সুরভির সাথে জীবনে প্রথম যেদিন দেখা হলো-
আমি বললাম, 'বাল্মিকী' কে জানো?
সুরভি বলল না।
আমি বললাম, ভয়াবহ ডাকাত ছিলেন। একদিন সে ডাকাতি ছেড়ে দিলো। ভাল মানুষ হয়ে গেলো। এবং একটি মহাকাব্য রচনা করলো। মহাকাব্যের নাম- 'রামায়ন'। আমাদের নবীজি বা যিশুর জন্মের বহু বহু বছর আগে রামায়ন লেখা হয়েছিলো।
সুরভি বলল, আমায় এসব বলছো কেন? এসব শুনে আমি কি করবো?
আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম। কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বললাম, চোখে কাজল দিয়েছো! তোমাকে সুন্দর লাগছে।
সংসার জীবনে শান্তির জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনকেই 'ছাড়' দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
সংসারে যত 'ছাড়' দেওয়া যায় তত ভাল থাকা যায়। আর এই 'ছাড়' দেওয়া মানে নিজেকে ছোট করা নয় বরং মহানুভবতা দেখানো। মনে রাখতে হবে, রি দুনিয়া হৃদয়বান মানুষদের জন্য। একটা অচেনা অজানা মেয়েকে বিয়ে করলেন। তাকে আপনার বাড়ি নিয়ে এলেন। অথবা ধরে নিলাম দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করলেন। একটা মেয়ে নতুন একটা সংসারে আসে। শ্বশুর বাড়ির সবার সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লাগে। স্বামীগিরি ফলাতে যাবেন না কখনও। প্রভুত্ব দেখাবেন না। সে মানুষ। আপনার মতোই মানুষ।
স্ত্রীরা বেশি কিছু চায় না। তাঁরা চায় সময়।
তাঁরা চায় তার প্রতি তার স্বামী একটু মনোযোগ দিক। একটু কথা বলুক। তাকে একটু বুঝুক। রান্নার প্রশংসা করুক। শপিং করে দিক। বেড়াতে নিয়ে যাক। ব্যস এই তো। প্রতিটা সংসারে ঝগড়া হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটু বুদ্ধি করে চললে ঝগড়া এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করবেন। ছুটির দিনে তাকে নিয়ে বাইরে যাবেন। যে কোনো বিষয় নিয়ে তার সাথে আলাপ করবেন। স্বামী একা বা স্ত্রী একা দাম্পত্য জীবন সুন্দর করতে পারবে না। দুজনের সমান ভূমিকা রাখতে হবে। স্ত্রীকে শষ্যক্ষেত্র মনে করবেন না। জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরকায় মুড়িয়ে রাখবেন না।
জোর করে স্ত্রীর উপর কিছু চাপিয়ে দিবেন না।
সে আপনার স্ত্রী দাসী নয়। স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের পরিপূরক। বন্ধুর মতো স্ত্রীর সাথে মিশবেন। স্ত্রীর ভুল ত্রুটি গুলো আলাপ আলোচনা করে মীমাংসা করবেন। চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে না। স্ত্রী জাতি ভুল করবেই। তাদের আবেগ বেশি। কিন্তু ঝগড়া করা যাবে না। মনে রাখবেন নারী হচ্ছে ধরনী। নারীরা হচ্ছে স্বচ্ছ আনন্দ। স্বামীর যে বিষয় গুলো স্ত্রী পছন্দ করবে না সে বিষয় গুলো বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল। ঘরে শান্তি থাকলে সব শান্তি। স্বামী স্ত্রীর দুজনেরই ধর্মীয় গোঁড়ামি সম্পূর্ন বাদ দিতে হবে। ধার্মিকতা কোনো ভাল জিনিস নয়। দুজনকেই কুসংস্কার মুক্ত থাকতে হবে।
আমার নিজের কথা বলি- আমার স্ত্রীর সাথে আমার ঝগড়া হয় না।
আমাদের মধ্যে দারুন বুঝাপড়া। আমি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে স্ত্রীর জন্য দশ টাকার বাদাম কিনে নিয়ে যাই। বাদাম পেয়ে সে দারুন খুশি হয়। আমার কোনো সমস্যা নিয়ে তার সাথে আলাপ করি। কিন্তু আমি জানি এই সমস্যার সমাধান সে করতে পারবে না। কিন্তু সে খুশি হয়। সে বুঝে তাকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি। এতেই সে ভীষন খুশি। ছবিটা দেখুন। আমরা কত হাসিখুশি। এই হাসিখুশি এমনি এমনি এসে যায় নাই। এটা আমরা দুজন অর্জন করে নিয়েছি। স্ত্রী চাকরী করতে চাইলে করতে দিতে হবে। কোনো বাঁধা দেওয়া যাবে না। সমস্ত পুরুষকুলের মাথায় সেট হয়ে গেছে- স্ত্রী মানেই রান্নাঘর আর আতুর ঘর। এই চিন্তা ডিলিট করে দিতে হবে।
আমার স্ত্রী বলে, যদি আরেকটা জমন থেকে থাকে, সেই জনমেও আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে চাই।
অথচ আমার স্ত্রীর জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। যাইহোক, চেষ্টা করলে একটা সুখী ও আনন্দময় দাম্পত্য জীবন পার করে দেওয়া যায়। স্ত্রীর বাবা মা ভাই বোনকে ভালোবাসতে হবে। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। নিয়মিত খোজ খবর রাখতে হবে। বিপদে আপদে এগিয়ে যেতে হবে। একজন স্বামীর যা দায়িত্ব তা সঠিক ভাবে পালন করলেই সংসারে শান্তি বিরাজ করবে। দাম্পত্য জীবন সহজ ও সুন্দর হবে। ছোটবেলা থেকে আমি বহু স্বামী স্ত্রী কে ঝগড়া করতে দেখেছি। আমার বাবা মাকেও দেখেছি। অতি কুৎসিত সেই ঝগড়া। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ঝগড়া করবো না। নো নেভার।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:২৭