বাজার করতে আমার ভালো লাগে।
মা মাঝে মাঝে আমাকে ছোটবেলায় বাজারে পাঠাতো। এক শ' টাকা দিতো। ৮০ টাকা দিয়ে একটা দেশী মূরগী আনতাম। দশ টাকা রিকশা ভাড়া। বাকি দশ টাকা আমার। সেই সময় ফার্মের মূরগী পাওয়া যেতো না। মূরগী বলতেই দেশী মূরগী। বর্তমানে একটা ছোট দেশী মূরগী পাঁচ শ' টাকা। যা দিয়ে স্যুপ বানানো যায়। আমি সাধারনত শুক্রবার বাজারে যেতাম। আমাদের বাসার কাছেই বাজার। হেটে গেলে পনের মিনিট সময় লাগে। দেশী মূরগী মা রান্না করতো। খেতে কত মজা লাগতো!
আমি বাজার করা শিখেছি আব্বার কাছে।
আব্বা আমাকে মাঝে মাঝে বাজারে নিয়ে যেতো। আব্বা কখনও দামাদামি করে কিছু কিনতো না। একেবারে সব জিনিসপত্র কিনে জিজ্ঞেস করতো- কত টাকা? দোকানি যা বলতো আব্বা দিয়ে দিত। আব্বা সব সময় ভালো বাজার করতো। আমার মনে আছে, আব্বা দেশী জেতা কই মাছ, শিং মাছ কিনতো। মা নতুন শিম, টোমেটো আর আলু দিয়ে রান্না করতো। খেতে কত না মজা হতো। আর আজকাল তো ঢাকা শহরে দেশী কোনো মাছ'ই পাওয়া যায় না। কত দিন যে দেশী মাছ খাই না!
ড্রাইভার হাশেদুল মাঝে মাঝে মাছ এনে দেয়।
হারামজাদা চাষের মাছ এনে বলে একদম দেশী। ড্রাইভারের কথা সুরভি বিশ্বাস করে। আমার ভাবী বিশ্বাস করে। আমি করি না। মাছ খাওয়ার আগেই, শুধু মাত্র দেখেই বলে দেওয়া যায়- মাছটা চাষের কিনা। সুরভি আর ভাবীকে বুঝাই এগুলো দেশী মাছ না। তাঁরা আমার কথা বিশ্বাস করে না। তাঁরা বলে হাশেদুল অনেক দূর থেকে এই মাছ এনেছে। এগুলো বিলের মাছ। রান্না করে খেয়ে দেখেছি। খুব স্বাদ। হাশেদুলের আনা মাছ আমিও খেয়ে দেখেছি। চাষের মাছ।
আমি ঠিক করেছি, ঢাকার আশে পাশের কোনো গ্রামে যাবো।
গ্রাম থেকে মাছ নিয়ে আসবো। দেশী মাছ। অনেক দিন ধরেই যাবো যাবো করছি। কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না। সেদিন এক বন্ধু বলল, মাওয়াতে ভালো মাছ পাওয়া যায়। বন্ধুকে নিয়ে খুব ভোরে মাওয়া গেলাম। ড্রাইভার হাশেদুল'ই নিয়ে এসেছে আমাদের। এত ভোরে ব্যাটাকে নিয়ে এসেছি বলে কিঞ্চিৎ রাগ দেখাচ্ছে। ভোরবেলা মাওয়া গিয়ে দেখি সেখানে অনেক ভিড়। বেশির ভাগ লোকজনই ঢাকা থেকে এসেছে মাছ কিনতে। বিক্রেতারা দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকজন পাগলের মতো মাছ কিনছে।
চাষের মাছ গুলোকে কি খেতে দেওয়া হয়?
শুনেছি যারা মাছ চাষ করে তাঁরা কসাইদের কাছ থেকে গরুর নাড়ি ভুড়ি আর চর্বি কিনে নিয়ে যায়। চৌবাচ্চায় ঢেলে দেয়, মাছ গুলো তা কামড়ে কামড়ে খায়। অনেক চাষের মাছ ব্যবসায়ী খরচ বাঁচাতে গিয়ে মরা গরু ছাগল, কুকুর বিড়াল, ইঁদুর ছেড়ে দেয়। সেসব খাবার মাছ গুলো ঠুকরে ঠুকরে খায়। আমাদের পাশের বাসার ভাবী বললেন, পাঙ্গাশ মাছ কাটতে গিয়ে একবার উনি আস্তো ইঁদুর পেয়েছিলেন মাছের পেটে। এরপর থেকে তিনি পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েন।