
বৃষ্টি তো আর সারা বছর হয় না। বর্ষাকালে হয়।
বর্ষাকাল ছাড়াও মাঝে মাঝে দুই একবার হয়। আবহাওয়া বদলে গেছে। এখন ঋতুর হিসাব মেনে বৃষ্টি হয় না। যাইহোক, বৃষ্টি আমার ভালো লাগে। ঝুম বৃষ্টি হলে আমি ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি। এই অভ্যাস আমার ছোটবেলা থেকেই। এমনকি রাস্তায় থাকলেও আমি ইচ্ছা করে বৃষ্টিতে ভিজি। এজন্য মা অনেক চিল্লাচিল্লি করেছে। এখন চিল্লাচিল্লি করে সুরভি। চিল্লাচিল্লি থেকে যেন এই জীবনে আর মুক্তি নেই। ভিজে ভিজে শহরের রাস্তায় এক গলি থেকে আরেক গলি হেঁটে বেড়াই। এটা অনেক বড় একটা আনন্দ। ঢাকা শহরের সমস্যা হলো- সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যায়। লেগে যায় জ্যাম। কঠিন জ্যাম।
আজ থেকে দশ বা বিশ, ত্রিশ বছর আগে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে যেতো আজও পানি জমে যায়। অথচ কত দল ক্ষমতায় এলো, গেলো। তাদের কত বড় বড় কথা। দেশ নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে। সব ফাঁকা বুলি। মিথ্যা। কোনো সরকারই আজ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা বন্ধ করতে পারেনি। যেমন পারেনি ফুটপাত থেকে হকার মুক্ত করতে। পারেনি সরকারী লোকজনের ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে। সে যাক গে, বৃষ্টি হলে দরিদ্র মানুষদের ভারী বিপদ। বিশেষ করে যারা রাস্তায় ঘুমায়। রাস্তায় ব্যবসা করে। পথচারীরাও বিরক্ত বোধ করে। ভিক্ষুকদের আয় রোজগার বন্ধ। অবশ্য আজকাল কেউ কারো কথা ভাবে না। নিজে ভালো থাকলেই হলো। এরকমই এক বৃষ্টির দিনে আমি আর সুরভি রিকশা করে সংসদ ভবনের কাছে ভিজেছিলাম। রিকশার হুড ছিলো, প্লাস্টিকের পর্দা ছিলো। তবু দুজনে ভিজে একাকার অবস্থা। সেদিন আমাদের বৃক্ষমেলাতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো।
বৃষ্টি হলে আমি সুরভিকে বলি, আজ খিচুড়ি রান্না করো।
মোটা করে বেগুন ভাজো। ফ্রিজে ইলিশ মছ থাকলো ভাজো। গরুর মাংস রান্না করো। বৃষ্টির সাথে খিচুড়ির কি সম্পর্ক আমি জানি না, কিন্তু বৃষ্টি হলেই খিচুড়ির কথা মনে পড়ে। দীর্ঘদিন একসাথে থাকার কারনে সুরভি আমার পছন্দ অপছন্দ সব জেনে গেছে, বুঝে গেছে। এখন তাকে আর কিছু বলতে হয় না। বৃষ্টি দেখলেই সুরভি খিচুড়ি বসিয়ে দেয়। ছোটবেলায় আমি বহুবার স্কুল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসায় ফিরেছি। আর মায়ের বকুনি খেয়েছি। বড় হয়ে অনেকবার অফিস থেকে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসায় ফিরেছি। আমার সহজে অসুখ বিসুখ হয় না। অসুখ হয়ে কোনোদিন আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়নি। বছরে একবারও আমাকে হাসপাতালে যেতে হয় না। আমার ভাইয়ের মাথায় একফোটা বৃষ্টির পানি পড়লে সাথে সাথে ঠান্ডা লেগে যাবে। জ্বর এসে যাবে। আমার এরকম সমস্যা নেই।
অনেক বছর আগে একবার সিলেট গিয়েছিলাম।
আমরা সাত জন বন্ধু। তখন কলেজে পড়ি। রেলস্টেশন থেকে নেমেই দেখি আকাশ ভরা মেঘ। চারপাশ কালো হয়ে গেছে। শীতল হাওয়া বইছে। তখন এমন একটা বয়স যা দেখি তা-ই ভালো লাগে। আনন্দ লাগে। অকারনেই হাসি, অকারনেই বিষন্ন হই। আমরা ক্বীন ব্রীজ পাড় হতেই ঝুম ঝুম করে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। রাস্তার পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো, আমরা সেখানে আশ্রয় নিলাম। চা নাস্তা খাওয়া শেষ, কিন্তু বৃষ্টি আর থামে না। আমরা দোতলায় বসে বন্ধুরা গল্প করছি আর বারান্দা থেকে বৃষ্টি দেখছি। সেই বৃষ্টি থামলো দুপুর তিনটায়। আমরা যাবো মৌলবিবাজার। সেখানে আমাদের এক বন্ধুর বোনের বিয়ে। আমাদের জন্য ডাকবাংলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কত না আনন্দ করেছিলাম। মজা করেছিলাম। কিন্তু এখন জানি না আমার সেই বন্ধুরা কোথায়। ফেসবুকেও তাঁরা নেই।
বৃষ্টি এলে আমাদের দেশের মানুষের মন কিছুটা নরম হয়ে যায়।
অতি দরিদ্র একজন রিকশাচালক পর্যন্ত একটা বেনসন সিগারেট খেতে কার্পন্য করে না। আর সিগারেটের সাথে চা তো অবশ্যই। মেয়েরা বৃষ্টি দেখলেই উতলা হয়ে যায়। জানালার গ্রীল দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি স্পর্শ করবে। বৃষ্টির পানি গালে ছোঁয়াবে। এরকমই এক বৃষ্টির দিনে সাহস করে আমি সুরভিদের বাসায় চলে যাই। সুরভি আমাকে দেখে ভীষন অবাক! তখন বাসায় কেউ ছিলো না। সুরভি বলল, আমি মাত্রই রান্না শেষ করলাম তুমি খেয়ে যাও। টেবিলে খাবার দিলো। আমি খেতে শুরু করলাম। রান্না খুব ভালো হয়েছে। এমন সময় সুরভির ভাই এসে উপস্থিত! সে আবার ভীষণ রাগী মানুষ। আমি বললাম, ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম রাজীব। তিনি বললেন, আগে খাওয়া শেষ করো। বলেই তিনি পাশের ঘরে চলে গেলেন। আমি সুরভিকে বললাম, দরজা খুলে রাখো। ঝেড়ে একটা দৌড় যেন দিতে পারি। সুরভি বলল, আমার ভাই রাগী হলেও ভালো মানুষ।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



