somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আপ্যায়ন

১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেশের ভাগেরও আগের কথা।
গল্পটা আমাদের বিক্রমপুরের। গল্পটা শুনেছি আমার দাদার কাছ থেকে। দাদা তখন ছোট। স্কুলে পড়েন মাত্র। সেই সময় ইন্টারনেট ছিলো না। মোবাইল ফোন ছিলো না। টেলিভিশন ছিলো না। বিদ্যুৎ ছিলো না। ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামে যেতে সময় লাগতো দশ ঘন্টা। এখন সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা। বাবু বাজার ব্রীজ থেকে এক ঘন্টারও কম সময় লাগে। দেখার মতো রাস্তা হয়েছে। বর্তমানে বহুলোক বিক্রমপুর থেকে ঢাকা এসে অফিস করেন। তাছাড়া গ্রাম তো এখন আর গ্রাম নাই। শহরের কাছাকাছি। যাই হোক, গল্পে ফিরে যাই। নানান রকম গল্প গুলোই আমার দাদার সম্পদ ছিলো।

গ্রামে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।
আশেপাশে সাত গ্রামের মানুষদের দাওয়াত দেওয়া হলো। রীতিমতন ঢাকঢোল পিটিয়ে সাত গ্রামের মানুষকে জানানো হয়েছে, দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। বিয়ের ক'নের নাম মরিয়ম। জমিদার শ্রী ঠাকুর আমজাদ খা'র একমাত্র কন্যা। আর ছেলে কলকাতার। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে বড় সরকারী চাকরী করে। অনেক টাকা সেলারি পায়। সেই টাকা পোষ্ট অফিস একসাথে দিতে পারতো না। তিনবারে নিতে হতো। ছেলের বাপেরও জমিদারি আছে। কথিত আছে ইংরেজরাও ছেলের দাদাকে কুর্নিশ করতো। হাতীর পিঠে চড়ে জামাই এসেছিলো। ঘোড়ার গাড়িও ছিলো। যাই হোক, এই বিয়েতে আমার দাদাজান উপস্থিত ছিলেন। দাদাজান তার বাবা মায়ের সাথে বিয়েতে গিয়েছেন। এরকম বিয়ের অনুষ্ঠান দাদা তার বাকি জীবনে দেখেন নি। আমিও দেখিনি। আজকের পোষ্ট এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়েই।

সমস্ত খাবার মাটির হাড়িতে রান্না হয়েছে।
রান্নার কাছে নিয়োজিত ছিলেন ১৩০ জন লোক। এদের মধ্যে বাবুর্চি ত্রিশ জন। বাকিরা বাবুর্চির সহকারী। বাবুর্চিরা এসেছেন পূর্ব পাকিস্তান, কলকাতা, ঢাকা এবং মায়ানমার থেকে। তিন শ' হাড়ি গরুর ও মূরগীর মাংস রান্না হয়েছে। মাছ ভাঁজা। দেড় শ' হাড়ি ছাগলের মাংস। সাদা ভাত এবং পোলাউ। আটা রুটি। রুটির বিশাল সাইজ। দই মিষ্টি, পাপর ভাঁজা। খেজুর গুড়ের পায়েশ। বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো শুক্রবার। লোকজন জুম্মার নামাজের পর আসতে শুরু করেছে দলে দলে। নারী ও পুরুষের আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে যত পারো খাও। কোনো বাঁধা নিষেধ নেই। অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বর্তমান কাজির পাগলা স্কুল মাঠে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। মাদ্রাসার একশ' ছাত্র খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলো। বহু বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছি এরকম কখনও দেখিনি।

খাওয়া দাওয়া চললো মধ্যরাত পর্যন্ত।
শীতের সময়। পদ্মার পাড়ের ভয়ানক শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলো। সাত গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হলেও এসেছিলো দশ গ্রামের মানুষ। জমিদার শ্রী ঠাকুর আমজাদ খা আমার দাদার বাবাকে বলেছিলেন, দুনিয়াতে মানুষকে খাওয়ানোর মতো সুখ আর কিছুতে নেই। মানুষ আরাম করে খাচ্ছে, তৃপ্তি করে খাচ্ছে- এটা বড় শান্তির। বড় আনন্দের। গ্রামের কৃষক, কামার, কুমার তাতী, জেলে, নাপিত, দিনমজুর থেকে স্বচ্ছল পরিবারের সকলে এসেছিলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সেদিন হিন্দু মুসলিম মিলে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। ধুতি, পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি পরে এসেছিলো সকলে। বউ, ঝিরা এসেছিলো ডুরে শাড়ি পরে। সবচেয়ে মজার বিষয় অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলো তাঁরা সবাই একটি করে শাড়ি ও ধুতি পাঞ্জাবী পেয়েছিলো।

দাদাজান বড় আফসোস নিয়ে মারা গিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, আমিও একজন জমিদার ছিলাম। অথচ আমি আমার কোনো ছেলেমেয়ের বিয়ে এইভাবে দিতে পারিনি। আমার সম্পদ তো কম ছিলো না! বড় ছেলের বিয়ে দিবো তার আগেই হঠাত অন্ধ হয়ে গেলাম। দেশ বিদেশ চিকিৎসা করিয়েও চোখ আর ফিরে পেলাম না। আমার জীবন বদলে গেলো। আমার সারাক্ষনের সঙ্গী হলো তিন ব্যাটারির একটা রেডিও। আমার সব ছেলেমেয়ের বিয়ে হলো। আমি এক কোনায় চুপ করে বসে ছিলাম। আমি এতটাই হতভাগ্য যে আমি কোনো নাতী নাতনীর মূখ দেখতে পারি নি। তাঁরা আমার সামনে বসেছে, খেলেছে। আমার কোলে উঠেছে অথচ তাঁরা দেখতে কেমন হয়েছে আমি জানি না। শুধু তাদের মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি। এক বুক হাহাকার নিয়ে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×