somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- (তেতাল্লিশ)

০২ রা জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাচের মতো স্বচ্ছ রোদ উঠেছে!
চারদিক কেমন খা খা করছে। বাতাস নেই। পিচঢালা রাস্তা গরম হয়ে আছে। গরম ভাব আসছে। রোদের তাপে চামড়া যেন জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। শরীর ঘামছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। আজ রাস্তায় মানুষজন খুব কম। গাড়িঘোড়ার সংখ্যা খুব কম। অবশ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটির এই রাস্তাটা সব সময় নিরিবিলি থাকে। সময় দুপুর দুটা। নীলক্ষেত মোড় থেকে শাহেদ হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে কলা ভবনের কাছে। সেখানে নীলা দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে হেঁটে যেতে শাহেদের দশ মিনিট লাগবে। দেখা করার কথা থাকলেই, নীলা যথাসময়ে এসে উপস্থিত হয়। শাহেদ জামাল যথাসময়ে কোনোদিদন উপস্থিত হতে পারিনি। অবশ্য এজন্য নীলা রাগ করে না। নীলা বড় ভালো একটা মেয়ে। খুব বেশি সহজ সরল।

নীলা শাহেদকে দেখেই সুন্দর একটা হাসি দিলো।
শাহেদ যে পনের মিনিট দেরী করলো সেজন্য কিঞ্চিৎ রাগও দেখালো না। অন্য মেয়েদের সাথে নীলার এখানেই পার্থক্য। একদিন শাহেদ নীলাকে বলেছিলো- তোমাকে শাড়িতে ভীষন ভালো দেখায়। এরপর থেকে নীলা শাহেদের সাথে দেখা করতে এলেই শাড়ি পরে আসে। আজ নীলা পড়েছে একটা চুন্ডি শাড়ী। শাড়ির কুচি গুলো সমান হয়েছে। আঁচলটা অনেকখনি লম্বা রেখেছে। নীলা কখনই খুব সাজে না। তার সাজা বলতে চোখে কাজল, কপালে টিপ আর দুই হাত ভরতি চুড়ি। কাঁচের চুড়ি। তাতেই নীলাকে দারুন লাগে। মাঝে মাঝে শাহেদের মনে হয় নীলা তাকে ছেড়ে কোনোদিন চলে যাবে নাতো! এই ভয়টা শাহেদকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। যন্ত্রনা দেয়।

মধ্য দুপুরে তারা ফুলাররোড দিয়ে হাঁটছে।
এই মুহুর্তে তাদের চেয়ে সুখী দুনিয়াতে আর কেউ নেই। নীলা শাহেদের পাশে থাকলেই তার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হয়। নীলারও কি এমনটা মনে হয়! ভরদুপুরে তারা হয়ে যায় কিশোর কিশোরী। একলোক রাস্তায় আখের রস বিক্রি করছে। এক মগ আখের রসের মধ্যে আবার বরফের কুচি দিয়ে দেয়। তারা আখের রস খেলো। কি ঠান্ডা! নীলা বলল, আজ আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবো। শাহেদ বললো, অশেষ শুকরিয়া ম্যাডাম। এখন বলো- দুপুরে কি খাবে? নীলা বলল, আমি সব খাবার খাই। খাবার নিয়ে আমার কোনো বাছাবাছি নাই। বিট্রিশ কাউন্সিলের কাছে আসতেই নীলার বাবার সাথে দেখা। নীলার বাবা তাদের দেখে মোটেই অবাক হননি।

তাঁরা তিনজন নিউ মার্কেট এলাকায় একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছে।
নীলার বাবা একজন উকিল। একসময় সরকারী চাকরী করতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন ওকালতি করছেন জজ কোর্টে। ভদ্রলোক দারুন বুদ্ধিমান এবং আধুনিক মানুষ। নামাজ পড়েন। তিনি বললেন, এভাবে আর কতদিন তোমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে? বিয়ে করে ফেলো। নীলা বলল, বাবা আমার এখনও মাস্টার্সের রেজাল্ট দেয়নি। শাহেদ জামাল কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। নীলা বলল, বাবা আমি বিয়ে করে ফেললে তোমাকে কে দেখবে? মা বেঁচে থাকলে আর কোনো চিন্তা ছিলো না। নীলার বাবা বললেন, সেটা কোনো বড় সমস্যা না। আমি আমার নিজের দেখভাল নিজে করতে পারবো। আমি এখনও খুব বুড়ো হয়ে যাইনি।

নীলার বাবা চলে গেলেন, তার জরুরী কাজ আছে।
যাবার আগে শাহেদ কে বলে গেলেন- নীলাকে যেন বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এখন বিকেল। রোদ মরে এসেছে। বলাকা সিনেমা হলের সামনে তাঁরা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা বলল, শাহেদ আমার গলার কাছে সমস্যা আছে। সমস্যাটার নাম ক্যান্সার। আগামী সপ্তাহে আবার চেন্নাই যাবো। শাহেদ বলল, সেটা জানি। ঠিক হয়ে যাবে। নীলা বলল, ডাক্তারদের মতো কথা বলবে নাতো। আজ তিন বছর হয়ে গেলো। কই ঠিক হচ্ছে নাতো। হবেও না। শাহেদ বলল, সেটা আমার জন্য কোনো সমস্যা না। নীলা বলল, এখন যদি আমরা বিয়ে করি, আমাদের যদি বাচ্চা হয়। সেই বাচ্চার যদি আমার মতো গলায় ক্যান্সার নিয়ে দুনিয়াতে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×