শাহেদ জামালের মন মেজাজ আজ বড্ড খারাপ।
এতটাই খারাপ যে সে আজ গালি দিবে। কুৎসিত গালি দিবে। এমন গালি দিবে যে ভদ্র সমাজের লোকদের কান ও নাক দিয়ে অটোমেটিক রক্ত বের হয়ে যাবে। কথায় আছে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। কাজেই শাহেদ জামাল ভদ্র হলেও গালি দিতে জানে। উদাহরন দেই একটা- শাহেদ কাউকে কোনো দিন লাথথি দেয় নি। তার মানে এই না যে সে লাথথি দিতে জানে না। কাজেই আজ শাহেদ গালি দিবে। ইচ্ছে মতো গালি দিবে। ভয়ঙ্কর সব গালি দিবে। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, গালি হচ্ছে দুষ্ট লোকদের হাতিয়ার। দুষ্ট লোককে শায়েস্তা করতে গেলে দুষ্ট হতে হয়। আপনারা হয়তো ভাবছেন, শাহেদ আবার কার উপর খেপলো!
শাহেদ জামাল খেপেছে- এক ল্যাদানো গল্পকারের উপর।
ল্যাদানো গল্পকার নিজেকে হিরো মনে করে। শুধু হিরো না, সাথে নিজেকে হুমায়ূন আহমেদও মনে করে। ইদানিং তার মধ্যে এক ধরনের অহংকার দেখা যাচ্ছে। তার ধারনা সব মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে। আসল সমস্যা হলো- যে কোনো ছেলে গ্রাম থেকে শহরে এলে প্রথম প্রথম এরকমটাই ভাবে। যদিও তাদের এই ভাবনা এক থেকে দেড় বছরের বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মেয়েদের পটানোর জন্য এই ল্যাদানো গল্পকার তার লেখাতে ক্লাশমেটদের নাম ব্যবহার করে। এরকম ভাব যেন মেয়েদের নাম ব্যবহার করে তাকে বিখ্যাত বানিয়ে দিলো। সেই মেয়েকে গল্প পড়তে দেওয়া হলে, মেয়েটা তেমন আগ্রহ দেখায় না।
শাহেদ জামালের সাথে ল্যাদানো গল্পকারের দেখা হয়েছে।
শাহেদ কোনো রকম ভনিতা বাদ দিয়ে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে- ঐ ল্যাদানো। শালা। কি শুরু করেছিস এই সব? ছাগল কোথাকার? কানটা টেনে ছিড়ে দিবো। ফাজিল। তুই কি বাল লিখিস? নিজে জানিস? এযুগের মেয়েরা বোকা না। তোর বালছাল লেখা দিয়ে মেয়ে পটাতে পারবি না। মেয়ে পটাতে হলে পকেটে টাকা থাকতে হয়। শূন্য পকেট থাকলে কোনো মেয়ে তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। এটা তোর গ্রাম না। শহর। ল্যাদানো গল্পকার মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। শাহেদ জামাল বলল, হারামজাদা তোরাই ঢাকা শহরে এসে ঢাকার পরিবেশ নষ্ট করিস। তোরা গ্রামে ফিরে যা। এমন সময় ল্যাদানো গল্পকার শাহেদ জামালের পা ধরে মাফ চাইলো। এবং বলল, বড় ভাই আমাকে মাফ করে দিন। এখন থেকে আমি ভালো হয়ে যাবো। কসম।
শাহেদ জামালের একটা বন্ধু আছে।
নাম হচ্ছে বাবলু। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে। একদম অজপাড়া থেকে। ঢাকা এসে জগন্নাথে ভর্তি হয়েছে। টিউশনি করেছে। বাবা মার কাছ থেকে কোনো টাকা নেয় নি। বরং বাবা মাকে টাকা পাঠিয়েছে। টিউশনি করে অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। শহরে এসে মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে নি। মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে। লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরী পেয়েছে। চাকরী পেয়ে এমবিএ করেছে। সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় আবার এমবিএ'র ক্লাশ করেছে। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে বিয়ে করেছে। বাবলুর এখন দুই সন্তান। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। হাসিখুশি পরিবার। দুই বছর আগে বাবলু ঢাকার উত্তরাতে পাঁচ কাঠা জায়গা কিনেছে। আগামী বছর বাড়ির কাজে হাত দিবে। এরাই হলো আসল ছেলে। ল্যাদানো গল্পকার টাইপ না।
শাহেদ জামালের এক শিক্ষক বলতেন- বাবারা লাইনে থাকিস।
তোমরা লেখাপড়ায় মন দাও। ভালো রেজাল্ট করো। তবেই না ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। সারা দিনরাত মেয়ে মেয়ে করো না। তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই ভালো চাকরি পাবে। ভালো চাকরী পেলেই ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবে। তখন দেখবে মেয়েরা তোমার পিছু ঘুর ঘুর করবে। নিজের পায়ের নীচের মাটি শক্ত না করে প্রেম ট্রেম করো না। পকেটে টাকা না থাকলে প্রেমট্রেম টিকে না। প্রেম তো দূরের কথা- টাকা না থাকলে ঘরের বউও থাকবে না। কাজেই বাবারা লাইনে থাকো। মন দিয়ে পড়ো। এখন তোমাদের পড়ার সময়। লেখাপড়া শেষ করে প্রেম করো। কে মানা করছে। মেয়েদের খুশি করতে বালছাল লেখা বন্ধ করো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩