somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রিয় কন্যা আমার- ২২

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় কন্যা আমার,
গত কয়েকদিন ধরে তুমি অসুস্থ। ঘন ঘন জ্বর আসছে তোমার। আর ঠান্ডা তো লেগেই আছে। একমাসে তোমাকে চারবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। তোমার এখন দশ মাস বয়স। গত নয় মাস তুমি এত অসুস্থ হওনি। দশ মাসে পা দিয়েই জ্বর ঠান্ডা বাঁধিয়য়ে বেশ কষ্টে আছো। সেদিন সারারাত কান্না করে তোমার গলাও ভেঙ্গে গেছে। প্রতিদিন তোমাকে জোর করে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। গত পরশু হঠাত রাত দুইটায় তুমি ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করলে। কিছুতেই তোমার কান্না থামে না। আমি সজাগ, তোমার মা সজাগ। ভয়াবহ এক রাত পার করলাম। সকাল হতেই তোমাকে নিয়ে গেলাম ডাক্তারেরে কাছে। ডাক্তার বললেন, ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

প্রিয় কন্যা ফারাজা,
তোমাকে আমার ছেলেবেলার কথা বলি। আমার জন্ম হয়েছে বাসায়। সেই আশির দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকায় এত এত হাসপাতাল ছিলো না। তখন সাধারনত বাচ্চাকাচ্চা বাসাতেই হতো। পাড়ায় পাড়ায় অভিজ্ঞ দাই ছিলো। মা পাশের বাসায় গিয়েছে সিনামা দেখতে। সিনেমা শেষ করে বাসায় আসার কিছুক্ষন পরেই আমার জন্ম হয়। মাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। এত ডাক্তার, ওষুধ খেতে হয়নি। তুমি যখন তোমার মায়ের পেটে, তখন তোমার মাকে মাসে দুই বার করে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে। কত বাঁধা নিষেধ, কত নিয়ম কানুন ফলো করতে হয়েছে। আমাদের সময় এত নিয়ম কানুন ছিলো না। খুব সহজেই বাচ্চা হয়ে যেত। মিসক্যারেজ হতো না বললেই চলে। আজকাল গর্ববতী মায়েদের সমস্যার শেষ নেই।

ছেলেবেলায় দেখতে আমি বেশ সুন্দর ছিলাম।
অবশ্য আমাদের বংশে সবাই ফর্সা উঁচা লম্বা হয়। আমার বাপ চাচা ফুপুরা সবাই দেখতে সুন্দর। আমার নানা আমাকে নিয়ে প্রতিদিন বেড়াতে বের হতো। ছেলেবেলায় আমার তেমন কোন অসুখ বিসুখ হয়নি। মায়ের পাশাপাশি নানী আমার অনেক যত্ন নিয়েছেন। ছেলেবেলায় আমি দেখতে বেশ নাদুসনুদুস ছিলাম। রাস্তায় যে দেখতো সে-ই আমাকে আদর করতো। মা আমাকে সব সময় গোছল করিয়ে পরিপাটি করে রাখতো। আমি এখনও সব সময় সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে থাকি। এই অভ্যাস আমি পেয়েছি আমার আব্বার কাছ থেকে। আব্বা বেশ গোছানো মানুষ ছিলো। কাজলদানি থেকে মা আমার কপালে একটা কালো টিপ পরিয়ে রাখতো সব সময়। যেন কারো নজর না লাগে। তোমাকে কখনও কালো টিপ পরানো হয়নি।

প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম,
আজ তোমার মাথার চুল ফেলে দেওয়া হয়েছে। বড় ভাই, ভাবি মিলে তোমার মাথা টাক করে দিয়েছে। এই নিয়ে তোমার জন্মের পর দুবার চুল ফেলানো হলো। ডাক্তার বলেছেন চুল ফেলে দিতে। কারন তোমার খুব ঠান্ডা লেগেছে। তোমার মাথা ঘেমে যায়। ঘেমে ঘেমেই তোমার ঠান্ডা লেগেছে। যাই হোক, টাক মাথাতে তোমাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। তোমার টাক মাথায় দুটা চুমু খেলাম। চিন্তার কিছু নেই। আর দুই মাস পর তোমার প্রথম জন্মদিন। তার আগে তোমার মাথার চুল উঠে যাবে। সুরভির ইচ্ছা ছিলো না তোমার চুল ফেলানোর। কিন্তু ঠান্ডা ভালো করতে হলে চুল ফেলানো দরকার ছিলো।

প্রিয় কন্যা ফাইহা,
এখন আমার দুনিয়াতে তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। ব্যবসা বানিজ্য, টাকা পয়সা, সিনেমা, আড্ডা, বই বা ঘুরে বেড়ানো কিছুই ভালো লাগে না। তুমি আমার কাছে থাকলেই আমার শান্তি। আমার আনন্দ। সারা দুনিয়া একদিকে, তুমি অন্য দিকে। তোমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন কিছু আমার আর নেই। আমার জীবনের সমস্ত ভালো কিছুর বিনিময়ে তোমাকে পেয়েছি। আমি আর কিছুই চাই না। তোমাকে নিয়ে বাকিটা জীবন হাসিমুখে পার করে দিতে পারবো না। তুমি আমার জীবন আনন্দময় করে তুলেছো। সব বাবাই তার কন্যাকে নিয়ে হয়তো এরকমই ভাবে। নিজেকে দিয়ে আমি এখন অন্য বাবাদের বুঝতে পারি। নিজে বাপ না হলে কন্যা কি জিনিস তা বুঝতে পারতাম না। তবে বাপ হওয়ার চেয়ে বাপের দায়িত্ব পালন করা বেশি জরুরী।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×