ছবিঃ আমার তোলা।
বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল।
কবে পড়িবে বেলা, ফুরাবে সব খেলা,
নিবাবে সব জ্বালা শীতল জল,
জানিস যদি কেহ আমায় বল।
কীর্তনখোলা নদী।
আমি আর সুরভি নৌকায় করে যাচ্ছি। নদী শান্ত। ঠান্ডা বাতাস। বাতাসে সুরভি'র শাড়ির আঁচল উড়ছে। মাঝি আপন মনে নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুন্দর বিকেল। আমাদের নৌকাটা যাচ্ছে নাম না জানা একটা গ্রামের পাশ দিয়ে। ছোট ছেলে-মেয়েরা নদীতে লাফা-লাফি করছে। একলোক তার মহিষকে গোছল করাচ্ছে। হঠাত মুহূর্তের মধ্যে আকাশ ভরা মেঘ দেখা দিল। চারপাশ গাঢ় অন্ধকার হয়ে গেল। মাঝির মুখে আতঙ্ক। বলল, তুফান আইতাছে। প্রচন্ড ঝড় শুরু হলো। আমরা দু'জন জানি না সাঁতার। আমি সুরভি'র হাত ধরলাম। আর কি আশ্চর্য, বিশাল এক ঢেউ এসে আমাদের নৌকাটা উলটে দিল। আমরা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছি। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
ঠিক তখন আমার ঘুম ভাঙল। দেখি, ঘুমের মধ্যে সুরভি আমার হাত ধরে রেখেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর সাড়ে চারটা। সুরভি'কে ঘরে রেখে আমি ছাদে গেলাম। অনেকদিন ভোরের আকাশ দেখি না।
আজ হঠাত মনে পড়লো-
অনেকদিন ডায়েরী লিখি না। অথচ লেখার মতো কত কি ঘটে গেছে। আজ রাত ৮ টা। তখন আমি বায়তুল মোকারমের সামনে। বাসায় ফিরছি। তখন মনে হলো- এই যে প্রতিদিন কত কি ঘটে যাচ্ছে চোখের সামনে অথচ আমি কিছুই লিখছি না। তখনই ঠিক করেছি আজ লিখব। যাই হোক, বায়তুম মোকারমের সামনে দেখলাম- এক লোক খেলনা বিক্রি করছে। আমি অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে খেলনা বিক্রি দেখলাম। নানান রকম খেলনা। দাম ৮০ টাকা। এক দাম। আমি ফারাজার জন্য দুটা খেলনা কিনলাম। বাসায় এসে মনে পড়লো- আমি ফারাজার জন্য দুই কেজি আপেল কিনেছিলাম। কিন্তু আপেল কোথাও ভুলে রেখে এসেছি। সম্ভবত খেলনার দোকানে। খেলনা বাছতে গিয়ে আপেল নীচে রেখেছিলাম। দুই কেজি আপেল কিনেছিলাম ২৮০ টাকা দিয়ে। নাসপাতি কেনার কথা ছিলো। কিন্তু আজ নাসপাতি পাই নি। না পেয়ে ভালৈ হয়েছে।
আজ সারাদিন খুব ব্যস্ততা গেছে।
দুপুরে খাওয়ার সময় পাই নি। চার টার দিকে খেয়াল করে দেখলাম খুবই ক্ষিদা লেগেছে। তখন তাড়াহুড়া করে এক হোটেলে গেলাম। খুবই জমজমাট রেস্টুরেন্ট। বিকেল বেলাও দেখলাম অনেকে কাচ্চি খাচ্ছে। কেউ রুটি সবজি খাচ্ছে। আবার কেউ চা দিয়ে তন্দুল রুটি খাচ্ছে। আমি কাচ্চি অর্ডার করলাম। যদিও ইদানিং আমার কাচ্চি, পোলাউ টোলাউ ভালো লাগে না। ভালো লাগে ঝরঝরে সাদা ভাত। যাই হোক, কাচ্চির সাথে একটা সিদ্ধ ডিম দিয়েছে। সাথে একটা টিকিয়াও আছে। তবে সাইজে ছোট। ছোট একটা পিরিজে সামান্য সালাদও দিয়েছে। লেবু দিয়েছে দুই টুকরো। কাচ্চি আমার কাছে তেমন একটা স্বাদ মনে হলো না। টাকা দিয়ে কেনা জিনিস তাই কোনো রকমে আধা প্লেট খেলাম। কাচ্চির বিল হয়েছে ১৭৫ টাকা। সাথে ভ্যাট আছে। কাচ্চি না খেয়ে একটা ভালো বার্গার খেলে বেশি আনন্দ পেতাম। সাথে কোক।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশ মেঘলা।
ভাদ্র মাস চলছে। বৃষ্টি হলেও গরম কমে না। যখন রোদ উঠে কড়া রোদ উঠে। শরীর চিরবির করে। ঢাকা শহর সেই আগের রুপে ফিরে গেছে। রাস্তায় জ্যাম। চারিদিকে মানুষের ভিড়। শহরের লোকজন সম্ভবত ভেবেছে- যেহেতু সরকার লকডাউন উঠিয়ে নিয়েছে, মানে করোনা নেই। করোনা নেই মনে করেই ঢাকা শহরের মানুষ রাজার হালে চলছে। সব জায়গায় ভিড়। চায়ের দোকান গুলোতে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। কারো মুখে মাস্ক নেই। যারা টিকা নিয়েছে তাদের ধারনা- এখন আর করোনা তাকে ধরবে না। করোনার কারনে যেসব ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে তাঁরা এখন লোকসান কাটিয়ে উঠার জন্য নানান রকম ফন্দি ফিকির করছে। যেসব অফিস গুলো করোনার জন্য অফ ছিলো তাঁরা এখন সরকারী ছুটির দিনও খোলা রাখছে।
খিলগাও রেলগেট পার হলে কিছু দূর গেলেই-
'হাড় ভাঙ্গা মোড়' নামে একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তাতে একটা বিরানীর দোকান আছে- 'মুক্তা বিরানী ঘর'। মুক্তা বিরানী আমি কখনও খাই নি। আমি খেয়েছি 'ভোলা ভাই' বিরানীর দোকানে। ঠিক করেছি আগামী শুক্রবার রাতে অথবা দুপুরে আমি আর সুরভি মুক্তা বিরানীতে খাবো। ফাইহা কে বাসায় রেখে যাবো। ঘর সংসারের কিছু জিনিসপত্র কিনতে হবে। নিউ মার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু যেতে হবে তালতলা মার্কেটে। বাসার কাছে আছে। সুরভিকে নিয়ে বাইরে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। যা দেখবে সে তাই কিনবে। যে জিনিস দরকার নাই। ভবিষ্যতে কখনও দরকার হবে না। তাও কিনবে। সেই জিনিস শেষমেষ বুয়াকে দিয়ে দিতে হয়। বুয়াও যে খুব খুশিতে নেয় তাও না। বুয়ার ভাব হচ্ছে- আমিও এই জিনিস আমার ঘরে নিয়ে ফেলে রাখব।
আজ সকাল থেকে মনটা খারাপ হয়ে আছে।
গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম- আমি একটা অন্ধকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি আর চারজন লোক এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। তারা সবাই কালো পোশাক পরা। চোখ মুখ ঢাকা। তাঁদের আমি চিনি না। চারজন আমার সামনে এসে বললেন, সময় হয়ে গেছে, তুমি কলিংবেল বাজিয়ে দিয়েছ। তাই আমরা এসে গেছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম - আপনারা কে? তারা জবাব দিল না। তাঁরা আমাকে জোর করে হাত পা বাধতে লাগলেন, কালো কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ডেকে দিল। তারপর একটা খাটে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২০