ছবিঃ আমার তোলা।
শীতকাল এখনও আসে নি।
কিন্তু বাজারে শীতের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। শিম, ফুলকপি, টমেটো। শিমের দাম কিছুদিন আগেও ১২০ টাকা কেজি ছিলো। এখন ৬০/৮০ টাকায় এক কেজি পাওয়া যাচ্ছে। আর দেড়, দুই মাস পর শিম হবে ২০/২৫ টাকা কেজি। এখন টোমেটো কেজি ১২০ টাকা। এই টোমেটো ১৫/২০ টাকায়ও পাওয়া যাবে। বাজারের চেয়ে রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করা সবজির দাম কম। বুদ্ধিমান মানুষরা ভ্যানগাড়ি থেকেই সবজি কিনেন। ইদানিং সবজি কিনতে আমাকে বাইরে যেতে হয় না। বাসার কাছেই একলোক বিক্রি করে। তাকে ফোনে বললেই বাসায় এসে সবজি দিয়ে যায়। তবে দাম বেশি রাখে।
গতকাল রাতে খেতে বসেছি।
অনেক কিছুই রান্না হয়েছে। পোয়া মাছ, পাঙ্গাশ মাছ। শিং মাছ। ভাবী বললেন, পোয়া মাছ রান্না করেছে সুরভি। পাঙ্গাশ মাছ রান্না করেছে ভাবীর বাবা। শিং মাছ রান্না করেছে ভাবী। সুরভি পোয়া মাছ ভেজে রান্না করেছে। পাঙ্গাশ ভাবীর বাবাকে আমি রান্না করতে দেখেছি। ভদ্রলোক রান্না করতে পছন্দ করেন। মুহুর্তের মধ্যে পাঙ্গাশ মাছ ধুয়ে, ভেজে বেগুন আলু দিয়ে রান্না করে ফেললেন। সবাই বলল, খেতে নাকি ভালোই হয়েছে। পাঙ্গাশ আমি খাই না। রাতে ভাবীর রান্না শিং মাছ খেলাম। ফুলকপি, আলু আর টোমেটো দিয়ে রান্না করেছে। খেতে খুবই ভালো হয়েছে। এক পদ দিয়েই ভাত খেলাম। আরাম পেলাম।
ইদানিং আমার একটা বাজে অভ্যাস হয়েছে।
খেতে বসলে, টেবিলে নানান পদের খাবার না থাকলে আমার খেতে ইচ্ছা করে না। অথচ আমি সব খাবার খাই না। সব সময় এক দুই পদের বেশি খাই। অন্য খাবার ছুঁয়েও দেখি না। আমার দাদারও এই অভ্যাস ছিলো। দাদা সাত পদ ছাড়া খেতে বসতেন না। দাদা অন্ধ ছিলেন। কিন্তু হাত দিয়ে গুনে দেখতেন তাকে সাত পদ দেওয়া হয়েছে কিনা। প্রায় খাটের সাইজের দাদার একটা জলচৌকি ছিলো। সেখানে আসন পেতে দাদা খেতে বসতেন। খাওয়া শেষে একটা পান। সেই পান আবার সাজিয়ে দিতে হতো দাদীকে। দাদী ছাড়া অন্য কেউ পান মুখে দিলে দাদা সেই পান খেতেন না।
দাদার সাথে আমার কিছু সৃতি আছে।
আমার নাম রেখেছিলেন আমার দাদা। দাদা গ্রামে থাকতেন। আমরা ঢাকায় থাকতাম। বাবার সাথে আমি প্রায়ই গ্রামে যেতাম। ছোটবেলা দাদার সাথে পদ্মার পাড় দিয়ে হেটেছি। বিশাল পদ্মা। বিশাল ঢেউ। দাদা সাদা পাঞ্জাবী পড়তেন। হাতে থাকতো লাঠি। দাদা নানান নিষয় নিয়ে আমার সাথে গল্প করতেন। যেন আমি একটা বড় মানুষ। দাদার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বালাসুর চলে যেতাম। বালাসুরে বেশ কিছু মিষ্টির দোকান ছিলো। দাদা আমি দুজনেই আমরা মিষ্টি পছন্দ করতাম। দই, মিষ্টি আর রসমালাই। কি স্বাদ ছিলো। এরকম স্বাদ এযুগের দই মিষ্টিতে নেই। তবে ঢাকা শহরের চেয়ে গ্রামের দেশের দই মিষ্টির মান ভালো। খেতেও মজা।
দাদা ঢাকা এলে আমাদের বাসায় উঠতেন।
দাদা দেখতে ছিলেন একদম উত্তম কুমারের মতোণ। বুড়ো বয়সেও দাদা অনেক সুন্দর ছিলেন। স্মার্ট ছিলেন। দাদার ব্যাক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করতো। দাদা অন্ধ হয়ে যাবার পরও সারা বিশ্বের সব খবর রাখতেন। কিভাবে তিনি এত খবর সংগ্রহ করতেন কে জানে! দাদার সাথে যুক্তি তর্কে কেউ পারতো না। দাদা দাবা খুব ভালো খেলতেন। দাদা আমাকে শুধু বলতেন হৃদয়বান মানুষ হও। তাহলে এই দুনিয়া তোমার হবে। আমি হৃদয়বান হতে পারিনি। অনেক ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা আমার ভিতর। তবে আমি আমার সমস্ত ক্ষুদ্রতা তুচ্ছতা দূর করার চেষ্টায় আছি। আমার চেষ্টা সফল হবে। দেরী হোক যায় নি সময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৫৮