কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসার ভয়ংকর খরচ সম্পর্কে বলিঃ এটা কিন্তু বেশ বড়লোকি রোগ। ধরুন আপনার করোনা হলো। আমি চাইনা হোক, মনে মনে একটু ধরে নিন আপাতত। প্রথমে ঘরে বসে আপনি মাইল্ড (হালকা) করোনার চিকিৎসা নিলেন। ফ্যাভিপিরাভির নামের ভাইরাসের ঔষধ, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি সহকারে আপনার দৈনিক প্রায় ১৫০০ টাকার মেডিসিন লাগতে পারে। তাহলে প্রথম ৫ দিনে আপনার খরচ ৭৫০০ টাকা।
একটা পালস অক্সিমিটার কিনতে হবে স্যাচুরেশন মাপার জন্য।
আরো ২০০০ টাকা। মোট প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হলো আপনার। এখন ৫ দিনে মোট ১০ হাজার খরচ করার পর আপনি দেখলেন জ্বর কমছে না। ভালো বোধ করছেন না। রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন আপ-ডাউন করছে। ডাক্তার আপনাকে পরবর্তী ধাপের কিছু টেস্ট দিলেন। করোনার জন্য যেসব টেস্ট দেওয়া হয় তার মাঝে সব চাইতে প্রয়োজনীয় টেস্টগুলো দাম সহ বলিঃ
CBC 400/=,
RBS 150/=,
D Dimer 1500/=
S ferritin 1000/=,
Procalcitonin 3000/=,
Prothrombin time 500/=,
HRCT Scan chest 6000/=.
কোন ডিসকাউন্ট ছাড়া মোট খরচ দাড়ায় প্রায় ১৩ হাজার টাকার টেস্ট।
রিপোর্ট আসার পর জানতে পারলেন ফুসফুস এর ৪০% করোনা সংক্রমন হয়ে গেছে। আপনি এখন মডারেট করোনা (একটু সিরিয়াস) রোগের রোগী। আপনার ইনজেকশন নিতে হবে, অক্সিজেন লাগবে, মনিটরিং লাগবে। এখন? এখন তাইলে এবার হাসপাতালে ভর্তী হবার পালা।
প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হই চলেন।
ধরুন, ওখানে কেবিন ভাড়া দৈনিক সর্বনিম্ন ৫০০০/=
ডাক্তারের ভিজিট দৈনিক ১০০০/=
অক্সিজেন এবং অন্যান্য সার্ভিস দৈনিক ১০০০/=
ঔষধ যেগুলা ব্যবহার করা হয় এর মাঝে রেমডেসিভির এর দাম প্রায় ৫০০০/= করে প্রতি টি। ১০০০/= টাকার মেরোপেনাম এন্টিবায়োটিক ৩ বেলা দিতে হয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এগুলো এবং অন্যান্য ইনজেকশন মিলিয়ে দৈনিক ঔষধ খরচ ধরে নিন ৯০০০/=
তাইলে প্রতিদিন হাসপাতালে খরচ আপনার ১৫-১৬ হাজার প্রায়।
তাহলে এভাবে আরো ৫ দিন দৈনিক ১৫০০০/= করে মোট ৭৫ হাজার টাকা খরচ করার পর আপনি দেখলেন সব ঔষধ সব চিকিৎসাকে যুদ্ধে হারিয়ে করোনা ভাইরাস আপনাকে আরো কাহিল করে ফেলেছে। মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন নিয়েও হচ্ছে না। আরো বেশী অক্সিজেন লাগবে। আরো ক্লোজ মনিটরিং লাগবে। তারমানে আপনি এখন সিভিয়ার করোনা (বেশি সিরিয়াস) রোগের রোগী।
তাইলে এবার চলেন ICU তে যাই।
ICU এর ব্যাপারে বেশী বলবো না, শুধু ধরেন ঔষধ, অক্সিজেন, সার্ভিস, টেস্ট, মেশিন ইত্যাদি সব মিলিয়ে দৈনিক সর্বনিম্ন ২০ হাজারের নীচে ICU তে খরচ হয় না। সুতরাং ধরুন ৫ দিন দৈনিক ২০ হাজার খরচ করে ICU তে থেকে আল্লাহর ইচ্ছায় এবং চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় আপনি বেচে ফেরত আসলেন। ICU তে খরচ হলো মিনিমাম ১ লাখ টোটাল। এরপর ICU থেকে কেবিন এ আসলেন আবার। আরো দিন পাচেক কেবিনে থেকে আরো প্রায় মিনিমাম ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরলেন।
আচ্ছা এবার গত ২০ দিনে মোট কত খরচ হলো হিসেব কষেন?
১০ হাজার + ১৩ হাজার + ৭৫ হাজার + ১ লক্ষ + ৫০ হাজার টোটাল = ২ লাখ ৪৮ হাজার। রাউন্ড ফিগার আড়াই লক্ষ টাকা। আচ্ছা দাড়ান দাড়ান। এটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন। পরিবারে কি আপনি একলাই থাকেন? বাকিরা থাকেন না? আপনার থেকে যদি তাদের করোনা হয়ে যায় তাইলে?
উপরের হিসাবটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিবারের সবার জন্য আবার করুন। কি মনে হয়? খরচের কথা ভেবে হাত পা ঠান্ডা হচ্ছে? মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তদের হবার কথা। হ্যা, আমরা সবাই ই চাই প্রথম দিকের ঐ ১০-২০ হাজার টাকার মাঝেই করোনার চিকিৎসা সেরে ফেলতে। কিন্তু সবার কপাল এত ভালো থাকে না। যার পরিনতি ICU পর্যন্ত গড়ায়, তার খরচ কম বেশী ঐ আড়াই লাখ ই হয়ে দাড়ায়।
উপসংহারঃ
করোনা, স্বাস্থ্যবিধি, লকডাউন ইত্যাদি প্রসংগ আসলেই ইকোনমি নিয়ে আমাদের ভয়ংকর চিন্তা হয়ে যায়। চিকিৎসা বাবদ ব্যক্তিগত খরচটি ও কিন্তু একটি বড়সড় ইকোনমিক লস, এটাও মাথায় রেখেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে টানতে আর বলবো না। এগুলা শুনতে শুনতে বলতে বলতে আমরা টায়ার্ড। আমার শ্বশুরের করোনা হয়েছে- তাঁর হাসপাতালের বিল এসেছে তিন লাখ ৭৫ হাকার টাকা। অবশ্য হাসপাতাল ১০ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছে।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১:১০