আজ ঢাকা শহরে একটি বৃষ্টির দিন।
সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। আজ যে বৃষ্টি হবে তা শাহেদ জামাল আগে থেকেই জানে। তার মোবাইলে প্রতিদিন আবহাওয়া'র আপডেট চলে আসে। যদিও ক্যালেন্ডারের হিসাবে এখনও বর্ষাকাল শুরু হয়নি। বর্ষা কাল শুরু হতে এখনও এক সপ্তাহ বাকি আছে। একসময় আকাশে মেঘ জমলে মন চঞ্চল হতো। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খেতে ভাল লাগতো। এখন এ বিষয় গুলো ভাল লাগে না। এগুলো বয়স বাড়ার লক্ষন। শাহেদ জামালের বয়স বাড়ছে। তার মাথায় ৬/৭ টা সাদা চুল উঁকিঝুঁকি দেয়। ছয় মাস আগে শাহেদ জামালের বাবা মারা যায়। বাবার ইচ্ছা ছিলো- ছেলে চাকরী করছে, এটা দেখে যাওয়া। শাহেদ জামাল বাবার শেষ ইচ্ছাটা পূরন করতে পারেনি। বাবার জন্য কষ্ট হয়।
আজ রমনা পার্কে যাওয়া যাবে না।
বৃষ্টির দিলে কোথাও যাওয়া যায় না। অবশ্য এমনিতেও বেকার মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। অদৃশ্য ভাবে তাদের জন্য সব দরজা বন্ধ থাকে। অবহেলা পেতে পেতে শাহেদ জামালের লজ্জা অনেকখানি কমে গেছে। এখন কেউ অপমান করলে গায়ে লাগে না। শহরের মানুষের মধ্যে মায়া-দয়া খুব কম। শহরের মানুষের দোষ দিয়ে লাভ কি! নিজের পরিবারের সদস্যদেরও মায়া-দয়া আজকাল কমে গেছে। রাতে না খেয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ করে না। গতকাল রাতে শাহেদ জামালের ভাল ঘুম হয়নি। অবশ্য দীর্ঘদিন তার ভাল ঘুম হচ্ছে না। আর সামান্য ঘুম হলেও, আরামের ঘুম হয় না বিহু দিন। ঘুমের মধ্যে সে একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে।
শাহেদ জামাল স্বপ্নে দেখে-
সে অন্ধকার পথে একা একা হাঁটছে। তার পথ আর শেষ হয় না। চারিদক গাঢ় অন্দকার। অন্ধকার থেকে ভেসে আসে ভয়ঙ্কর সব আওয়াজ। হঠাত পেঁচা ডেকে উঠে। কখনো কখনও ক্ষধার্থ শিয়াল ডাকে। বারবার মনে হয় যেন- বিষাক্ত সাপ পায়ের কাছে। প্রচণ্ড ভয় করে। শাহেদ জামাল হাঁটে। দ্রুত হাঁটে। তাকে বাঁচতে হবে। আলোকিত পথ খুঁজে বের করতে হবে। সাপ, শিয়াল আর পেঁচাকে ভয় পাওয়া যাবে না। শাহেদ জামাল বড্ড ক্লান্ত। তার সারা শরীর ঘামে ভেজা। অন্ধকারে সে হেঁটে চলেছে। আলোকিত পথে তাকে খুঁজে বের করতে হবে। সময় খুব কম। চারিদিকে ওৎ পেতে আছে বিষাক্ত জন্তু। তাকে বাঁচতে হবে। পথ খুঁজে পাওয়ার আগেই তাকে বিষাক্ত জন্তুরা ঘিরে ধরে। শাহেদ জামালের ঘুম ভাঙ্গে।
বৃষ্টির দিনে বাসা থেকে বের হওয়াটা বোকামি।
শাহেদ জামাল অনেকখানি ভিজে গেছে। এক কাপ চা খাওয়া দরকার। সাথে একটা সিগারেট। শাহেদ জামাল লালমাটিয়া আড়ং এর পেছনের গলিতে একটা চায়ের দোকানে গেলো। চাচা, এক কাপ চা দেন। দেরিং হইব। পানি ফুটে নাই। শাহেদ বলল- সমস্যা নাই। আমি বসি। আমার হাতে সময় আছে। বৃষ্টি কিছুটা থেমেছে। তবে আকাশ আবার কালো হতে শুরু করেছে। আসুক বৃষ্টি। পুরো ঢাকা শহর ভাসিয়ে নিয়ে যাক। সমস্যা হল- বৃষ্টির দিনে ভাল-মন্দ খেতে মন চায়। বৃষ্টির দিন মানেই খিচুরি। সাথে ইলিশ মাছ ভাজা। দেশি মুরগি ঝাল ঝাল করে ভুনা, গরুর মাংস ভুনা। লইটা শুটকি ভুনা। বেগুন ভাঁজা। কালো জিরার ভর্তা।
নীলা আজ অবশ্যই ফোন দিবে।
ফোন দিয়ে বলবে, বৃষ্টির দিনে কোথায় ঘুরছো। বাসায় চলে আসো। আজ আমি খিচুরি রান্না করেছি। ইলিশ মাছ আছে, সাথে ইলিশ মাছের ডিম আছে। ইলিশ মাছের ডিম তো তোমার খুব পছন্দ। দেশি মুরগীর ঝোল। গরুর মাংস ভুনা। বেশি করে রসুন দিয়ে কালো জিরা ভর্তা। বেগুন ভাঁজাও আছে। তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি গোছল করতে গেলাম। গোছল করে এসে যেন দেখি তুমি বসার ঘরে বসে আছো। আজ দুপুরে একসাথে খাবো। মিয়া সাব চা লন। শাহেদ জামালের ঘোর কাটলো চা-অলার ডাকে। শাহেদ জামাল চা-য়ে চুমুক দিলো। সিগারেটে লম্বা একটা টান দিলো। না, নীলা আর ফোন দিবে না। গত মাসে নীলার বিয়ে হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:২৬