somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ধানুশ

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৩ সালের ঘটনা।
তখন আমি একবার চেন্নাই শহরে যাই। আমার মঞ্জু মামা অসুস্থ। মামা চিকিৎসা করাবেন। সাথে আমাকে নিয়ে গেলেন। তখন আমার অল্প বয়স। মাত্র কলেজ পাশ করেছি। চেন্নাই গেলাম। নতুন একটা শহর। যা দেখি ভালো লাগে। মামা এক হাসপাতালে ভরতি হলেন। সারাদিন আমি মামার পাশে পাশে থাকি। একদিন মামা বললেন, সারাক্ষণ আমার সাথে থাকার দরকার নাই। তুই যা আশেপাশে কোথাও ঘুরে আয়। আমাকে কিছু টাকাও দিলেন। আমি বললাম, মামা আমি কোথাও যাবো না। বাইরে বের হলেই আমার ভয় করে। চারপাশে সব মোটা মোচওলা লোক। গায়ের রঙ খুব কালো। ওদের মুখের ভাষাও যেন কেমন। ওদের দেখলেই আমার ভয় ভয় লাগে। মামা বললেন, ওদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওরা কালো হলেও মানুষ ভালো। ছোটবেলা থেকেই কালো মোটা মানুষদের আমি ভয় পেতাম। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে- সবার মুখে মোটা গোঁফ।

মামা বললেন, তাহলে যা একটা সিনেমা দেখে আয়।
হাসপাতালের কাছেই একটা সিনেমা হল আছে। মামার এই কথাটা আমার মনে ধরেছে। আমি গেলাম সিনেমা দেখতে। যদিও আমি হিন্দি সিনেমা দেখে অভ্যস্ত। জীবনের প্রথম তামিল সিনেমা দেখতে হলে গেলাম। আজ আর সিনেমার নামটি আমার মনে নেই। তবে সিনেমার কাহিনী কিছু অংশ আমার মনে আছে। সেই কিছু অংশ কাহিনীটা আমি বলল, এবং আপনারা যদি কেউ এই মুভিটা দেখে থাকেন, তাহলে এই মুভিটার নাম অবশ্যই আমাকে বলবেন। আমি এই মুভিটা আবার দেখতে চাই। আমাকে দেখতেই হবে। মুভির নায়কের নাম আমার মনে আছে, ধানুশ। বর্তমানে সে খুবই জনপ্রিয় নায়ক। সে গত পনের বছর ধানুশ যত মুভি করেছে, আমি সব গুলো বেশ কয়েকবার করে দেখেছি। এখন আমি সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি দেখার ওস্তাদ লোক। এমনকি অনেক তামিল শব্দ শিখে গেছি। সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি গুলোর কাহিনী অতি চমকপদ। ভালো লাগতে বাধ্য।

যাইহোক, মুভির কাহিনী বলছি, যতটুকু মনে আছে-
১৯ বছর আগে দেখা মুভি। তখন নায়ক ধানুশ একদম পোলাপান। আমার মতো বয়স হবে হয়তো। চ্যাংড়া বয়স। একদম চিকনা। মুখে হালকা দাঁড়ি। দেখলে মনে হয় নেশা করে। চাপা ভাঙ্গা। মুভিতে সে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। একটা কমদামী বাইক চালায়। সারাদিন আড্ডা দিয়ে সে রাত বারোটায় বাসায় ফিরে। তার মা খুব নিরবে ঘরের দরজা খুলে দেয়। যেন ধানুশের বাপ না বুঝতে পারে। কিন্তু ধানুশের বাপ ছেলের সামনে এসে রোজ চিল্লাচিল্লি করে। গালাগালি করে। তখন ধানুশ বলে, আব্বা তোমার প্রতিদিনকার এক রকম চিল্লাচিল্লি আমার ভালো লাগে না। তাছাড়া তুমি চিল্লাচিল্লি করে শেষমেশ অসুস্থ হয়ে পরো। এর চেয়ে ভালো তুমি তোমার চিল্লাচিল্লি রেকর্ড করে রাখো, আমি বাসায় এসে শুনে নিবো সময় মতো। এতে তোমারও উপকার, আমারও উপকার। ধানুশরা দুই ভাই। বড় ভাই পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না। ধানুশের লেখাপোড়ায় একদম মন নেই।

সিনেমার কাহিনী এইভাবে এগিয়ে যেতে থাকে।
একদিন ধানুশের বাপ ছেলেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বলে, এই টাকাটা একাউন্টে জমা দিবি। ধানুশ বলে আচ্ছা। বাপ বলল, টাকা টা গুনে নে। ধানুশ বলে গুনতে হবে না। তখন তার বাপ বলে, না তুই গুনে নে। পরে বলবি আমি টাকা কম দিয়েছি। গ্যাস বিল, পানি বিল দিতে গেলেও তুই ফিরে এসে বলিস আমি টাকা কম দিছি। ধানুশ টাকা গুনে নিলো, হ্যাঁ তিন হাজার টাকাই আছে। এক সুন্দর ঝলমলে সকালে ধানুশ তার কমদামী বাইক নিয়ে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে বের হলো। তখন রাস্তায় এক মেয়ে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলো (এই মেয়েটাই সম্ভবত নায়িকা)। ধানুশ আর মেয়েটা পাশাপাশি বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখন মেয়েটা হঠাত স্কুটি থেকে পরে যায়। সামান্য ব্যথা পায়। অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ধানুশ মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। ডাক্তার মেয়েটাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে নেয়ে। ডাক্তার জিজ্ঞেস করে মেয়েটা আপনার কি হয়? ধানুশ মজা করে বলে আমার বউ হয়।

হাসপাতালে ধানুশ তিন হাজার টাকা দিয়ে আসে।
বাসায় আসার পর তার বাপ জিজ্ঞেস করে, কি হারামজাদা ব্যাংকে টাকা জমা দেছ নাই ক্যান। ধানুশ চুপ করে থাকে। আর তার বাপ সমানে গালমন্দ করে যায়। পরের দিন হাসপাটালে ধানুশ ফোন করে। মেয়েটা বলে তুই আমাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে ভালো করেছিস, কিন্তু কেন বললি তুই আমার স্বামী? ধানুশ বলে এত কথার দরকার নাই, আমার তিন হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দাও। তখন মেয়ে বলে হাসপাতালের বিল দশ হাজার টাকার উপরে হয়ে গেছে। তুই বাকি টাকা দিয়ে যা। ধানুশ বলে, আমি কেন টাকা দিবো? টাকা দিবে তোমার বাপ। মেয়েটা বলে, তোর জন্যই আমি ব্যথা পেয়েছি। তুই টাকা দিবি। আর শোন হাসপাতালের খাবার আমার ভালো লাগে না। তুই আমার জন্য কাচ্চি কিনে পাঠিয়ে দে, সাথে মনে করে কোক দিয়ে দিস। ধানুশ একটা গালি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। এখন সে তিন হাজার টাকা কোথায় পাবে?

একদিন ধানুশ দুপুরবেলা বাড়ি ফিরে।
মাকে বলে ভাত দাও। তার মা ভাত দেয়। ধানুশ বলে শুধু মূলার তরকারী রান্না করছো? এক পদ দিয়ে ভাত খাই কি করে? মাংস রান্না করতে পারো না? তখন তার বাপ পাশের ঘর থেকে বের হয়ে বলে, হারামজাদা আমি বেঁচে আছি বলে মূলার তরকারী দিয়ে ভাত খেতে পারছো, আমি মরে গেলে এটুকুও তোমার ভাগ্যে জুটবে না। ধানুশ বলে, চুপ থাকো আব্বা। বকবক করা তোমার এক দোষ। বাবা বলে, পারলে দুই পয়সা ইনকাম করে দেখা। আমি অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।
এইভাবে সিনেমার কাহিনী এগিয়ে যায়। সিনেমাটা আমি পুরোটাই দেখেছিলাম। কিন্তু আজ আর পুরো কাহিনী মনে নেই। এই সিনেমা আমি ইউটিউবে অনেক খুজেছি, পাইনি। কিন্তু সিনেমাটা আমি আর একবার দেখতে চাই। যদি কেউ এই সিনেমার নামটা জানেন, দয়া করে আমাকে জানাবেন। মুভিটা আমি আর একবার দেখতে চাই। সিনেমার কাহিনীটা সুন্দর। আমি গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে পারি নি। সকলকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×