যারা বলেন ভূত, প্রেত নাই সব মিথ্যা কথা।
তাদেরও ভূত নিয়ে কোনো না কোনো অভিজ্ঞতা আছে। দুনিয়াটা তো শুধু মানুষের না। দুনিয়াতে বহু রকমের জীব জন্তু আছে। অনেক জীব জন্তু আমার খালি চোখে দেখতে পাই না। খালি চোখে সচারচর যা দেখা যায় না- সেটাই ভূত, অশরীরি। জ্বীন, পরী, ফেরেশতারা আসলে ভূত। যা দেখা যায় না কিন্তু আছে সেগুলোই ভূত। এদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। বহুলোক এদের অস্তিত্ব অনুভব করেছে। আমি নিজেও এদের অস্তিত্ব টের পেয়েছি বেশ কয়েকবার। তবে এ কথা সত্যি সব জ্বীন ভূত মানুষের ক্ষতি করে না। আসলে এদের কোনো অনিষ্ঠ করার ক্ষমতা নেই। তবুও মানুষ এদের ভয়ে অস্থির। মানুষ চাঁদে যাবে এটা বিশ্বাস করবেন আবার জ্বীন, ভূত, মারমেইড আছে সেগুলোও বিশ্বাস করবেন তা হয় না। একপাশে সরে আসুন।
আমার এক শিক্ষিত বন্ধুর গল্প বলি-
বন্ধুর মামাকে যাদুটোনা করা হয়েছে। মামা অতি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছেন। গাল ভেঙ্গে গেছে। চোখ ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। সারারাত ঘুমান না। রাত তিনটায় ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চান। অকারনেই চিৎকার চেচামেচি করেন। কখনও কখনও এক বসায় দুই কেজি আঙ্গুর একাই খেয়ে ফেলেন। মামাকে বড় ফকির দেখানো হলো। ফকির বললেন, মামাকে কুফুরী করা হয়েছে। বাঁচার চান্স খুব কম। বাসার সবাই ঘাবড়ে গেলো। বলল, ফকির বাবা যত টাকা লাগে লাগুক। মামাকে বাচাতেই হবে। ফকির বললেন, আমি চেষ্টা করছি। ফকির বাবা নানান রকম দোয়া দুরুদ পড়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাবিজ খুঁজে বের করলেন। এমন কি ঘরের দেয়ালের প্লাস্টার ভেঙ্গেও তিনটা তাবিজ বের করলেন। মামা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন। মামার আত্মীয় স্বজন বললেন, সব পীর ফকির ভন্ড নয়। এখন সমাজে কিছু কামিলদার পীর ফকির আছে।
মামা ছিলেন বিরাট ব্যবসায়ী।
অনেক টাকার মালিক। একবার মামা গ্রামে যান। গ্রাম থেকে ফিরে দেখেন তার আলমারি থেকে ৫ লাখ টাকা গায়েব। মামা সেই ফকির বাবাকে ডাক দিলেন। ফকির বাবা বললেন, কোন সমস্যা নাই। এমন বান দিমু, যে টাকা নিয়েছে সে রক্ত বমি করতে-করতে মারা যাবে। ফকির বাবা ধ্যানে বসে পুরো বাড়িতে বান দিলেন। এবং স্পষ্ট করে বললেন, কঠিন বান দিয়েছি। যে টাকা নিয়েছে সে যদি সাত দিনের মধ্যে যদি টাকা ফেরত না দেয় তাহলে সে নিশ্চিত বুক ফেটে রক্ত বমি করতে করতে মরবে। দেখা গেলো পাঁচ দিনের মধ্যে পরিবারের এক সদস্যের বুকে ব্যথা করতে শুরু করলো। সে কিছু খেতে পারে না। পানি খেলেও বমি হয়ে যাচ্ছে। তারপর সে মামার পা ধরে বলল, আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে বাঁচান। বান বন্ধ করেন। আমি মরতে চাই না। এই নিন আপনার টাকা। তারপর মামা ফকির বাবাকে ফোন করে বললেন, হুজুর টাকা পাওয়া গেছে বান বন্ধ করেন। এবং কথা মতো পাঁচ লাখ টাকা ফেতর পেয়ে ফকির বাবাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।
আমার ছোটবেলার একটা কথা।
আমি আব্বাকে বললাম, আব্বা বাটি চালান কিভাবে দেয়? আমার দেখার খুব শখ। আব্বা বললেন, কোনো সমস্যা নাই। আমি ব্যবস্থা করছি। তিনজন লোক এলেন তাঁরা আমাদের ঘরে বাটি চালান দিবেন। আব্বা তাদের বলেছেন, কেউ আমাকে তাবিজ করেছে। আমার কোনো আয় উন্নতি হচ্ছে না। তিনজন একসাথে বললেন, সে কথা আপনাকে বলতে হবে না। আপনার ঘরে পা দিয়েই আমরা সব বুঝে গেছি। তাঁরা বাটিতে দোয়া পরে ফু দিলেন। বাটি নানান দিকে যাচ্ছে। আসলে বাটি তো আর একাএকা চলে যেতে পারে না। তাঁরা হাত দিয়ে জোরে বাটি ঠেলে দিচ্ছে। যাই হোক, বালিশের বেতর থেকে তাবিজ বের হলো। রান্না ঘরে চালের ড্রাম থেকে এবং ঘরের সানসেটের উপর থেকে তাবিজ বের হলো। আব্বা তাদের বললেন, আপনারা বিদায় হোন। কিভাবে বাটি দৌড়াচ্ছে, তাবিজ কিভাবে বের হলো আমি জানি। জাস্ট আমার ছেলেকে দেখানোর জন্য আপনাদের ডেকেছি। সেদিন আব্বা আমাকে বলেছিলেন, এইসব ঝারফুক, তাবিজ কবচ, ভাটিচালান ইত্যাদি কোনোদিন বিশ্বাস করবে না।
আমি ছোটবেলায় দেখেছি-
বাচ্চা বিছানায় মুতে। হুজুরের কাছে গিয়ে পানিপড়া নিয়ে আসে। কারন বিছানায় মুতা বন্ধ করা ডাক্তারের কাজ নয়। পানি পড়া খেয়েও বিছানায় মুতা বন্ধ না হলে- অন্য চিকিৎসা আছে। একটা কাইতনে তাবিজ প্যাচিয়ে কোমরে পড়ে থাকতে হবে। তবেই বিছানায় মুতা বন্ধ হবে। এখন হয়তো কেউ পানি পড়ায় বিশ্বাস করে না। হুজুরদের পানি পড়া ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ যত সচেতন হচ্ছে পীর, ফকির, দরবেশ বাবাদের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে। তবে মাজার ব্যবসা আজো বন্ধ হয়নি। সরকারের উচিত মাজার ব্যবসা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া। সারা বাংলাদেশে যেদিন সমস্ত মাজার বন্ধ ঘোষনা করা হবে সেদিন দেশ আলোকিত হয়ে যাবে। লন্ডন, আমেরিকা, কানাডাতে কি মাজার আছে? সেখানে কি মানুষ যায়? টাকা ফেলে? মাজার জিয়ারত করে? মানত করা মূরগী ছাগল ছেড়ে দেয়? ফকিরদের কাছ থেকে বালামছিবত দূর করার জন্য তাবিজ কবচ নেয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০০