
প্রিয় কন্যা আমার-
সত্যের পরেও আরো কিছু সত্য অবশিষ্ঠ থাকে। সেই সত্যটুকু খুঁজে বের করা প্রয়োজন। যেমন ধরো একজন চোর বা ছিনতাইকারী হাতেনাতে ধরা পড়লো। তাদের পুলিশ গ্রেফতার করলো। তাঁরা শাস্তি পেলো। এখানেই কিন্তু সব শেষ না। আরো বাকি আছে। সেই বাকিটুকু কেউ খুঁজে না। তুমি খুঁজবে। অনুসন্ধান করবে। আরেকটা উদাহরণ দেই, ধরো কেউ একজন একটা খুন করলো। পুলিশ খুনীকে গ্রেফতার করলো। সবাই খুশি হলো। সবাই আরো বেশি খুশি হলো- যখন আদালতে খুনির রায় হলো। বিচারক খুনীকে সারা জীবন জেল বা ফাঁসির হুকুম দিলো। এখানেই কি সব শেষ? না সব শেষ না। আরো বাকি আছে। আরো কিছু সত্য বাকি আছে। সেই সত্যটুকু তুমি খুঁজবে। এর প্রয়োজন আছে। কত কিছু যে আড়ালে আবডালে থেকে যায়!
প্রিয় কন্যা ফারাজা,
তুমি যখন জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে তখনই তুমি সুখের সন্ধান পাবে। তোমার সুখ তোমাকেই অর্জন করে নিতে হবে। এজন্য দরকার শিক্ষা, রুচিবোধ, ভালোত্ব, মহত্ব এবং মেধা। এই আধুনিক যুগে এসেও আমাদের সমাজে নারীরা আজও অবহেলিত। বিয়ের সময় যৌতুক লাগে। বরপক্ষ কে এটা সেটা অনেক কিছুই দিতে হয়। কন্যার শ্বশুর বাড়ির মানুষজন হা করে থাকে। যৌতুক প্রথা একটা খারাপ প্রথা। এজন্য প্রতিটা মেয়ের উচিৎ নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। শুধু লেখাপড়া শিখলেই হবে না। নিজের পায়ের নিচের মাটিটা শক্ত করতে হবে। যেন তাঁরা যৌতুক চাইতে সাহস না পায়। এতটাই উপরে উঠতে হবে, সফল হতে হবে। যেন মেয়েদের যোগ্যতার কাছে ছেলেপক্ষের লোকজনের মাথা নীচু হয়ে আসে। এভাবেই যৌতুক বন্ধ করা সম্ভব।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
বিভূতিভূষণের 'অশনি সংকেত' বইটা খুব ভালো। বইয়ের কাহিনী এই রকমঃ গ্রামে খাবারের অভাব দেখা দিলো। বাজারে চাল নেই। সচ্ছল যারা তারা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেছে, প্রচুর চাল মজুদ করে ঘরে রেখেছে। অস্বচ্ছল মানুষজন চালের সন্ধানে ছুটাছুটি করছে। শুরু হলো ভয়াবহ খাদ্যসংকট। একমুঠো চালের সন্ধানে বেপরোয়া মানুষজনের হাহাকার। ভাতের অভাবে মতি নামে একজন মারা যায় গ্রামে। খাবারের সংকট একটা দেশকে তছনছ করে দেয়- লেখক তা বেশ ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। এই বইয়ের কথা তোমাকে কেন বললাম জানি না। যাইহোক, আমি বলতে চাই তুমি কাউকে বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস করলেই তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাঙ্গালীরা মানুষ হিসেবে উন্নত নয়। শুধু বিশ্বাস রাখবে নিজের উপর।
প্রিয় কন্যা আমার-
মানুষ মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করে না। প্রকৃতি কঠিন প্রতিশোধ নেয়। এজন্য জীবনে এমনভাবে চলতে হবে- কেউ যেন তোমার ব্যবহারে কষ্ট না পায়। কাউকে আঘাত দিও না, কাউকে ঠকিও না। সমস্ত রকম অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে রেখো। সহজ সরল সুন্দর জীবনযাপন করো। কাউকে ঠকালে, কাউকে ইগনোর করলে, অবহেলা করলে, কষ্ট দিলে- তোমাকেও একই ভাবে একদিন অন্য কারো কাছ থেকে সেসব ভোগ করতে হবে। কাজেই সাবধান থাকতে হবে প্রতিটা মুহুর্ত। আবেগ নয় বিবেক দিয়ে চলতে হবে। বিবেককে সব সময় জাগ্রত রাখতে হবে। বিবেক জাগ্রত থাকলে মানুষ মন্দ কাজ করতে পারে না। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি- তোমার জীবনটা এমন করে কাটিয়ে দাও যেনো তোমার কারণে কেউ কোনো রকম আঘাত বা কষ্ট ভোগ না করে। অসম্ভব কিছু না। তুমি পারবে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)-
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। এইটার ভালো এবং খারাপ দিক আছে। বন্ধু লাইফের একটা অংশ। বন্ধু ছাড়া লাইফ এক প্রকারে অচল, বন্ধুদের সাথে বেশি সময় দিলে তোমার ফোকাস কে ধ্বংস এর দিকে নিয়ে যাবে। তাই বেশি বন্ধু থাকার কোনো প্রয়জোন নেই। ভালো বন্ধু জীবনে দুই একজন থাকলেই চলে। ইমোশনাল মানুষ জন ঠেকে বেশি। কোন কিছুতে ইমোশনাল না হওয়া। তুমি আবেগি হয়ো না। বাস্তবাদী হও। হ্যাঁ আমি জানি, মডার্ন এবং প্রগতিশীল হওয়াটা অবশ্যই ব্যক্তিত্বের একটি আকর্ষণীয় দিক। প্রতিটি মানুষের জীবনে খারাপ সময় আসতেই পারে। প্রকৃতপক্ষে সেই সর্বোচ্চ সাফল্যের চূড়ায় আহরণ করতে পারে যে খারাপ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু বুদ্ধিমান মানুষেরাই।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



