আমি খেতে খুব পছন্দ করি। অবশ্য রান্না হতে হবে অসাধারণ।
রান্না ভালো না হলে সেই খাবার আমি মুখে দেই না। একবার এক দূর্নীতিবাজের গ্রামের বাড়িতে গেলাম। দুপুরে খাবারের আয়োজন দেখে আমি অবাক! কমপক্ষে৪০ টা আইটেম। মাছই আছে ১৮ রকমের। সব দেশী মাছ। দেশী মূরগী। রান্নাও হয়েছে বেশ। আমি অনেক সময় নিয়ে তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের রান্নার হাত বেশী ভালো। খেয়ে টান টান হয়ে একটা ঘুম দিলাম। কিন্তু একবারও ভাবলাম না- এ মাছ গুলো কে ধরেছে? কোন নদীরর মাছ? কে রান্না করেছে? স্বার্থপর হয়ে গেছি আমি।
আমাদের বাসা থেকে কিছু দূর একটা জায়গা আছে।
নাম 'রাজারবাগ কালীবাড়ি'। সেখানে বিশাল এক দীঘি আছে। দীঘির একপাশে মন্দির। একপাশে শ্মশান। পুজোর সময় এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। সেই কালীবাড়ির দীঘিতে একবার টিকিট কেটে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা হলো। আমি কখনও ছিপ দিয়ে মাছ ধরিনি। আমার একেবারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু আমার শখ হলো- আমি ছিপ দিয়ে মাছ ধরবো। আমার মনে হলো- খুব কঠিন কিছু না। মানুষের তো শখের শেষ নেই। টিকিট নিলাম। সকালবেলা ছিপ নিয়ে বসে গেলাম। বিশাল দীঘি। কমপক্ষে ৪০ জন মানুষ ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে বসেছে। আর দর্শক হবে দুই হাজারের বেশি।
তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলো।
অনেকেই বেশ কিছু বড় বড় মাছ ধরে ফেলেছেন। আমার ভাগ্য মন্দ। আমি একটা মাছও ধরতে পারিনি। সামান্য একটা ছোট তেলাপিয়া ধরতে পারলেও মনকে বুঝ দিতে পারতাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। আমার ছিপে মাছ ধরা পড়লো না। এদিকে কেউ কেউ ২০/২৫ কেজি মাছ ধরে ফেলেছেন। অনেকে বলাবলি করছিলো- ছিপ দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ন নির্ভর করে ভাগ্যের উপর। ভাগ্যে না থাকলে ছিপ দিয়ে কেউ মাছ ধরতে পারে না। বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া ছিপ দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব নয়। এসব কথা আমার কাছে কুসংস্কার বলেই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু আমি ভুল। ছিপ দিয়ে মাছ ধরার অনেক রকম নিয়ম কানুন আছে। গায়ের শক্তিতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরা যায় না।
বিকেল পাঁচ টা বেজে গেলো। আমি একটা মাছও ধরতে পারিনি।
এদিকে অন্যান্য লোকজন কম বেশি মাছ পেয়েছে। একমাত্র আমি কোনো মাছ ধরতে পারিনি। আমার মেজাজ খুব খারাপ হলো। এক হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি! পরের দিন আমি আবার টিকিট কাটলাম। আজ আমি মাছ ধরবোই। আমার নাম রাজীব নূর। আমার তেজ আছে। এই তেজ বংশগত। পরের দিনও আমি কোনো মাছ ধরতে পারিনি। প্রচন্ড হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। মাকে বলে গিয়েছিলাম- আজ তোমাকে নিজের হাতে মাছ ধরে রান্না করে খাওয়াবো। এজন্য অগ্রীম কথা বলা ভালো না। কম কথা বলা ভালো। কিন্তু আমি কথা বেশি বলি।
এগুলো বহু বছর আগের কথা।
তখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিলো না। এজন্য ছবি তোলা হয়নি। আমি দুঃখিত আপনাদের ছবি দেখাতে পারলাম না। যাইহোক, ২০১২ সালে একবার- রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তিনটা বড় পুকুর আছে। সেই পুকুরে একবার লুকিয়ে মাছ ধরতে গেলাম। আমার ভাগ্য ভালো। আমি একটা রুই মাছ ধরে ফেলি। ওজন প্রায় ৩ কেজি। সেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। বাজার থেকে কেনা মাছ আর নিজের হাতে ধরা মাছ আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই মাছ আমি গর্বের সাথে বাসায় নিয়ে আসি। রাস্তা দিয়ে আসার সময় বলতে বলতে এসেছি- নিজের হাতে ধরা মাছ! বাসার সবাই এই মাছ খেয়েছে। কিন্তু আমি খাইনি। মাছটার উপর মায়া পড়ে গিয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৩৫