ছবিঃ আমার তোলা।
বড় অদ্ভুত এই ঢাকা শহর।
ঢাকা শহরে চলার পথে প্রায়ই দেখা যায়, অল্প বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে পলিথিনে জুতোর আঠা ভরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এদের কাঁধে একটা ব্যাগ থাকে। তাঁরা রাস্তায় রাস্তায় কাগজ টোকায়। দিনে দুপুরে সকলের সামনে জুতোর আঠার ঘ্রান নিতেই থাকে। তাদের সবাই দেখে, কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলে না। সবাই এক নজর তাকিয়ে যে যার মতো চলে যায়। জুতোর এই আঠার নেশার নাম হয়তো ড্যান্ডি। এটা নিশ্চয়ই ক্ষতিকর। এই অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে গুলো কেন ড্যান্ডি নিচ্ছে? তাদের তো এখন স্কুলে লেখাপড়ার কথা। তাদের কেন সরকার থেকে ড্যান্ডি খেতে বারন করা হচ্ছে না। এই ছেলেমেয়ের প্রতি কি সরকারের কোনো দায়দায়িত্ব নেই? কোনো সংগঠন, ফাউন্ডেশন বা এনজিও কি পারে না তাদের দায়িত্ব নিতে? এই ড্যান্ডিখোর গুলোকে এখন ভালো পথে আনা না গেলে একদিন তাঁরা এই শহরেই নেশার জন্য চুরী, ছিনতাই আর ডাকাতি করবে।
ঢাকা শহরের ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না।
প্রতিটা ফুটপাতে নানান রকম দোকান। যারা ফুটপাতে দোকানদারি করছে, তাঁরা নিয়মিত পুলিশকে টাকা দিচ্ছে। পুলিশ যদি তাদের কাছ থেকে টাকা না নিতো তাহলে হয়তো তাঁরা দাবী নিয়ে ফুটপাতে বসতে পারতো না। পুলিশকে কি সরকার বেতন দেয় না। কেন ফুটপাত থেকে চাঁদা নিতে হবে পুলিশের? চাঁদা নেওয়ার জন্যই তাঁরা পুলিশের চাকরিতে এসেছে। ব্যস্ত এলাকা গুলোতে শান্তি মতো হাঁটা যায় না। গত দুই বছরে পুরো ঢাকা শহরে ফুটপাতে হকারের সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে গেছে। অনেক এলাকায় ফুটপাতে জায়গা নেই বলে রাস্তায় নেমে এসেছে হকাররা। এসবে কারনে রাস্তায় থাকে সারাদিন জ্যাম। দুই মেয়র কি করছে? শেখ হাসিনা তাদের কঠিন ধমক দিচ্ছেন না কেন? দিন দিন কেন এই শহরে পতিতাদের সংখ্যা বাড়ছে? আগে যে রাস্তায় তিনজন পতিতা দাঁড়িয়ে থাকতো, এখন সেখানে ২৫ জন পতিতা দাঁড়িয়ে থাকে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তাই এই অবস্থা?
বাংলাদেশ হলো চোরের দেশ।
মসজিদের ভিতরেও চুরী হয়। আবার বড় বড় সরকারী অফিসেও চুরী হয়। আমাদের দেশে যে যত বড় চোর তার তত বড় সম্মান। বাংলাদেশ হলোও দুষ্টলোকদের দেশ। একজন বন্ধুও আড়ালে বন্ধুর শত্রু। একই অফিসে সহকর্মী, সহকর্মীর শত্রু। এই দেশে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। শুধু বিশ্বাসের ভান করে মাত্র। আমাদের এলাকার কথা বলি। আমাদের বাসার সামনে গলিতে চারটা ম্যানহোল। কে বা কারা চারটা ম্যানহোলের ঢাকনা চুরী করে নিয়ে গেছে। হয়তো ভোরে যারা কাগজ টোকাতে আসে, তাঁরা চুরী করে নিয়ে গেছে। দিনের বেলা না হয় ঢাকনা বিহীন ম্যানহোল মানুষের চোখে পড়বে, রাতের বেলা কি হবে? রাস্তার লাইট গুলোও তো ঠিক করে জ্বলে না। পরপর তিনবার আমাদের এলাকার ম্যানহোলের ঢাকনা চুরী হয়েছে। এবার একদম মেশিন এনে ঢাকনা ঢালাই করে লাগানো হয়েছে। ঢাকা শহরে ভালো কোনো মানুষ নেই। যাদের ভালো মনে করছেন, সেটা তাদের মুখোশ। মুখোশের আড়ালে সব শালা হারামী।
ঢাকা শহরে খাবারের দোকানের অভাব নেই।
অলিগলিতে পর্যন্ত ফাস্টফুডের দোকানের অভাব নেই। এই খাবারের দোকান গুলো তিন চার গুণ বেশি দাম নিচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নেই। বলার কেউ নেই। লোকজন কিচ্ছু বলে না। সবাই যেন মেনে নিয়েছে। লোকজন ভাবে সরকার যেহেতু কিচ্ছু বলছে, তার মানে দাম ঠিকই আছে। দাম বেশি নিলে সরকার তাদের ধরতো। ব্যবস্থা নিতো। যে বার্গারের দাম ত্রিশ টাকা হওয়া উচিত সেই বার্গারের দাম নিচ্ছে ১৫০ টাকা। যে স্যান্ডউইচ এর দাম হওয়ার কথা বিশ টাকা সেই স্যান্ডউইচ এর দাম নিচ্ছে ১২০ টাকা। যে জন্মদিনের কেকের দাম হওয়া দরকার ৫ শ' টাকা। সেই কেকের দাম নিচ্ছে দুই হাজার টাকা। এই শহরে যে সুযোগ পাচ্ছে সে-ই ব্যবসা নাম দিয়ে গলা কাটছে। গলা কাটা বন্ধ করার জন্য কেউ নাই। অভিবাবকহীন শহর। পিতা মাতা না থাকলে সন্তানের যে অবস্থা হয়, এই শহরের এখন সেই অবস্থা। এখন আমরা কাকে দোষ দিবো? দুই মেয়রকে? শেখ হাসিনা কে? না জনগনক কে?
এই শহরের মানুষ আত্মকেন্দ্রিক।
নিজে ভালো থাকতে পারলেই হলো। পাশের ফ্লাটে কেউ না খেয়ে থাকলেও ফিরে তাকায় না। আমাদের পাশের বাসার এক ঘটনা বলি। ভদ্রলোক বড় চাকরী করেন। ম্যালা টাকা সেলারি পান। উনি একটা গেমস কিনেছেন ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে। থ্রিডি টাইপ গেম। তার বোন অসুস্থ। ক্যান্সার হয়েছে। কেমো দিতে হবে। কেমো দিতে অনেক খরচ। বোনের স্বামী মারা গেছে। দুই বাচ্চা ছোট ছোট। ভাই তার বোনকে সাহায্য করছে না। আপন বোন। বলছে, টাকা নাই। থাকলে অবশ্যই দিতাম। আমার মায়ের পেটের বোন। আরেকটা ঘটনা বলি, আমাদের এলাকায় এক বাড়িওলা আছেন। সরকারী চাকরী করেন। ছুটির দিনে সরকারী গাড়িতে করে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। বিয়ের দাওয়াতে যান। এই বাড়িওলা সুরকারী চাকরীজীবি দরিদ্র মানুষ পছন্দ করেন না। তার ধারনা দুনিয়ার সমস্ত দরিদ্র মানুষ চোর। তার বাড়িতে কোনো ভিক্ষুক গেলে, সেই ভিক্ষুককে অকথ্য ভাষায় গালি দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২৫