত্তিকা।
অগ্রহায়ণ (মার্গশীর্ষ) মৃগশিরা।
পৌষ পুষ্যা।
মাঘ মঘা।
ফাল্গুন উত্তরফাল্গুনী।
চৈত্র চিত্রা।
নববর্ষ পালনের এই প্রথাও কিন্তু সম্রাট আকবর শুরু করেন।
নওরোজ বা বছরের প্রথম দিন পালন করার উৎসব শুরু করেন তিনি। তবে তাঁর সময় মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা নাম ছিল। চিন্তা করে দেখুন, ৩০ বা ৩১ দিনের একটা মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা নাম। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যদি আমাদের চলতে হতো, তাহলে এতগুলো দিনের নাম মনে রাখতে হতো, মুখস্থ করতে হতো স্কুলের পরীক্ষার জন্য। তবে আমাদের এই ঝক্কি থেকে বাঁচিয়েছেন সম্রাট আকবরের নাতি সম্রাট শাহজাহান। তিনি দিন গুলোকে সপ্তাহে ভাগ করে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের নামে দিন গুলোর নামকরণ করেন। আর পাশ্চাত্য ক্যালেন্ডারের মতো রবিবারকে সপ্তাহের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণাও করেন।
সূর্য দেবতা রবির নামানুসারে রবিবার, সোম বা শিব দেবতার নামানুসারে সোমবার, মঙ্গল গ্রহের নামানুসারে মঙ্গলবার, বুধ গ্রহের নামানুসারে বুধবার, বৃহস্পতি গ্রহের নামানুসারে বৃহস্পতিবার, শুক্র গ্রহের নামানুসারে শুক্রবার এবং শনি গ্রহের নামানুসারে শনিবার রাখা হয়েছে।
(আজ চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা সনের শেষ দিন। বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে সব্বাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:২২