
আজ ফারাজার জন্মদিন।
সে দুই বছর পার করে এখন তিনে পা রাখলো। আজ বছরের শেষ দিন। আগামীকাল নতুন বছর শুরু হবে। আমার মনে আছে, ৩০ তারিখ রাতে সুরভি বলল, এখন হাসপাতালে যেতে হবে। ভাবী বললেন, রাতে যেতে হবে না। সকালে গেলেই হবে। তাই রাতে আর হাসপাতালে যাইনি। গেলাম ভোরবেলা। ৩১ ডিসেম্বর। তখন দেশে করোনা। সকাল ৮ টায় কন্যার জন্ম হলো। নার্স দৌড়ে আমার কাছে কন্যাকে নিয়ে এলো। আমি কন্যাকে দেখলাম। অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছিলো। নরমাল ডেলিভারী। দুপুর তিনটায় ডাক্তার বললেন, আপনারা বাসায় চলে যান। কোনো ভয় নেই, কোনো সমস্যা নেই। সুরভি ও কন্যাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।

বড় ভাই কন্যার নাম রাখলেন-
ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)। আরবী নাম। কন্যার জন্মের ২১ দিন আগে আব্বা মারা গেলো করোনায়। আব্বা আমার মেয়েকে কোলে নিতে পারলো না। এই দুঃখটা আমার আমৃত্যু থাকবে। কন্যাকে পেয়ে আমি আব্বাকে কিছুটা ভুলে গেলাম। বলা যায় আব্বার মৃত্যুর শোকটা ফারাজা কমিয়ে দিলো। এরপর ফারাজা আমার দৈনিক জীবনযাপনের স্টাইল পুরো বদলে দিলো। দীর্ঘদিন অভ্যাস গুলো কন্যার দিকে চেয়ে সব বদলে ফেললাম। আমার কন্যাই এখন আমার পৃথিবী। একটু একটু করে কন্যা বড় হচ্ছে আমার চোখের সামনে। এটা অন্যরকম একটা আনন্দ। অন্যরকম একটা অনুভূতি। এখন তো ফারাজা প্রায় সব কথাই বলতে পারে।

গতকাল একটা ক্লাবে কন্যার জন্মদিন পালন করলাম।
এমন দিনে কন্যার জন্ম হয়েছে। থার্স্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে পুলিশ সব কিছু তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়। চায়নিজ রেস্টুরেন্টও থাকে বন্ধ। এজন্য জন্মদিন করতে হয় বাসার মধ্যে। অথবা একদিন দিন। গেস্ট আসবে কি করে? পুলিশ রাস্তা দেয় বন্ধ করে। এজন্য ৩০ তারিখেই কন্যার জন্মদিন পালন করলাম। অবশ্য আজ বাসায় একটা ছোট অনূষ্ঠান হবে। অল্প কিছু আত্মীয়স্বজন আসবেন। আবার কেক কাটা হবে। আমার কন্যা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। কেক কাটতেও তার ব্যাপক আগ্রহ। তার পছন্দ অপছন্দ তৈরি হয়ে গেছে। কন্যার প্রিয় ফল হচ্ছে আপেল। রাতে ঘুমানোর আগে শেষ কথা হচ্ছে- আপেল খাবো। ঘুম থেকে উঠেও সে আপেল খাবে। এজন্য ফ্রিজে সব সময় আমি আপেল রাখি।

আমি চাই আমার কন্যা বেঁচে থাকুক, ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে সুরভি মেয়ের জন্য জামা জুতো কিনে এনেছে। জুতো দুই সাইজ বড় হয়েছে। শেষে আমি কন্যাকে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে আরেকটা জুতো কিনলাম। জুতো পছন্দ করেছে মেয়ে নিজেই। সেই জুতোতে আবার লাল, নীল, সবুজ আলো জ্বলে। রাতে ভালো মন্দ খাওয়া হবে। এরপর থেকে আমি আর কন্যার জন্মদিন পালন করবো না। তবে এই দিনে একশো অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে পেট ভরে খাইয়ে দিবো। আমার কন্যার জন্য দোয়া করবেন। শুভ কামনা জানাবেন। আর আমি আপনাদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। নতুন বছরে উন্মোচিত হোক সম্ভাবনার দিগন্ত। এই প্রত্যাশায় সবার জন্য শুভ কামনা।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



