somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বের লিংক
দ্বিতীয় পর্ব

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তেজী ও জেদী লোক ছিলেন।
শত বাঁধা বিপত্তির পরেও তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে বিধবা বিবাহের আইন পাশ করিয়ে আনলেন। নিজ খরচায় অসংখ্য বিধবাদের বিয়ে দিলেন। বিধবাদের বিয়ে দিতে গিয়ে তিনি অনুভব করলেন, মেয়েদের লেখাপড়া শেখাটা ভীষন জরুরী। আবার ইংরেজদের কাছে গেলেন নারী শিক্ষার জন্য স্কুল করবেন। ইংরেজরা বললেন, স্কুল করা তো খুব ভালো কথা। তুমি স্কুল করো। খরচ আমরতা দেবো। ঈশ্বর চন্দ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে লাগলেন। স্কুলের কথা বলতেই অনেকেই আগ্রহ নিয়ে নিজের জমি দান করে দিলেন। কিন্তু সেই সময় মতো করা হতো নারীদের শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। নারীর কর্ম দুই জায়গায় রান্নাঘর আর আতুর ঘর।

বিদ্যাসাগর ৪৬ টা স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন।
এই ৪৬ টা স্কুলের খরচ বছরে প্রায় নয় শ' টাকা। ইংরেজরা তখন ঈশ্বর চন্দ্র কে বলল, এবার থামো। এত স্কুলের খরচ আমরা দিতে পারবো না। বিদ্যাসাগর বললেন, আপনারা খরচ না দিলেও আমি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা বন্ধ করবো না। ভারতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য স্কুল করতেই হবে। ঠিক এই সময় অনেক জমিদার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁরা জমি দান করলেন, নগদ অর্থ দান করলেন। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও মেয়েরা আসতে শুরু করেছে স্কুলে। মেয়েদের জন্য সহজ করে বই লিখতে শুরু করলেন বিদ্যাসাগর। সেই বই নিজেই ছাপালেন। বই ছাপিয়ে, লেখা অনুবাদ করে এবং জমিদার পুত্রদের পড়িয়ে তার ইনকামও কম নয়।

ইশ্বর চন্দ্র অনেক করেছেন।
বিধবা বিবাহ, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা, স্কুল করা, অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করা, অসুস্থকে চিকিৎসা করা কিন্তু তিনি ইংরেজদের অন্যায় কর্ম কান্ড নিয়ে কিছু বলেন নি। নীলকর সাহেবেরা সীমাহীন অত্যাচার করে সাধারন কৃষকদের উপর। সেদিকে ঈশ্বর চন্দ্রের কোনো নজর ছিলো না। ঈশ্বর চন্দ্র সমাজের শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, আধুনিক চিন্তার মানুষ ছিলেন। সমাজের কুসংস্কার দূর করতে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু ইংরেজদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খুলেন নি। তার মানে কি তিনি ইংরেজদের বশ্যতা মেনে নিয়েছিলেন? তার কি উচিৎ ছিলো না- ইংরেজদের বিরুদ্ধে লেখা। অথবা মহারানী ভিক্টোরিয়ার কাছে চিঠি দেওয়া- 'দুষ্ট ইংরেজদের থামান''। শিক্ষিত মানুষ হিসেবে ইংরেজরা তো বিদ্যাসাগরকে ভালোই খাতির করতো।

এক ইংরেজের শখ বিদ্যাসাগরের ছবি একে দিবেন।
একদিন বিদ্যাসাগর তাকে সময় দিলেন। ইংরেজ খুব সুন্দর ভাবে তাকে একে দিলেন। বিদ্যাসাগর নিজের ছবি দেখে মুগ্ধ। তারপর সে বলল, আমার বাবা মায়ের ছবি একে দিলে আমি ভীষন খুশি হতাম। ইংরেজ বলল ওকে। নিয়ে আসুন তাদের। সেই ইংরেজের দপ্তরে বাবা মাকে নিয়ে গেলেন বিদ্যাসাগর। ইংরেজ তার বাবা মায়ের ছবি একে দিলেন। সেই ছবি বিদ্যাসাগর তার লাইব্রেরীর দেয়ালে সাজিয়ে রাখলেন। লাইব্রেরী ভরতি বই। পছন্দের বই গুলো বিদ্যাসাগর চামড়া দিয়ে বাঁধিয়ে রাখতেন। অনেক লোক বিদ্যাসাগরের সাথে প্রতিদিন দেখা করতে আসে। এই লাব্রেরীতেই বিদ্যাসাগর সবার সাথে দেখা করেন। বিদ্যাসাগরের সাথে যত লোক দেখা করতে আসে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সাহায্য প্রার্থী। কেউ সাহায্য চাইতে এসে খালি হাতে ফিরে যায়নি। মানুষের দুঃখ কষ্ট বিদ্যাসাগর সহ্য করতে পারতেন না। যারা বয়সের বাড়ে নুয়ে পড়েছেন, তাদের প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তা করতেন।

বিদ্যাসাগরের অনেক দিনের ইচ্ছা-
সে রামায়ন সহজ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করবেন। এটা হবে অনেক বড় একটা কাজ। এই কাজ শেষ করতে করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। রামায়নে হাত দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না। নতুন স্কুল তৈরি, স্কুলের জন্য শিক্ষক নিয়োগ, গ্রামে গ্রামে গিয়ে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসা, বিধবাদের বিয়ে দিলে জাত যায় না, লোকদের বুঝানো। সচেতন করা। ছাত্র পড়ানো, মেয়েদের জন্য বই লেখা, ছাপাখানা এছাড়া নানান রকম সামাজিক অনুষ্ঠানে তাকে যেতে হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করা হয়। কিছুদিন আগে মধু সূদন দত্ত নামে এক কবিকে সম্মান জানানো হলো। তাকে করা হয়েছিলো বিশেষ অতিথি। অথচ তিনি ব্যস্ততার কারনে যেতে পারেন নি অনুষ্ঠানে। কিন্তু তিনি মধুসুদনের মেঘনাদ বদ কাব্য পড়েছেন। ছেলেটা দারুন লিখেছে। এরাই বাঙ্গালা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দীনবন্ধু নামে এক ছোকরা 'নীলদর্পন' নাটক লিখে তো রীতিমতোন হইচই ফেলে দিয়েছে। মধুসূদন আবার নীলদর্পন ইংরেজিতে অনুবাদ করছে ছদ্মনামে। বিদ্যাসাগর ইংরেজি অনুবাদ পড়েছেন। এবং তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। চিঠি লিখে তিনি তাদের অভিনন্দন জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×