মানুষ তার ঘরসংসারের জন্য অনেক কিছু করে।
আমাদের এলাকায় একলোক গলির মাথায় দুধ আর সিদ্ধ বিক্রি করে। প্রতিদিন সে বিকেলের দিকে আসে। সাথে থাকে বিশ কেজি তরল দুধ ও একশ' সিদ্ধ ডিম। রাত নয়টার মধ্যে সব দুধ ও ডিম বিক্রি করে হয়ে যায়। একটা সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে বিশ টাকায়। গরম গরম এক গ্লাস দুধ বিক্রি করে বিশ টাকায়। দুধের সাথে কেউ চিনি চাইলে চিনি দেওয়া হয়। আমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে লোকটার বেচাবিক্রি দেখি। সন্ধ্যার পর লোকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুধ ও ডিম খায়। গরম ধোঁয়া ওঠা ডিম।
আমার ধারনা লোকটা যদি বিশ কেজির জায়গায় চল্লিশ কেজি দুধ আনে- অন্যায়াসেই বিক্রি হবে। এবং এক শ'র জায়গায় দুইশ' ডিম আনলেও বিক্রি হবে। আমি দুধ বিক্রেতার সাথে কথা বলেছি, সে বলেছে প্রতিদিন তার ৪৫০ টাকা লাভ থাকে। প্রতিদিন পুলিশকে ৫০ টাকা করে দিতে হয়। দুধ ডিম বিক্রি করে সুন্দর সংসার চলছে তার। ফুটপাতে এটাসেটা বিক্রি করে লাখ লাখ লোক বউ বাচ্চা নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে আছে।
তিলপা পাড়ার দিকে আমি একটা দোকানে চা খাই।
সেখানে একটা মসজিদ আছে। মসজিদের কাছে এক বয়স্ক মহিলা চিতই পিঠা বিক্রি করে। সারা বছর সে শুধু চিতই পিঠা বানায়। দুইটা মাটির চুলায় বিকেল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত পিঠা বানাতে থাকে। চিতই পিঠার সাথে ভর্তা ফ্রি। দুই পদের ভর্তা আছে। এই মহিলার সংসারে পাঁচ জন সদস্য। পিঠা বিক্রি করে তার সংসার চলে এবং ঘর ভাড়াও দিতে হয়। একটা চিতই পাঁচ টাকা করে। আমি ভেবে পাই না পিঠা বিক্রি করে কিভাবে পাঁচ জন সদস্যের সংসার চলে। ঘর ভাড়াও দিতে হয়। আমি মাঝে মাঝে তার কাছে যাই, পিঠা খাই। আর ভাবি মানুষ কত কষ্ট করে জীবনযাপন করে। এরা সৎ মানুষ। পরিশ্রমী মানুষ। খাটি মানুষ। এরা কারো কাছে নালিশ দেয় না। তাদের কোনো অভিযোগ নেই। শেখ হাসিনা কি এই শ্রেনীর মানুষদের চিনেন? জানেন? বুঝেন? তাদের নিয়ে শেখ হাসিনার কোনো পরিকল্পনা আছে? পরিকল্পনা থাকা উচিত, কারন এদের সংখ্যা অনেক।
আমাদের ঘরে যে বুয়া কাজ করে তার নাম কোহিনূর।
কোহিনূরের একছেলে, একমেয়ে। তুফানের মতো কাজ করে কোহিনূর। দুই বালতি কাপড় দেখলেও ভয় পায় না। বিরক্ত হয় না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সে চারটা বাসায় কাজ করে। মাসে বিশ হাজার টাকা ইনকাম করে। তার স্বামী রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে। সন্ধ্যার পর কোহিনূর সবজি বিক্রি করে। তখন তার স্বামী বাসায় বিশ্রাম নেয়। কোহিনূর হাসিখুশি মানুষ। সে কখনও অসুস্থ হয় না। তাদের দুইজনের ইনকামে সুন্দর সংসার চলছে। সংসারে কোনো অভাব নেই। তাদের ঘরে টিভি, ফ্রিজ সব আছে। স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। পনের হাজার টাকা ঘর ভাড়া দেয়। পিঠা বিক্রি করা মহিলার চেয়ে কোহিনূর ভালো আছে। সুখে আছে। যে মহিলা পিঠা বিক্রি করে সে বাসা বাড়ির কাজ পারবে না। রুগ্ন মহিলা।
বিল্লালের চায়ের দোকানে আমি মাঝে মাঝে যাই।
বিল্লালের সাথে আমার বেশ ভালো খাতির। খিলগায়ের দিকে তার দোকান। চা- রুটি কলা, বিস্কুট এইসব বিক্রি করে। এই চায়ের দোকানের আয় দিয়ে বিল্লাল তার তিন বোনের বিয়ে দিয়েছে। একটা চায়ের দোকানে কত টাকা লাভ হয়? চলতি মাসের বিশ তারিখ বিল্লাল বিয়ে করেছে। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর। বিয়েতে আমাকে যেতে বলেছিলো। আমি যাই নি। তবে তার সাথে মোবাইলে কথাবার্তা হয়েছে। বিল্লাল নামাজি মানুষ। কপালে দাগ বসে গেছে। সে চেয়েছে নামাজি বউ। এবং কোরআন পড়তে পারা বউ। সে তার মনের মতো বউ পেয়েছে। বিল্লাল খুশি। বাসর রাতে বিল্লাল তার বউকে বলেছে, নামাজ পড়া যেন মিস না হয়। আর প্রতিদিন দুইবেলা কোরআন পড়তেই হবে। বিল্লাল কোনো যৌতুক নেয় নি।
আমাদের পাশের বাসায় এক ঘর জামাই থাকে।
হারামজাদা বিরাট বদ। আমাকে ঘুমাতে দেয় না। ভোরবেলা ছাদে খুট খুট শব্দ করতেই থাকে। ঘর জামাই ছাদে বাগান করেছে। সারাদিন রাত ছাদে পড়ে থাকে। গাছের যত্ন নেয় আর খুট খুট শব্দ করে। এত তারকাটা কোথায় লাগায় ভেবে পাই না। হারামজাদা ফযরের নামাজ পড়ে ছাদের পড়ে। তারপর লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাচা তৈরি করে। খুট খুট শব্দে আমি ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন ঘর জামাই এই কাজ করে। একদিন রেগেমেগে ছাদে কি বললাম, ভাইসাহেব এত ভোরে খুট কেন করেন প্রতিদিন? ঘুমাতে দেন না কেন? ঘর জামাই রেগে গেলো। বলল, আমি আমার বাসায় খুট খুট শব্দ করি। তাতে আপনার কি? আমি বললাম, এই বাসাতো আপনার না। আপনি ঘরজামাই। দয়া করে আপনাকে থাকতে দিয়েছে। কাজেই দয়া করে ভোর বেলা খুট খুট শব্দ করবেন না। আমাকে ঘুমাতে দেন। অন্যথায় ছাদ থেকে আপনাকে ফেলে দিবো। আমার কথা শুনে ঘর জামাই রেগে আগুন। সে বিচার বসাবে। আমাকে দেখিয়ে দিবে তার কত ক্ষমতা।
বিজয়ের মাসে সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:০৫