প্রিয় কন্যা আমার,
গত কয়েকদিন ধরে তুমি অসুস্থ। ঘন ঘন জ্বর আসছে তোমার। আর ঠান্ডা তো লেগেই আছে। একমাসে তোমাকে চারবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। তোমার এখন দশ মাস বয়স। গত নয় মাস তুমি এত অসুস্থ হওনি। দশ মাসে পা দিয়েই জ্বর ঠান্ডা বাঁধিয়য়ে বেশ কষ্টে আছো। সেদিন সারারাত কান্না করে তোমার গলাও ভেঙ্গে গেছে। প্রতিদিন তোমাকে জোর করে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। গত পরশু হঠাত রাত দুইটায় তুমি ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করলে। কিছুতেই তোমার কান্না থামে না। আমি সজাগ, তোমার মা সজাগ। ভয়াবহ এক রাত পার করলাম। সকাল হতেই তোমাকে নিয়ে গেলাম ডাক্তারেরে কাছে। ডাক্তার বললেন, ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেছে। তাই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা,
তোমাকে আমার ছেলেবেলার কথা বলি। আমার জন্ম হয়েছে বাসায়। সেই আশির দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকায় এত এত হাসপাতাল ছিলো না। তখন সাধারনত বাচ্চাকাচ্চা বাসাতেই হতো। পাড়ায় পাড়ায় অভিজ্ঞ দাই ছিলো। মা পাশের বাসায় গিয়েছে সিনামা দেখতে। সিনেমা শেষ করে বাসায় আসার কিছুক্ষন পরেই আমার জন্ম হয়। মাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। এত ডাক্তার, ওষুধ খেতে হয়নি। তুমি যখন তোমার মায়ের পেটে, তখন তোমার মাকে মাসে দুই বার করে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছে। কত বাঁধা নিষেধ, কত নিয়ম কানুন ফলো করতে হয়েছে। আমাদের সময় এত নিয়ম কানুন ছিলো না। খুব সহজেই বাচ্চা হয়ে যেত। মিসক্যারেজ হতো না বললেই চলে। আজকাল গর্ববতী মায়েদের সমস্যার শেষ নেই।
ছেলেবেলায় দেখতে আমি বেশ সুন্দর ছিলাম।
অবশ্য আমাদের বংশে সবাই ফর্সা উঁচা লম্বা হয়। আমার বাপ চাচা ফুপুরা সবাই দেখতে সুন্দর। আমার নানা আমাকে নিয়ে প্রতিদিন বেড়াতে বের হতো। ছেলেবেলায় আমার তেমন কোন অসুখ বিসুখ হয়নি। মায়ের পাশাপাশি নানী আমার অনেক যত্ন নিয়েছেন। ছেলেবেলায় আমি দেখতে বেশ নাদুসনুদুস ছিলাম। রাস্তায় যে দেখতো সে-ই আমাকে আদর করতো। মা আমাকে সব সময় গোছল করিয়ে পরিপাটি করে রাখতো। আমি এখনও সব সময় সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে থাকি। এই অভ্যাস আমি পেয়েছি আমার আব্বার কাছ থেকে। আব্বা বেশ গোছানো মানুষ ছিলো। কাজলদানি থেকে মা আমার কপালে একটা কালো টিপ পরিয়ে রাখতো সব সময়। যেন কারো নজর না লাগে। তোমাকে কখনও কালো টিপ পরানো হয়নি।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম,
আজ তোমার মাথার চুল ফেলে দেওয়া হয়েছে। বড় ভাই, ভাবি মিলে তোমার মাথা টাক করে দিয়েছে। এই নিয়ে তোমার জন্মের পর দুবার চুল ফেলানো হলো। ডাক্তার বলেছেন চুল ফেলে দিতে। কারন তোমার খুব ঠান্ডা লেগেছে। তোমার মাথা ঘেমে যায়। ঘেমে ঘেমেই তোমার ঠান্ডা লেগেছে। যাই হোক, টাক মাথাতে তোমাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। তোমার টাক মাথায় দুটা চুমু খেলাম। চিন্তার কিছু নেই। আর দুই মাস পর তোমার প্রথম জন্মদিন। তার আগে তোমার মাথার চুল উঠে যাবে। সুরভির ইচ্ছা ছিলো না তোমার চুল ফেলানোর। কিন্তু ঠান্ডা ভালো করতে হলে চুল ফেলানো দরকার ছিলো।
প্রিয় কন্যা ফাইহা,
এখন আমার দুনিয়াতে তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। ব্যবসা বানিজ্য, টাকা পয়সা, সিনেমা, আড্ডা, বই বা ঘুরে বেড়ানো কিছুই ভালো লাগে না। তুমি আমার কাছে থাকলেই আমার শান্তি। আমার আনন্দ। সারা দুনিয়া একদিকে, তুমি অন্য দিকে। তোমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন কিছু আমার আর নেই। আমার জীবনের সমস্ত ভালো কিছুর বিনিময়ে তোমাকে পেয়েছি। আমি আর কিছুই চাই না। তোমাকে নিয়ে বাকিটা জীবন হাসিমুখে পার করে দিতে পারবো না। তুমি আমার জীবন আনন্দময় করে তুলেছো। সব বাবাই তার কন্যাকে নিয়ে হয়তো এরকমই ভাবে। নিজেকে দিয়ে আমি এখন অন্য বাবাদের বুঝতে পারি। নিজে বাপ না হলে কন্যা কি জিনিস তা বুঝতে পারতাম না। তবে বাপ হওয়ার চেয়ে বাপের দায়িত্ব পালন করা বেশি জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৬