জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় কি?
আমি বলে দিচ্ছি। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে খাওয়া দাওয়া। লেখাপড়া, চাকরী, জন্ম মৃত্যু, ব্যাংক ব্যালেন্স, জমিজমা, বাড়ি বা ফ্লাটের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন খাওয়া দাওয়া করা। না খেলে আপনি বাচবেন না। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হলে খাওয়া দাওয়া করতেই হবে। মানুষ চুরী করছে, ছিনতাই করছে, দূর্নীতি করছে, চাকরী করছে, রিকশা চালাচ্ছে, মাটি কাটছে- মানুষ যা করে খাওয়ার জন্য করে। টাকার জন্য করে। কাজেই সব কিছুর আগে খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো খাবেন, ভালো থাকবেন। কম খাবেন অপুষ্টিতে ভূগবেন। ডাক্তারের কাছে দৌড়াবেন। প্রচুর খেতে হবে। খাওয়ার কোনো বিকল্প নাই। আমি ভালো খাই বলে, বেশি খাই বলে- আমার কোনো অসুখ বিসুখ হয় না। গত ৫ বছরে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি।
আমি প্রচুর খাই। অল্প খাবারে আমার পোষায় না।
এই অভ্যাস করেছে আমার মা। ছোটবেলা মা সবাইকে ভাত তরকারী বেড়ে দিতো। কিন্তু আমার সামনে দিতো পুরো পাতিল। বলতো- নিয়ে নিয়ে খাও। আমি ইচ্ছা মতো নিয়ে নিয়ে খেতাম। বাটিতে আমার ঠিক পোষায় না। এখন অবশ্য সামনে পাতিল নিয়ে খেতে বসি না। ঘরে আমাদের চার ভাইয়ের চারটা বউ। চারজন চার অঞ্চলের। তাঁরা হয়তো আমাকে ক্ষেত ভাবতে পারে। এজন্য টেবিলে বসে খাই। টেবিলে পাতিল রাখা সম্পূর্ন নিষেধ করেছে ভাবী। আমার চার ভাইয়ের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি খাই। সেদিন পরী বলল, বাসার মধ্যে আমার নাকি খেতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। পরী মনে হয় কথাটা ঠিকই বলেছে। আমার তিন ভাই অতি সামান্য ভাত নেয়। অথচ আমার লাগে তিন প্লেট। বলতে লজ্জা নেই- নুডুলস, সেমাই, চিকেন ফ্রাই, কোক, বার্গার সবই আমার বেশি লাগে।
আমার বড় ভাই দুই টুকরার বেশি গরুর মাংস খায় না।
হোক নিজের বাসায়, হোক কোনো বিয়ে বাড়িতে। কোনো দিন সে দুই টুকরার বেশি খায় না। নো নেভার। আর আমার গরুর মাংস লাগে বাটি ভরতি। অল্পতে পোষায় না। বাসার সবাই জানে। তাই আমাকে বাটি ভরতি করেই দেয়। খেতে খেতে ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করে দেয়। সবাই তন্দুর রুটি খায় একটা বা দুইটা। আমার লাগে চারটা রুটি। চারটা শেষ করে আমি বুঝতে পারি আরো দুটা অনায়াসেই খেতে পারবো। কিন্তু খাই না। চারটা খাওয়াতেই আশে পাশের মানুষ যেন কেমন করে তাকায়। রাতে সিনেমা দেখার সময় বড় বাটির একবাটি মুড়ি চানাচূর উড়িয়ে দেই। ২/৩ প্যাকেট বিস্কুট মুহুর্তের মধ্যে খেয়ে ফেলি। ফারাজার জন্য আপেল আনি। সেই আপেল গুলো আমিই খেয়ে শেষ করে ফেলি। যদি ফ্রিজে আপেল বা বিস্কুট না থাকে তাহলে দুইটা ডিম সিদ্ধ করে খেয়ে নিই।
গত শুক্ত্রবার বাসায় পাবদা আর পোয়া মাছ রান্না হয়েছে।
সাথে লাউ শাক ভাজি। লইট্রা শুটকি আর ডাল। কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছা করছিলো চিকেন ফ্রাই আর ফ্রাইড রাইস। সাথে বীফ সিজলিং। কিন্তু সব সময় তো আর ইচ্ছা পূরন করা সম্ভব নয়। রাতে খেতে বসবো- তখন বড় ভাই ফোন করে জানালো। আমি যেন না খাই। তাঁরা আসার সময় খাবার নিয়ে আসবেন। অবিশাস্য! ভাই ভাবী আমার জন্য ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই আর বীফ সিজলিং এনেছে। খুশিতে কিছুক্ষন নাচতে ইচ্ছা করলো। তাঁরা আমার মনের খবর জানলো কি করে! সুরভি আর আমি রাতে একসাথে খেলাম। কোন রেস্টুরেন্টের খাবার কে জানে! খাবার দারুন স্বাদ হয়েছে। চিকেন ফ্রাই ছিলো দুই রকমের। একটা ছিলো ঝাল। প্রতিটা চিকেনের গায়ে কাঁচা মরিচ। ভয়াবহ ঝাল। আরাম করে খেলাম। খাওয়া শেষে কোক। তারপর যখন ব্যলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম নিজেকে মিশরের সম্রাট বলে মনে হচ্ছিলো!
গতকাল বাসায় রুই মাছ রান্না করছে।
সাথে সবজি আর ডাল। অথচ আমার খেতে ইচ্ছা করছিলো বিয়ে বাড়ির খানা। দুপুরে সবাই খেতে বসেছি। এমন সময় ছোট ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে দুইজন এসে হাজির। তাদের হাত চারটা টিফিন ক্যারিয়ার। টিফিন ক্যারিয়ার খুলে আমি অবাক! সব বিয়ে বাড়ির খানা। কি নেই? সব আছে। পোলাউ নিলাম। পোলাউতে আবার মটরশুটি দিয়েছে। গরুর মাংসটা অসাধারণ হয়েছে। যে রান্না করেছে তাকে পুরস্কার দেওয়া উচিত। রোষ্ট ছিলো। রোষ্ট কিছুটা শক্ত ছিলো। ইলিশ মাছ ভাঁজা। ইলিশ মাছ কাটা হয়েছে মোটা করে। ইলিশ মাছের উপরে বেরেস্তা। কাঁচা মরিচ ছিলো কয়েকটা। কাঁচা মরিচ গুলো মাঝখান দিয়ে কাটা। টিকা গুলো খুবই সুস্বাদু ছিলো। ইচ্ছা মতো খেলাম। পায়েস ছিলো। সেই রকম হয়েছে। সেই রকম। শীত এখনও আসে নি। তবু নানান রকম পিঠা বানিয়ে পাঠিয়েছে। উফ!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৩