
সরকারী তৃতীয় শ্রেনীর চাকরি ছেড়ে দিলো সুলেমান।
শহরে এসে বড় দোতলা বাসা ভাড়া করলো। সরকারী চাকরি করে অল্প কিছু অর্থ জমিয়েছে। এই টাকা দিয়ে সারাজীবন চলবে না। তাই সে নতুন পেশা গ্রহণ করলো। বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে দিলো সাইনবোর্ড। তাতে ইংরেজি ও বাংলায় লেখাঃ
সু খবর এবং অপূর্ব সুযোগ! হিমালয়ের সন্ন্যাসী থেকে প্রাপ্ত অলৌকিক ওষুধ! ভূত-প্রেত, স্বপ্নদোষ, পরকীয়া, যৌন সমস্যা, জমি সংক্রান্ত সমস্যা, পাওনা টাকা আদায়, অবাধ্য স্ত্রী, বানমারা, হাত দেখে ভবিষ্যৎ বলা, নাস্তিক কে আস্তিক করা, বশীকরণ, ভয়, ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করি। এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে হাতে ফল না পাইলে মুল্য ফেরত। সাক্ষাতের সময় সকাল নয়টা থেকে, দুপুর একটা পর্যন্ত। প্রোঃ সুলেমান শেখ।
লোকজন সাইনবোর্ড দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে।
কোনো খদ্দের আসে না। কিন্তু সুলেমান জানে শহরে ছাগলের অভাব নেই। নির্বোধের অভাব নেই। কুসংস্কার বিশ্বাসী মানুষের অভাব নেই। তারা আসবেই। দেরী হোক, যায়নি সময়। সুলেমান কোট প্যান্ট টাই পরে অপেক্ষা করে। সামনে থাকা চেয়ারে পা তুলে সিগারেট টানে। ছাগলের দল আসবেই। ভূত, প্রেত, জ্বীন, পরী বিশ্বাসী লোকের অভাব নেই। সমাজের বেশির ভাগ মানুষই রুপকথা বিশ্বাস করতে পছন্দ করে।
সুলেমানের প্রথম খরিদ্দার এলো। সে একজন সাংবাদিক এবং অনলাইনে ব্যবসা করে ধনী হয়েছে। সে কেরানীগঞ্জে একটা বাড়ি কিনেছে। সে বাড়িতে ভূত আছে। সাংবাদিক সাহেব নিজের চোখে ভূত দেখেছেন। সুলেমান শেখ সাত দিনের মধ্যে বাড়ি থেকে ভূত তাড়িয়ে দিলো। সাংবাদিক সাহেব খুব খুশি। এতই খুশি যে সুলেমানকে নিয়ে একটা নিউজ লিখে ফেলল। এরপর সুলেমানের বেশ নাম ডাক হয়ে গেলো। খরিদ্দার আসতে শুরু করলো বর্ষাকালের বৃষ্টির মতো।
সুলেমান তার কাস্টমারদের সাথে নানান রকম রসিকতা করে। রাজশাহী থেকে এক এমপি এলো। তার ভাগ্নের ভয় পেয়ে দাত কপাটি লেগে গেছে। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি। ভাগ্নে না খেয়ে আছে দুদিন ধরে। ভাগ্নে রাতে ছাদে গিয়েছিলো কি দেখে যেন ভয় পেয়ে দাত কপাটি লেগে গেছে। সব শুনে সুলেমান বলল, এটা কোনো সমস্যাই না। পাচ মিনিটের মধ্যে ঠিক করে দিচ্ছি। এই কথা শুনে এমপি সাহেব তো অবাক! ডাক্তার পারলো না। সুলেমান ভাগ্নেকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে কুৎসিত একটা গালি দিয়ে, কসিয়ে দুই থাপ্পড় দিলো। দাত কপাটি খুলে গেলো। এমপি সাহেব সুলেমানের কেরামতি দেখে মুগ্ধ! এমপি সাহেব খুশি হয়ে লাখ টাকা দিয়ে দিলেন।
এক যুবতী মেয়েকে খারাপ জ্বীন ধরেছে। সেই মেয়ে পুরুষের গলায় কথা বলে। শরীরে তার অনেক শক্তি। জ্বীন যতক্ষণ তার শরীরে থাকে ততক্ষণ কেউ সামনে এলেই তাকে মারতে যায়। সুলেমান মসজিদের ইমাম সাহেবদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। এই ইমামের নিজের মসজিদ আছে, মাদ্রাসা আছে, এতিমখানা আছে। সুলেমান বলল, হুজুর আমি দোয়া করে দিলাম। দূর থেকেই ফু দিয়ে দিলাম। খারাপ জ্বীন সাত দিনের মধ্যে পালিয়ে যাবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দেন। হুজুর বলল, তাবিজ দিবেন না? সুলেমান বলল, আমার ফুতেই কাজ অলরেডি হয়ে গেছে। ফু'য়ে কাজ না হলে তাবিজ দিতাম।
এক ধনী মহিলা এসেছেন সুলেমানের কাছে। মহিলা বললেন, তার মেয়ে ধর্মীয় নিয়ম কানুন মানে না। পার্লারে যায়, পার্টিতে যায়, বন্ধুদের নিয়ে জন্মদিন পালন করে, ইংরেজি সিনেমা দেখে, ছেলে বন্ধুদের সাথে মিশে, থিয়েটার করে, গান গায়, লাইব্রেরীতে সময় কাটায়, হিজাব বা বোরখা পড়ে না। মেয়ে বলে, মা আমি প্লেন চালাবো। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবো। মহিলা কাদতে কাদতে বলল, আমার খুব শখ ছিলো মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়াবো। কিন্তু মেয়ে ভরতি হলো ইংরেজি স্কুলে। অই স্কুলে ভরতি হয়েই মেয়ে বেলাইনে গেলো। সুলেমান সাহেব আমার মেয়েকে ধর্মীয় লাইনে এনে দেন। টাকা কোনো সমস্যা না।
সুলেমান মাত্র সাত দিনের মধ্যে মেয়েটাকে ধার্মিক বানিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মেয়েটা এখন ঘরের মধ্যেও হিজাব পড়ে থাকে। বাইরে গেলে বোরখা পড়ে। অনলাইনে আরবী শিখে। কবরের আজাব থেকে বাচার জন্য সূরা মুলক পড়ে। নানান রকম ধর্মীয় বই পড়ে। হাদীসের বই পড়ে। সারাদিন দোয়াদরুদ পড়তেই থাকে। মেয়েটা এখন জানে ইহকাল কিছুই না। পরকালটাই আসল। হাশরের ময়দানে আরবীতে প্রশ্ন করা হবে, তাই সে মন দিয়ে আরবী ভাষা শিখছে। নামাজে বসে চোখের পানি ফেলে। মধু খায়, কালিজিরা খায়। অসুস্থ হলে হাদীস মোতাবেক নিজের চিকিৎসা করে। মেয়েটা বুঝে গেছে কোরআন হাদীসের বাইরে যাওয়া যাবে না। বাইরে গেলেই দোজকে যেতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



