আমায় হাসাইলি রে -
অকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাই রে!
এই সমাজের মানুষের সমস্যা গুলো কি কি?
মানুষের সমস্যার শেষ নেই। একই পরিবারের সদস্য অথচ কেউ কারো সমস্যার কথা গুলো জানতে চায় না। মানুষ বলতে চায়। নিজের কথা উজার করে বলতে চায়। কিন্তু বলার মতো বিশস্ত মানুষ নেই। মনের কথা খুলে বলতে না পারার জন্য মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই সমাজের মানুষ গুলো হয়ে পড়েছে আত্মকেন্দ্রিক। সবাই শুধু নিজের সমস্যাকে বড় মনে করে, আর অন্যের সমস্যাকে তুচ্ছজ্ঞান করে। সকালবেলা সরকারী হাসপাতালে গেলে পাগল হবার মতো অবস্থা হয়। হাজার হাজার মানুষ। তাদের হাজার রকমের সমস্যা। দূরদুরান্ত থেকে তাঁরা ডাক্তার দেখাতে এসেছে। একবারে কাজ হয় না। প্রতিটা রোগীকে অনেকবার করে আসতে হয়। কোনো মানুষ ভাল নেই। সবারই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে।
সমাজে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা সেটা হলো- দারিদ্রতা।
বাংলাদেশ গরীব দেশ। দেশের বেশির ভাগ মানুষই গরীব। গরীব মানুষ সব যুগেই ছিলো, আছে এবং থাকবে। আজ থেকে একশ' বা দুইশ' বছর আগেও গরীব মানুষ ছিলো। আগামীতেও থাকবে। আরেক শ্রেণী আছে ধনী। সীমাহীন ধনী। সীমাহীন ধনী হতে হলে রাজনীতি করতে হয়, সরকারী প্রথম সারির চাকরী করতে হয় অথবা বংশগত ভাবে ধনী হতে হয়। বর্তমানে বংশগত ধনী কম। হুট করে ধনী হ্ওয়া লোকের সংখ্যা বেশী। ধনীদের দেখে গরীবেরা হায় আফসোস করে। ধনীরা গরীবদের কথা ভাবে না। বছরে এক দুইবার তাঁরা লোক দেখানো ধান খয়রাত করে। তাতে গরীবি কমে না। তবে লোক দেখানো দান দেখিয়ে তাঁরা তৃপ্তি পায়।
বাংলাদেশে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না-
যার কোনো প্রকার সমস্যা নেই। আমাদের পাশের বাসায় এক লোক আছে। মস্ত বড় চাকরী করেন। তার কোনো আর্থিক সমস্যা নেই। অথচ তিনি বারো মাস অসুস্থ থাকেন। ইনহিলার নিতে হয়। মাঝে মাঝে এমন হাপানীর টান উঠে, মনে হয় যেন লোকটা এখনই মরবে। একজন দূর্নীতিবাজ সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি করেছেন। তার টাকার অভাব নেই। কিন্তু সে ভাল নেই। তার সমস্যা দুইটা। সে কোনো খাবার খেয়ে স্বাদ পায় না। তার কাছে সব খাবার মাটি মাটি লাগে। আরেক সমস্যা হলো তার চিন্তা। যদি তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই দুই চিন্তায় তিনি অস্থির। রাতে বেচারা আরাম করে ঘুমাতেও পারেন না।
আমাদের এলাকায় এক মহিলা আছেন।
তার স্বামী সরকারী চাকরী করেন। প্রচুর টাকার মালিক। মহিলার শখ সোনার গহনার। স্বামী তাকে আসলেই সোনা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন। তার বাসায় কেউ গেলেই সে আলমারি খুলে সবাইকে গহনা দেখায়। এই মহিলা স্বামীর সাথে সৌদি গেলেন। হজ করলেন। হজ করে এসে বোরকা ধরলেন। হজ করার পর আর আগের মতো চলা যায় না। কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয়। এই নিয়ম নীতি মানতে গিয়ে মহিলার কপাল পুড়লো। সে তার গহনা কাউকে দেখাতে পারে না। সে বোরকা পড়ে বিয়ের অনূষ্ঠানে যায়। তার গা ভরতি থাকে গহনায়। অথচ কেউ তার গহনা দেখতে পায় না বোরকার কারনে। শেষমেশ মহিলা এক বুদ্ধি বের করলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলতে থাকেন গরম লাগে, গরম লাগে। তখন কোনো মহিলা হয়তো বলেন, আপা বোরকাটা খুলে ফেলুন। মহিলা বোরকা খুলে ফেলেন তখন সকলে তার গহনা দেখতে পায়।
আমার মায়ের সমস্যার শেষ নেই।
মার সমস্যা গুলো এরকম- আবীর তো এখনও বাসায় ফিরলো না। সন্ধ্যা সাত টা বেজে গেলো। ওর অফিস তো পাচটায় ছুটি হয়ে গেছে। মা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির। আবীর আমার ছোট ভাই। আমরা যে ভাই বাসায় ফিরতে দেরী করবো, মা চিন্তা করতে শুরু করে। একসময় তার প্রেসার বেড়ে যায়। মাথায় পানি ঢালতে হয়। বাসার গ্যাস বিল নিয়েও মার চিন্তার শেষ নেই। এই রাজীব গ্যাস বিল এখনও দিলি না? অথচ মাস শেষ হয় নাই। মাস শেষ হতে আরো দশ দিন বাকি আছে। রাতে মা ঘুমিয়ে আছে। হঠাত তার মনে হলো রাস্তার দরজায় তালা দেওয়া হয়নি। অথচ আমি নিজের হাতে তালা মেরেছি। রাতে ঘুম থেকে উঠে মা আমাকে ফোন দিবে। বলবে, ছাদের দরজাটা মনে হয় খোলা। আমি ছয় তলায় থাকি, ছাদের দরজা খোলা না। তবু মা বারবার অনুরোধ করবে একবার ছাদে গিয়ে দেখে আয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০২