
কাচের মতো স্বচ্ছ রোদ উঠেছে!
চারদিক কেমন খা খা করছে। বাতাস নেই। পিচঢালা রাস্তা গরম হয়ে আছে। গরম ভাব আসছে। রোদের তাপে চামড়া যেন জ্বলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। শরীর ঘামছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। আজ রাস্তায় মানুষজন খুব কম। গাড়িঘোড়ার সংখ্যা খুব কম। অবশ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটির এই রাস্তাটা সব সময় নিরিবিলি থাকে। সময় দুপুর দুটা। নীলক্ষেত মোড় থেকে শাহেদ হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে কলা ভবনের কাছে। সেখানে নীলা দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে হেঁটে যেতে শাহেদের দশ মিনিট লাগবে। দেখা করার কথা থাকলেই, নীলা যথাসময়ে এসে উপস্থিত হয়। শাহেদ জামাল যথাসময়ে কোনোদিদন উপস্থিত হতে পারিনি। অবশ্য এজন্য নীলা রাগ করে না। নীলা বড় ভালো একটা মেয়ে। খুব বেশি সহজ সরল।
নীলা শাহেদকে দেখেই সুন্দর একটা হাসি দিলো।
শাহেদ যে পনের মিনিট দেরী করলো সেজন্য কিঞ্চিৎ রাগও দেখালো না। অন্য মেয়েদের সাথে নীলার এখানেই পার্থক্য। একদিন শাহেদ নীলাকে বলেছিলো- তোমাকে শাড়িতে ভীষন ভালো দেখায়। এরপর থেকে নীলা শাহেদের সাথে দেখা করতে এলেই শাড়ি পরে আসে। আজ নীলা পড়েছে একটা চুন্ডি শাড়ী। শাড়ির কুচি গুলো সমান হয়েছে। আঁচলটা অনেকখনি লম্বা রেখেছে। নীলা কখনই খুব সাজে না। তার সাজা বলতে চোখে কাজল, কপালে টিপ আর দুই হাত ভরতি চুড়ি। কাঁচের চুড়ি। তাতেই নীলাকে দারুন লাগে। মাঝে মাঝে শাহেদের মনে হয় নীলা তাকে ছেড়ে কোনোদিন চলে যাবে নাতো! এই ভয়টা শাহেদকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। যন্ত্রনা দেয়।
মধ্য দুপুরে তারা ফুলাররোড দিয়ে হাঁটছে।
এই মুহুর্তে তাদের চেয়ে সুখী দুনিয়াতে আর কেউ নেই। নীলা শাহেদের পাশে থাকলেই তার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হয়। নীলারও কি এমনটা মনে হয়! ভরদুপুরে তারা হয়ে যায় কিশোর কিশোরী। একলোক রাস্তায় আখের রস বিক্রি করছে। এক মগ আখের রসের মধ্যে আবার বরফের কুচি দিয়ে দেয়। তারা আখের রস খেলো। কি ঠান্ডা! নীলা বলল, আজ আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবো। শাহেদ বললো, অশেষ শুকরিয়া ম্যাডাম। এখন বলো- দুপুরে কি খাবে? নীলা বলল, আমি সব খাবার খাই। খাবার নিয়ে আমার কোনো বাছাবাছি নাই। বিট্রিশ কাউন্সিলের কাছে আসতেই নীলার বাবার সাথে দেখা। নীলার বাবা তাদের দেখে মোটেই অবাক হননি।
তাঁরা তিনজন নিউ মার্কেট এলাকায় একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছে।
নীলার বাবা একজন উকিল। একসময় সরকারী চাকরী করতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন ওকালতি করছেন জজ কোর্টে। ভদ্রলোক দারুন বুদ্ধিমান এবং আধুনিক মানুষ। নামাজ পড়েন। তিনি বললেন, এভাবে আর কতদিন তোমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে? বিয়ে করে ফেলো। নীলা বলল, বাবা আমার এখনও মাস্টার্সের রেজাল্ট দেয়নি। শাহেদ জামাল কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। নীলা বলল, বাবা আমি বিয়ে করে ফেললে তোমাকে কে দেখবে? মা বেঁচে থাকলে আর কোনো চিন্তা ছিলো না। নীলার বাবা বললেন, সেটা কোনো বড় সমস্যা না। আমি আমার নিজের দেখভাল নিজে করতে পারবো। আমি এখনও খুব বুড়ো হয়ে যাইনি।
নীলার বাবা চলে গেলেন, তার জরুরী কাজ আছে।
যাবার আগে শাহেদ কে বলে গেলেন- নীলাকে যেন বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এখন বিকেল। রোদ মরে এসেছে। বলাকা সিনেমা হলের সামনে তাঁরা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা বলল, শাহেদ আমার গলার কাছে সমস্যা আছে। সমস্যাটার নাম ক্যান্সার। আগামী সপ্তাহে আবার চেন্নাই যাবো। শাহেদ বলল, সেটা জানি। ঠিক হয়ে যাবে। নীলা বলল, ডাক্তারদের মতো কথা বলবে নাতো। আজ তিন বছর হয়ে গেলো। কই ঠিক হচ্ছে নাতো। হবেও না। শাহেদ বলল, সেটা আমার জন্য কোনো সমস্যা না। নীলা বলল, এখন যদি আমরা বিয়ে করি, আমাদের যদি বাচ্চা হয়। সেই বাচ্চার যদি আমার মতো গলায় ক্যান্সার নিয়ে দুনিয়াতে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



