somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৫৭

২৮ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

শফিক আমার পরিচিত।
আমাদের এলাকাতেই থাকে। শফিক তিন বছর আগে বিয়ে করেছে সুমনাকে। তাদের একটা ছেলে হয়েছে। সুমনা একটা কলেজের অস্থায়ী শিক্ষিকা। এছাড়া সুমনা কোচিং এ পড়ায়। বেশ কয়েকটা টিউশনি করে। সব মিলিয়ে সুমনার ইনকাম চল্লিশ হাজার টাকার কিছু বেশি। এখন অবশ্য করোনার কারনে ইনকাম কমে গেছে। সুমানার স্বামী শফিক কোনো কামকাজ করে না। স্ত্রীর প্রতিভায় সারাক্ষণ সে মুগ্ধ। স্ত্রী স্বামীকে নিয়মিত হাত খরচ দেয়। এমন কি শফিকের বাপ মায়ের ওষুধপত্র কেনার টাকাও দেয়। এই ভাবেই গত তিন বছর চলেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের সময় কথা ছিলো- বিয়ের ছয় মাস পর বড় অনুষ্ঠান করে সুমনাকে তুলে নিবে শফিক। সেটাও শফিকের পক্ষে আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। কোনোদিন হবেও না। সুমনার বাবা নেই। আছে শুধু এক ছোট বোন আর মা। সুমনার টাকা দিয়েই মা- বোন চলে। বাড়ি ভাড়াও সুমনা দেয়। সুমনাদের সম্পদ বলতে- কেরানীগঞ্জে তাদের পাঁচ কাঠা জমি আছে। যা তার বাবা রেখে গেছেন।

সুমনার যখন বাচ্চা হলো-
শফিক একটা টাকা দিতে পারে নাই। তবে হাসপাতালে বসে আল্লাহকে খুব ডেকেছে, যেন সুন্দর ভাবে বাচ্চা হয়। কোনো সমস্যা যেন না হয়। আল্লাহ ডেকে ডেকে সে অনেক চোখের জল ফেলেছে। শফিকের চোখের জল আল্লাহ কবুল করেছেন। বাচ্চা এবং বাচ্চার মা সুস্থ। বিয়ের পুর থেকেই সপ্তাহে দুইদিন শফিক সুমনাদের বাসায় থাকে। অবশ্য বিয়ের সময় শফিক সুমনাকে বলেছিলো সে বড় চাকরী করে। সরকারের এক ক্ষমতাবান মন্ত্রী তাদের বাড়ির। সম্পর্কে তার দাদা। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক বড় বড় কথা। সুমনার মা তার মেয়েকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে- শফিক ভন্ড। তার সব কথাবার্তা সে মিথ্যা বলেছে। এই কথা সুমনা আবার তার স্বামীকে বলেছে। এরপর থেকে শফিক তার শ্বাশুড়িকে দুইচক্ষে দেখতে পারে না। একদিন সুমনাদের বাসায় খুব ঝগড়া হয়। শফিক রেগে গিয়ে তার শ্বাশুরিকে বলে দিয়েছে বেয়াদপ মহিলা একটা। বসে বসে আমার বউয়েরটা খাও। লজ্জা করে না। হাদীসে আছে স্ত্রীর সম্পদে স্বামীর অধিকার আছে।

সুমনা বুঝে গেছে শফিক লোভী।
ভয়াবহ মিথ্যাবাদী এবং ভন্ড। শফিক এখন সুমনাকে চাপ দিচ্ছে কেরানীগঞ্জের জমি বিক্রি করতে। জমির বিক্রির টাকা দিয়ে তাঁরা আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবে। বেয়াদব মহিলা আর তার ছোট মেয়েকে সাথে রাখবে না। তাঁরা জাহান্নামে যাক। মাঝে দিয়ে শ্বাশুড়ি একবার শান্তির জন্য বলেছেন, হ্যাঁ আমি জমি বিক্রি করে দুই মেয়েকে সমান ভাগ করে দিবো। বড় মেয়ের জামাইকে ২০/২৫ লাখ টাকা দিব ব্যবসার জন্য। শফিকের বাপ মাকে হজ করাবো। কিন্তু এখন করোনার কারনে জমি বিক্রি করা যাচ্ছে না। শেষে শফিক নিজেই জমি বিক্রি করার জন্য উঠেপরে লেগেছে। এদিকে শফিক সবাইকে বলে বেড়াতো কেরানীগঞ্জে আমার জমি আছে। সেটা বিক্রি করে খুব শ্রীঘই ব্যবসায় নামবো। একদিন সুমনা তার স্বামীকে বলল, আমাদের জমি বিক্রি নিয়ে তুমি মাথা ঘামাচ্ছো কেন? শফিক বলেছে, তোমার জমিতে আমার ভাগ আছে। কোরআন হাদীসে সেই কথা লিখা আছে। আমি আমার জন্য কিছু চাই না। আমি চাই আমার ছেলের জন্য। আমার ছেলে তার নানার সম্পত্তির ভাগ আইনত পাবেই। আমি আমার ছেলের ভাগ ছাড়বো না।

কিছু দিন পরপরই শফিক তার শ্বশুর বাড়িতে চিল্লাচিল্লি করে।
সে বলে, তার স্ত্রীর সব টাকা তার শ্বাশুড়ি আর শালী খেয়ে ফেলছে। সুমনার কষ্টের ইনকাম দিয়ে শ্বাশুরি আর শালী মজা করছে। এক কথায় দুই কথায় খুবই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হলো। তখন সুমনা শফিককে বলল- তুই আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যা হারামজাদা। আর কোনো দিন তুই আমাদের বাসায় আসবি না। তুই লোভী, তোর বাপ মা পর্যন্ত লোভী। গত তিন বছরে অনেক টাকা পয়সা তোকে এবং তোর পরিবারকে দিয়েছি। আর না। স্ত্রীর টাকা খেতে খেতে তোর জিব বড় হয়ে গেছে। হারামীর বাচ্চা। বের হ বাড়ি থেকে। বিয়ে করে আজ পর্যন্ত বউকে একটা সুতা কিনে দিতে পারিস নাই। আবার বড় বড় কথা। আমার সামনে আমার মাকে অপমান করিস! ফাজিল কোথাকার। শফিকের শ্বাশুরি কান ধরে শফিককে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। শফিক যেতে যেতে বলেছে, থু দিলাম তোদের মুখে। আর কোনোদিন তোদের বাড়িতে পা দিব না। ছোটলোক একটা পরিবার। ফকিরন্নী। পথের কুকুরও তোদের চেয়ে উন্নত।

আজ দুই মাস ধরে সুমনার সাথে শফিকের কোনো যোগাযোগ নেই।
শফিকের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। একটা সিগারেট খাওয়ার টাকাও তার নেই। শফিকের ধারনা ছিলো, সুমনা তাকে ঠিক ফোন দিবে। কিন্তু দেয় নী। শেষে বাধ্য হয়ে শফিক সুমনাকে ফোন দেয় ঈদের দিন। কিন্তু সুমনা ফোন ধরে নি। শফিকের ধারনা সুমনা ফোন না ধরার কারন তার শ্বাশুড়ি। শ্বাশুড়ি বুড়ি মাগীকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে। শ্বাশুড়ি তার সংসার নষ্ট করে দিয়েছে। আজ দুই মাস ধরে শফিক তার সন্তানকে দেখতে পারে নি। শফিক তার স্ত্রীর কাছে খবর পাঠিয়েছে জমি বিক্রির টাকা নিয়ে তুমি চলে আসো। আমরা আলাদা বাসা নিয়ে থাকব। তোমার মা আর ছোট বোন আমাদের ভালো চায় না। তাঁরা আমাদের শত্রু। আমার পায়ের নীচেই তোমার বেহেশত। কোরআন হাদীসে লেখা আছে, আল্লাহ যদি কাউকে সেজদা করতে বলতো- সে হচ্ছে স্বামী। স্বামী খুশি না থাকলে স্ত্রী বেহেশতে যেতে পারবে না। এত কিছুর পরও, এটাই তোমাকে শেষ সুযোগ দিলাম।

গত মঙ্গলবার শফিক একটা চিঠি পায়।
সুমনা শফিককে তালাক দিয়েছে। তালাকের কাগজ নিয়ে শফিক কাঁদতে কাঁদতে সুমনাদের বাসায় যায়। সুমনাকে বলে, সুমনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমিই যেসব ভুল করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও। আসলে আমরা খুব গরীব। গ্রামে আমাদের নিজেদের বাড়িও নেই। গ্রামে গেলে চাচার বাসায় উঠি। বিয়ের সময় বলি নাই। কারন এগুলো তো চিৎকার করে বলার মতো কিছু না। আমি দুইবার বিদেশ গেছি। কিন্তু কিছুই করতে পারি নাই। এই শহরে আমাকে চাকরী কে দিবে? তাই ভাবলাম, তোমার ইনকাম দিয়েই আমাদের খুব সুন্দর চলে যাবে। এমন কি আমার বা মায়েরও চলে যাবে। আমি লোভী নই। পরিস্থিতি আমাকে লোভী বানিয়েছে। শফিক কাঁদতে কাঁদতে শ্বাশুরির পায়ে ধরলো। মা আমাকে মাফ করে দিন। মা। প্লীজ। আল্লাহর দোহাই লাগে মা। আমি নিয়মিত নামাজ, রোজা করি। আল্লাহরে ডাকি। তাছাড়া স্বামী ছাড়া সুমনা এই শহরে একা একা কিভাবে থাকবে ছোট একটা বাচ্চা নিয়ে? আমাকে দয়া করেন। আমাকে আর একবার সুযোগ দেন। আমি ভালো হয়ে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:০৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×