
বাংলাদেশে মোট ৪০৫ টি নদী আছে।
আমাদের দেশে সব কিছুই বেশী বেশী। আমাদের দেশে মসজিদের অভাব নেই। বাইকের অভাব নেই। মানুষের অভাব নেই। গরীব লোকের অভাব নেই। দুষ্ট লোকের অভাব নেই। যাইহোক, বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীতে আমি নৌকায় ভ্রমন করেছি। পদ্মা নদী, মেঘনা নদী, বারাশিয়া নদী, মধুমতি নদী, সন্ধ্যা নদী, রুপসা নদী। নদীর ভ্রমনটা আনন্দময়। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে পনের মিনিট হেঁটে গেলেই পদ্মা নদীর দেখা পাওয়া যায়। গ্রামে গেলে পদ্মানদীতে লাফালাফি করে স্নান করি।
একসময় আমাদের গ্রামে যেতে হতো নৌকায় করে।
ইঞ্জিনওলা নৌকা। সারাক্ষণ ভোট ভোট শব্দ হতেই থাকতো। মাথা ধরে যেত। বিকট শব্দ। এরমধ্যে আছে রোদের তাপ। ছাউনি নাই। বাবা অথবা মায়ের লোকে বসে থাকতাম। মা বাবা আমার হাত ছাড়তো না। যদি নদীতে পড়ে যাই! এখন আমাদের দেশে যেতে দেড় ঘণ্টা সময়ও লাগে না। অথচ একসময় সারাদিন পার হয়ে যেতো! বাসা থেকে নেমেই গাড়িতে উঠি। দেড় ঘন্টা পর গাড়ি চলে যায় আমাদের গ্রামের বাড়ির উঠানে। এই মাসে গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। শুনেছি এবার আম এবং কাঠাল অনেক হয়েছে। গাড়ি ভরে আম, কাঠাল নিয়ে আসবো।
নৌকা ভ্রমন ভালো লাগে।
নৌকা কি সুন্দর তরতর করে এগিয়ে যায়। একজন মাঝি কি সুন্দর বৈঠা দিয়ে নদী বায়। আমাদে দেশ নদীর দেশ। অথচ আমি সাঁতার জানি না। বেশ কয়েকবারা সাঁতার শেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। পুকুরে নেমেছি সাঁতার শিখব বলে। কিন্তু পুকুরে সোজা হয়ে দাড়াতে পারছি না। পুকুরের মাটি নরম। পা ঢেবে যাচ্ছে। শেষমেষ পুকুরে কাঁত হয়ে পড়ে যাই। পুকুরের পানি দিয়ে পেট ফুলে যায়। নদীর দেশে সাতার না সেখাটা অন্যায়। অবশ্য সাঁতার যে কোনো বয়সে শেখা যায়। শিখে নিবো। আমার কন্যা আর আমি একসাথেই সাঁতার শিখবো। সুইংপুলে টাকা দিয়ে আমি সাঁতার শিখবো না। নো নেভার।
জীবনে একবার নৌকা ভ্রমন বিরাট বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম।
মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছি। আমার বন্ধু এসেছে দুবাই থেকে। সে তার সাবেক প্রেমিকার সাথে দেখা করবে। বন্ধু আমাকে নিয়ে গেলো তার সাথে। কার্তিকপুর যাবো। নৌকা চলছে ধুমছে। ইঞ্জিনওলা নৌকা। মাঝনদীতে নৌকা হঠাত থেমে গেলো। ইঞ্জিনে সমস্যা। নৌকায় আমরা ২০/২৫ জন মানুষ। নদীর ঢেউয়ে নৌকা সমানে দুলছে। মনে হচ্ছে নৌকা যে কোনো সময় ডুবে যাবে। এদিকে আকাশ কালো হতে শুরু করেছে। আর কি বাতাস! নৌকা ভরা যাত্রীরা আহাজারি করছে। তাদের আচার-আচরন পাগলের মতো লাগছে আমার কাছে।
আমার বন্ধু ভয়ে কাপছে।
নারী পুরুষ চিৎকার চেচামেচি করছে। একজন হুজুরকে দেখলাম আযান দিচ্ছেন। কেউ কেউ মোবাইলে আত্মীয়স্বজনকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছে। 'মাফ করে দিস'। 'সুমাইয়ারে দেখে রাখিস'। 'তোমরা ভালো থাইক্কো'। আমার বন্ধু নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। একটা সিগারেট ধরালাম। মনে মনে ভাবছি এক কাপ চা হলে দারুন হতো। দুইজন সাহসী লোক নদীতে ঝাপ দিলো। তাঁরা হয়তো সাতারে ভালো। এক মহিলা আল্লাহ গো, আল্লাহ গো বলে খুব কান্না করছে। যাইহোক, সে যাত্রায় বেঁচে যাই। তিনটা স্প্রীডবোট এসে আমাদের বাঁচায়।
আমার বেস্ট নৌকা ভ্রমন হলো নীলার সাথে।
তূরাগ নদীতে। একবার ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে আমি আর নীলা বেড়িয়ে গেলাম। আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো। একসাথে থাকবো। সারাদিন আমরা নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। দুপুরে স্টারে খেলাম। ধানমন্ডি লেকে বসে থাকলাম। হঠাত নীলা বলল নৌকায় চড়তে ইচ্ছা করছে। মিরপুর বেড়িবাধ থেকে একটা সুন্দর নৌকায় উঠলাম। তখন বিকেল। নৌকা চলছে!! নীলা আমার কোলে শুয়ে আছে। হঠাত দেখি তার চোখে পানি! আমি বললাম, কি হয়েছে? নীলা কিছু বলে না। শুধু কাঁদছে। শেষে জানলাম নীলার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




