somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একটি প্রেম অথবা বিচ্ছেদের গল্প

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দৃশ্যটা আমি কখনও ভুলতে পারবো না!
নীলা বৃষ্টির মধ্যেই হেটে চলেছে। কফি হাউজের জানালা দিয়ে দেখলাম- বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে। পুরো পান্থপথে পানি জমে গেছে। আমি আর নীলা যখন কফি হাউজে বসলাম তখন ঝলমলে রোদ ছিলো! আমি সুযোগ খুজছি লোকোজনের আড়ালে কখন নীলার হাত ধরবো। সুযোগ পেলে একটা চুমু খাবো। কিন্তু হঠাত আকাশ কালো হতে শুরু করলো। ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিতে পড়তে শুরু করলো। এরকম পরিবেশে একটা সহজ সরল সুন্দর মেয়ে আমার পাশে। তার হাত ধরতে ইচ্ছা করবে না? তাকে চুমু খেতে ইচ্ছা করবে না? আরেহ ভাই আমি তো মানুষ। রক্ত মাংসের মানুষ। কিন্তু নীলা এই বৃষ্টির মধ্যে রাগ করে চলে গেলো কেন? আমার জায়গায় রবীন্দ্রনাথ থাকলেও চুমু খেতে চাইতো নিশ্চয়ই।

সুন্দর দুজন মিলে গল্প করছিলাম।
নীলা সাধারণত শাড়ি পড়ে না। কিন্তু যেদিন আমার সাথে দেখা করার কথা থাকে সেদিন সে শাড়ি পড়ে। নীলা জানে আমি নীলাকে শাড়িতে দেখতেই বেশি পছন্দ করি। শাড়িতে নীলাকে অপূর্ব দেখায়। একদম দেবী সরস্বতীর মতো। আমার ইচ্ছা করে সরস্বতী পূজোর সময় মাটির সরস্বতীকে সরিয়ে জীবন্ত নীলাকে বসিয়ে দেই। নীলাকে বললাম, দেখো সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! তোমাকে কি একটা চুমু খেতে পারি? নীলা বলল, না। এখনও সময় হয়নি। অর্থ্যাত নীলা হয়তো সুন্দর কোনো সময়ের অপেক্ষায় থাকতে বলল। সেই সময়টা কবে? নীলা বলল, চলো আমরা সমুদ্র থেকে ঘুরে আসি। নীলা কি চাচ্ছে সমুদ্রের পাড়ে বসে তাকে চুমু দেই। আমার আর তর সইছে না। পারলে রাতের ট্রেনে করে চলে যাই সমুদ্রে। তারপর জমবে মজা!

অথচ নীলা হুট করে উঠে চলে গেলো।
বাইরে বৃষ্টি! কেনে নীলা রেগে গেলো হঠাত? এখন সে সিনএনজি বা বাস পাবে না। বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরে গজব অবস্থা হয়। বাড়ি ফিরবে কি করে নীলা? কথা ছিলো আমি নীলাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো। সব সময়ই দেই। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম- নীলা শাড়ি হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে হেটে হেঁটে চলে যাচ্ছে। হাঁটার ভঙ্গি এক আকাশ বিষন্নতায় ভরা! বৃষ্টিতে সে অনেকখানি ভিজে গেছে। শাড়ি লেপটে আছে শরীরের সাথে। সাদা ব্লাউজ ভেদ করে ব্রা দেখা যাচ্ছে! এই দৃশ্যটা আমি কোনোদিন ভুলবো না। আমি বোকার মতো হা করে তাকিয়ে থাকলাম। নীলা পান্থপথের মোড়ে যেতেই একটা সাদা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে কেউ একজন নীলাকে তুলে নিলো। এই গাড়িটা কার? নিশ্চয়ই সুমন চৌধুরীর? সুমন ক্যাম্পাসে এই গাড়িটা নিয়েই মাঝে মাঝে আসতো।

তিন দিন পর ক্যাম্পাসে নীলার সাথে দেখা।
নীলা খুব সহজ ভাবে বলল, তোমার দুটা বই আছে আমার কাছে। আমি তোমার কাছে পাঠিয়ে দিবো। বলেই নীলা চলে গেলো। অর্থ্যাত সে আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। আমার খুব রাগ হলো। মনে মনে দুটা কুৎসিত গালি দিলাম নীলাকে। এরপর নীলার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। দেখা হয়নি। পেরিয়ে গেলো দীর্ঘ বারো বছর। আমি জেনেছি নীলার বিয়ে হয়ে গেছে। সে তার স্বামীর সাথে লন্ডনে থাকে। এবং সেই বিয়ে টিকেনি। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে চার বছর পর। নীলা এখন ঢাকাতেই থাকে। কাটাবন এজি অফিসে চাকরী করছে। আমিও বসে থাকিনি। বিয়ে করে ফেলেছি। আমার বউ খুবই ভাল মেয়ে। সে রবীন্দ্র সংগীর ভাল গায়। আমাদের দুটা ছেলেমেয়ে। বেশ সুখের সংসার আমার।

মিথ্যা বলব না, নীলার কথা আমার অসংখ্য বার মনে পড়েছে।
আমি যে মেয়েটাকে বিয়ে করি সেই মেয়েটার নামও নীলা। নীলা যখন রাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে- তখনও আমার নীলার কথা মনে পড়ে। আর মনে পড়ে বিশেষ করে সেই দৃশ্যটা! বৃষ্টির মধ্যে নীলার হেঁটে চলে যাওয়া। একটা সাদা গাড়িতে উঠা। এই জীবনে আর এই দৃশ্যটা থেকে মুক্তি পাবো না। দীর্ঘ বারো বছর পার হয়ে গেছে। নীলা একবারও আমার সাথে দেখা করেনি। আমাকে ফোন দেয়নি। আমিও দেখা করিনি। ফোন দেইনি। অথচ কথা ছিলো আমি নীলাকে বিয়ে করবো। আমাদের দুটা ছেলেমেয়ে হবে। ছেলের নাম রাখবো টাপুর আর মেয়ের নাম রাখবো টুপুর। হলো না। কিচ্ছু হলো না। এজন্য নীলাই দায়ী।

একদিন আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম।
কিচ্ছু ভাল লাগছিলো না। কি করবো? কোথায় যাবো জানি না। আমি চলে এলাম নিউমার্কেট এলাকায়। আকাশের অবস্থা ভাল না। মেঘ জমতে শুরু করেছে। অথচ আমি বাসায় ফিরে যাবার তাড়া অনুভব করছি না। ঠিক তখনই আমি নীলাকে দেখলাম। একদম আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আচমকা বুকে একটা পাথরের ধাক্কা লাগলো। সুন্দর একটা ছাপা শাড়ি পরা। চোখে কাজল। মাথা ভরতি চুল। কপালে টিপ। নীলার বয়স বাড়েনি। সেই আগের মতোই আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি! নীলাই প্রথম কথা বলল- কেমন আছো শাহেদ? শাহদ জামাল! আমার মনে পড়লো বারো বছর আগের কথা। সমুদ্র দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিলো। তারপর নীলা রাগ করে চলে গিয়েছিলো। এরপর সব সাদা। প্রতিটা পৃষ্ঠা সাদা। আর কিচ্ছু নেই।

আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।
বাইরে সমানে বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে! বললাম, নীলা সেদিন তুমি কেন রাগ করে হঠাত চলে গেলে? নীলা বলল- পুরনো কথা বাদ দাও। আমি বললাম, না। তুমি বলো। আমি শুনতে চাই। নীলা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল- সেদিন আমি বলেছিলাম- চলো আমরা সমুদ্রে বেড়াতে যাই। আর তুমি সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলো। একবারও আমায় মানা করলে না। অথচ তোমার বলা উচিৎ ছিলো- না এখন যাবো না। বিয়ের পর যাবো। আমি কি সস্তা মেয়ে? তুমি আমাকে সমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে আমাকে ভোগ করবে? এই জন্যই রাগ করে চলে গিয়েছিলাম। শাহেদ আমি বিশ্বাস করতাম তুমি অন্যদের মতোন না। তুমি আলাদা। অথচ আমি সমুদ্রের কথা বলতেই তোমার চোখে লোভ দেখেছিলাম। এই লোভ আমায় ভীষন কষ্ট দিয়েছে।

সেই বারো বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি! রাস্তায় পানি জমে গেছে। নীলা হেটে যাচ্ছে, হাটু পর্যন্ত শাড়ি উঁচু করে। সে অনেকখানি ভিজে গেছে। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। হ্যাঁ আমি লোভী। কেন আমি নীলাকে বিয়ের আগেই সমুদ্রে নিয়ে যেতে রাজী হয়েছিলাম। বিয়ের পর কি সমুদ্রে যাওয়া যেতো না? বিয়ের পর কি সমুদ্রে গিয়ে নীলার সাথে যা খুশি তা করা যেতো না। নীলা আমাকে ভালোবেসেছিলো, বিশ্বাস করেছিলো। অথচ আমি তাঁরা ভালোবাসার মর্যাদা রাখিনি। তার বিশ্বাসের দাম দেইনি। বরং সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম। আমি কি বোকা। এতদিন আমি নীলার উপর রেগে ছিলাম। নীলা না বললে, আমি আমার দোষটা আজও খুঁজে পেতাম না। নীলা ভাল থাকুক। সুস্থ থাকুক। আমি আমৃত্যু নীলাকে ভালোবেসে যাবো গোপনে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×