আমার কোনো প্রিয় স্যার ম্যাডাম নাই।
এখন বড় হয়ে বুঝতে পারি তাদের পড়ানোর নিয়মটা সুন্দর ছিলো না। নাকি সুন্দর ছিলো, আমারই বুঝার ভুল। তাদের জন্যই হয়তো আমি ভাল ছাত্র হয়ে উঠতে পারিনি। স্কুল জীবনে আমাকে বেশির ভাগ সময় ক্লাশের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো। স্যার ম্যাডাম আমাকে শাস্তি দিতে ভালোবাসতেন। টানা চল্লিশ মিনিট ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আশে পাশের ক্লাশ থেকে ছেলেমেয়েরা আমাকে উঁকি দিয়ে দেখতো।
আমাদের ইতিহাসের এক শিক্ষক শুধু বলতেন-
'বাবারা লাইনে থাকিস'। আমাকে ক্লাশের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি এসে বলতেন- তুমি লাইনে নেই। লাইনে থাকলে আজ তোমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। আমি মনে মনে বলতাম, টাক্কু টাক্কু। স্যারের মাথায় চুল ছিলো না। ভাগ্যের কি নিমর্ম পরিহাস। এখন আমার ছোট কন্যা- আমাকে হুটহাঁট বলে উঠে তুমি টাক্কু। তুমি টাক্কু। মেয়েকে বলি- আমার মাথায় তো চুল আছে। তুমি আমাকে টাক্কু টাক্কু বলছো কেন?
একদিন এক ম্যাডাম আমাকে খুব মারলেন।
বেত দিয়ে মারতে মারতে আমার গায়ে অসংখ্য দাগ বসিয়ে দিলেন। আল্লাহর কি বিচার দেখুন, ঐ দিনই ম্যাডাম রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেললেন। এক সপ্তাহ পর ম্যাডাম ক্লাসে এসে বললেন, আমি নাকি তাকে অভিশাপ দিয়েছি। আমি ছাত্র খারাপ ছিলাম না। সারা বছর লেখাপড়া না করলেও পরীক্ষার আগে তেড়েফুড়ে লেখাপড়া করে পাশ করে যেতাম। কমলাপুর এক ম্যাডামের বাসায় ইংরেজি পড়তে যেতাম। দারুন সুন্দরী ছিলেন ম্যাডাম। ম্যাডামকে ভাল লাগতো। ম্যাডাম নুডুলস রান্না করে খাওয়াতো। খুব মজা হতো। সেই ম্যাডামকে মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছা করে।
আমি চুল বড় রাখতে পছন্দ করতাম।
একবার এক ম্যাডাম স্কুলে আমার চুল কেটে দিয়েছিলেন। বুঝুন অবস্থা। খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম। আমাদের আবার ছেলেমেয়ে একসাথে ক্লাশ হতো। মেয়েদের সামনে যেন স্যার ম্যাডাম গুলো আমাকে অপমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। অথচ আমি ছিলাম পুরো স্কুলে হিরো। স্মার্ট। আধুনিক এবং মেয়েরা আমার জন্য পাগল পাগল ছিলো। কত মেয়ে যে আমাকে চিঠি দিয়েছে। চকলেট, মিমি দিয়েছে তার হিসাব নেই। সেই সব মেয়ে গুলো এখন কোথায় কে জানে! এদের মধ্যে একটা মেয়ে আছে মিশু নাম। দেখতে বেশ লাগতো। এখন দেখতে কেমন হয়েছে কে জানে!
স্কুলের সেই সব স্যার ম্যাডাম এখনও কেউ কেউ বেঁচে আছেন।
কেউ কেউ মরে গেছেন। মাঝে মাঝে দুই একজন স্যার ম্যাডামের সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছে। তাঁরা আমাকে চিনতে পারেন নি। আমি ঠিকই চিনেছি। আমি সালাম দেই নি। কারন তাদের উপর আমার অনেক রাগ জমে আছে। অনেক কে দেখি স্কুল জীবনের শিক্ষকদের সাথে দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। এত আদিখ্যেতা আমার পছন্দ না। স্যার ম্যাডাম গুলো আমার জীবনটা প্রায় তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছিলো।
আমার রাগ বেশি। এই দুনিয়ায় আমি সবার উপরেই রেগে থাকি।
অবশ্য যার উপর রেগে থাকি, তাকে বুঝতে দেই না। রাগ প্রকাশ করি না। কিন্তু কিভাবে যেন সে ঠিকই বুঝে যায়। যাইহোক, আমাদের একজন ধর্ম শিক্ষিক ছিলেন। হুজুর মানুষ। চ্যাংড়া হুজুর। তাকে কেউ পাত্তা দিতো না। একমাত্র আমিই স্যারকে পাত্তা দিতাম। এজন্য স্যার খুশি হয়ে আমাকে ১০/২০ নম্বর বেশি দিয়ে দিতেন। একজন অংক স্যার ছিলেন। তিনি বোর্ডে অংক করতেন, আরা বলতেন- বেশি বেগ পেতে হচ্ছে? তাহলে বিকেলে আমার বাসায় এসো। আমি ব্যাচে পড়াই। এই স্যার পরীক্ষার আগে প্রায় প্রশ্নই দিয়ে দিতেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৯