গতকাল আমার মনটা অত্যাধিক খারাপ ছিলো।
আমাদের এলাকার নিয়ম হচ্ছে- প্রতিদিন সকালে ময়লার গাড়ি আসে। তারপর ওরা প্রতিটা বাসা থেকে ময়লা নিয়ে যায়। আমি ওদের বলেছি আমার বাসা থেকে ময়লা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি নিচে নেমে গিয়ে ময়লা গাড়িতে ফেলে দিয়ে আসবো। ছেলে গুলো প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে ছয় তলা, সাত তলায় উঠে ময়লা আনতে যায়। ওদের অবশ্যই কষ্ট হয়। আমি তো প্রতিদিন সকালে নিচে নামি। তাই ময়লা সাথে করে নিয়ে নামলে সমস্যা কি? এজন্য আমার ঘরের ময়লা আমি নিজে গিয়ে ফেলে আসি। নিজের ঘরের ময়লা ফেললে কি আমার মান সম্মান চলে যাবে! বাবুগিরি বা ফুটানি করা আমার স্বভাব নয়।
ময়লার গাড়িতে একটা মৃত শিশু।
যে ছেলে গুলো প্রতিদিন ময়লা নেয় ওদের কে আমি চিনি। মাঝে মাঝে ওদের আমি চা নাস্তা খেতে টাকা দেই। ময়লা গাড়িতে ফেলে দিলাম। তখন ছেলেটা বলল, ভাই দেখেন। আমি দেখলাম পলিথিনে মোড়া একটা প্যাকেট। ভেতরে একটা শিশু। কয়েক ঘন্টা আগে হয়তো জন্ম নিয়েছে। এই শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছে। কারন শিশুর মুখে টিস্যু গোঁজা। সম্ভবত কান্নার আওয়াজ যেন কেউ শুনতে না পায় তাই মুখে টিস্যু খুঁজে দিয়েছে। ফুটফুটে একটা শিশু। কি সুন্দর! মায়াময় পবিত্র একটা মুখ! গায়ের রঙ পরিস্কার। মৃত শিশুটিকে দেখে আমার ভীষন কষ্ট হলো। আমার চোখে পানি চলে এলো। কার শিশু এটা? কেন শিশুটিকে হত্যা করা হলো? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। এরকম দৃশ্য না দেখাই আমার জন্য ভাল ছিলো।
দেখতে দেখতে চারিদিকে অনেক মানুষ জমে গেলো।
নানান মানুষ নানান রকম মন্তব্য করতে শুরু করলো। আমি মন খারাপ করে বাসায় চলে এলাম। সকালে নাস্তা খেলাম না। দুপুরেও ভাত খেলাম না। বারবার শিশুটির মুখটা চোখে ভেসে উঠছিলো। নিঃশ্বপাপ একটা শিশু। সে কি অন্যায় করেছিলো? এই শিশুর মা কে? পিতা কে? একটা শিশুর জন্য হাজার হাজার দম্পতি কত আকুতি মিনতি করছে। বছরের পর বছর ধরে ডাক্তার হাসপাতাল করে বেড়াচ্ছে। এই শিশুটির যদি হাসপাতালে জন্ম হতো, তাহলে শিশুটি বেঁচে থাকতো। শিশুটিকে না মেরে কাউকে দিয়ে দিলেও তো হতো। আমাকে দিয়ে দিলেও এই শিশুটিকে আমি লালনপালন করতাম। হ্যাঁ আমি দরিদ্র মানুষ। কিন্তু শিশুটিকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে পারতাম। ময়লার গাড়িতে একটা শিশুকে ফেলা দেওয়া, এর চেয়ে গর্হিত কাজ আর কি হতে পারে?
আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না।
অথচ সারাটা দিন না খেয়ে পার করে দিলাম। আমার কোনো ক্ষুধাবোধ হলো না। আমার আর ইচ্ছা করে নাই শিশুটি সম্পর্কে খোজ খবর নিই। পুলিশ এসে কি করলো বা কার সন্তান ইত্যাদি আর খোজ নিই নি। পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে শুধু নবজাতক মৃত শিশুটির গল্প। ঈশ্বরের ইচ্ছায় কি শিশুটির এমন মৃত্যু হলো? জন্ম মৃত্যু তো শুনেছি ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়। এই কি ঈশ্বরের মানসিকতা? এই কি ইশ্বরের ক্ষমতা? এত এত হতাশা, দুঃখ আর বঞ্চনা ভরা কেন এই পৃথিবী? আমার নিজের ছোট কন্যা ফারাজা। চেষ্টা করছি তাকে স্বচ্ছ পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে। একজন মানবিক ও হৃদয়বান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। আমি যে ভুল গুলো করেছি, আমার কন্যাকে সে ভুল গুলো করতে দিবো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৩