somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজকের ডায়েরী- ১০৮

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপলক্ষ্যে ছোট ভাই একটা টিভি কিনেছে।
অথচ সব ঘরেই একটা করে টিভি দেয়ালে লাগানো আছে। আমাদের বাসায় টিভি কেউ দেখে না শুধু মা ছাড়া। সবাই ল্যাপটপ আর মোবাইলে কাজ চালিয়ে যায়। যাইহোক, আমাদের বাসার সবাই আর্জেন্টিনার কঠিন সাপোর্টার। যেদিন আর্জেন্টোনার খেলা থাকে আমরা সকলে মিলে খেলা দেখি। চিৎকার চেচামেচি করে বাসার সবার গলা ভেঙ্গে যায়। বড় ভাই আমাদের সাথে খেলা দেখেন না। কারন আমরা খুব চিল্লাচিল্লি করি। বড় ভাইয়ের মাথা ব্যথা করে। সে একা খেলা দেখে। খেলা উপলক্ষ্যে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল ছিলো ফাইনাল খেলা। এই উপলক্ষ্যে অনেক রকম খাবার রান্না হয়েছে। পিঠা তৈরি করা হয়েছে। যখন আর্জেন্টিনা দুই গোল দিয়ে দিলো, আমাদের এলাকায় বিজয় মিছিল শুরু হয়ে গেলো। অথচ তখনও খেলা পুরো শেষ হয়নি।

ফাইনাল খেলা নিয়ে আমি টেনশনে ছিলাম।
আমি আমার সমস্যা, টেনশন বা হতাশা কাউকে জানতে দেই না। বুঝতে দেই না। টেনশন দূর করার জন্য আমি পরিবার নিয়ে পূবাইল চলে গেলাম ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে। সারাদিন সেখানেই কাটালাম। ফারাজা খুব খুশি। বড় মেয়ে পরীও বেশ খুশি। তাঁরা ইচ্ছা মতো খেলাধূলা করলো। টেনশন করলে আমার খুব ক্ষুধা পায়। দুপুরে ইচ্ছা মতো থাই স্যুপ, চিকেন ফ্রাই আর ফ্রাইড রাইস খেয়ে নিলুম। ওদের সব খাবার ভালো ছিলো শুধু চা-কফি ছাড়া। সুরভির কিছুটা মন খারাপ ছিলো। সে চেয়েছিলো তার বাবার বাড়ি যাই। অনেকদিন সে যায় না। বিশেষ কারন ছাড়া শ্বশুরবাড়ি যেতে আমার ইচ্ছা করে না। তাছাড়া জামাই মানুষ ঘনঘন শ্বশুর বাড়ি যাওয়া ভালো দেখায় না। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। রাত ৯ টায় খেলা। মন বলছে আর্জেন্টিনা জিতবে। মাকে বললাম, টেনশন করো না, আর্জেন্টিনা অবশ্যই জিতবে। বিসমিল্লাহ্‌ বলে খেলা দেখতে বসলাম।

আর্জেন্টিনা বিরতির আগেই দুই গোল দিয়ে দিয়েছে।
আমরা সমানে চিৎকার দিয়েই যাচ্ছি। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য শাবির। বয়স ৭ মাস। সে আমাদের চিৎকারে ভয়ে পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। অন্যদিকে আমার ছোট ভাই, খুশিতে এবং আবেগে টিভিতে একটা গুসি মেরে বসলো। এলইডি স্ক্রীন নষ্ট হয়ে গেলো। নতুন টিভি! ৯২ হাজার টাকা দাম! শেষে আমরা সকলে মার ঘরে টিভি দেখতে যাই। হাফ টাইমের পর আর্জেন্টিনা দুই গোল খেয়ে গেলো। আমরা সবাই থ মেরে গেলাম। এমন সময় 'আইরিন' (আমাদের বাসায় থাকে) সবার জন্য পোলাউ মাংস, কোক নিয়ে এলো। খেলা শেষের দিকে, দুই-দুই গোল। আমরা সবাই রেগে উঠলাম আইরিনের উপর। যেন খেলার এই অবস্থার জন্য আইরিন দায়ী। আইরিন বলল, আমি চলে গেলাম, খাবার আর গরম করতে পারবো না। আমি বললাম, জাহান্নামে যাও। নব্বই মিনিটের খেলা শেষ। এখন ত্রিশ মিনিট খেলা হবে। ভরপুর টেনশনে আছি আমরা।

এবং একসময় আর্জেন্টিনা জিতে গেলো বিশ্বকাপ।
আমাদের মনে হলো- বাংলাদেশ আজ বিশ্বকাপ জিতলে যে আনন্দ পেতাম, আর্জেন্টিনা জেতাতে আমরা সেরকম'ই আনন্দ পেয়েছি। রাস্তায় চলছে মিছিল। আনন্দ উল্লাস। আতশবাজি। পুরো শহর জেগে আছে। মনে হয় কারো কোনো দুঃখ কষ্ট নেই। অভাব নেই। হতাশা নেই। ঢাকা শহরের মানুষ গুলো বড় অদ্ভুত। এই শীতের রাতে মিছিল করছে। ভেঁপু বাজাচ্ছে। কি সীমাহীন আনন্দ ওদের! সুরভি ফাইনাল খেলা দেখেনি। সে গাল ফুলিয়ে আছে। কারন, যে লোক ফারাজার জন্য প্রতিদিন বাসায় দুধ দিয়ে যায়, সে আজ দুধ দিয়ে যায়নি। তাকে ফোন দেওয়া হয়েছে সে ফোন ধরেনি। সুরভি বলেছে দোকান থেকে দুধ নিয়ে আসতে। আমি বলেছি খেলা রেখে এখন আমার পক্ষে দুধ আনতে যাওয়া সম্ভব নয়। সুরভি বলেছে, মেয়ে দুধ খাবে। আর খেলা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ন! আমি বলেছি, একদিন দুধ না খেলে সমস্যা নাই। ঘরে আপেল আছে, আপেল দাও।

রাত দেড়টায় আমরা খেতে বসলাম।
খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। আইরিন বেশ রাগ করেছে। তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খেতে বসালাম। ভাবী ওভেনে খাবার গরম করে দিলেন। রাতে খাইনি। অথচ ক্ষুধা পায়নি। জয়ের আনন্দে ক্ষুধাবোধ চলে গেছে। সামান্য খেয়ে নিলাম। আসলে খেলা দেখার সময় নিজের অজান্তেই নুডুলস, পিঠা, চিড়া ভাঁজা, বিস্কুট, মুড়ি মাখা খেয়ে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে। যাইহোক, বাংলাদেশের ৭০% মানুষ আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। তাঁরা মন থেকে আর্জেন্টিনার জয়ে আনন্দ পেয়েছে। আনন্দ প্রকাশ করেছে। যে পরিমান জার্সি, পতাকা বিক্রি হয়েছে, সেই পরিমান বই বিক্রি হয় না বইমেলাতে। ফুটবল খেলা বাঙ্গালীর প্রানের খেলা। একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলবে। তখন আমরা বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে খেলা দেখব। হাতে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা। সেদিনটা কত না আনন্দের একটা দিন হবে!! আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×