
হ্যালো ফারাজা,
এখন রাত বারোটা। এই মাত্র তুমি ঘুমোতে গেলে। যাওয়ার আগে আমাকে একটা চুমু দিয়ে গেলে। প্রতিদিনই তুমি ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমাকে একটা চুমু দিয়ে যাও। এবং তুমি জানো না আমি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তোমাকে একটা চুমু দেই। কয়েকদিন আগে হঠাত তোমার জ্বর এলো। টানা পাঁচ দিন তুমি জ্বরে ভূগলে। নাপা সিরাপ খাওয়ালে কিছু সময়ের জন্য জ্বর কমে। তারপর আবার জ্বর বাড়তে থাকে। পুরো শরীর প্রচুর গরম হয়ে যায়। রাত তিনটায় তোমার জ্বর এত বেশী বেড়ে যায়- তখন তোমার মাথায় পানি দিয়ে দেই। তোমার মা আর আমি সারারাত জেগে বসে ছিলাম। এবার তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিইনি। ডাক্তারের কাছে গেলেই নানান রকম টেস্ট ফেস্ট দেয়। এর আগে একবার তোমার জ্বর এলো। তিন দিনের দিন গেলাম ডাক্তারের কাছে, ডাক্তার তোমাকে অনেক গুলো টেস্ট দিলো। নার্স তোমাকে চেপে ধরে রক্ত নিলো। তুমি ব্যথায় চিৎকার দিয়েছো। তাই এবার আর ডাক্তারের কাছে যাইনি। কোনো রকম টেস্ট করতে হয়নি। তুমি সুস্থ হয়ে উঠেছো।
প্রিয় কন্যা আমার-
অনেকদিন পর এবার তুমি তোমার নানা বাড়ি গেলে। দুদিন থাকলে। আমি যাইনি। তুমি আমাকে ভীষন মিস করেছো। আমি তোমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছি। তোমার মাত্র দুই বছর দুই মাস হলেও, তুমি অন্যান্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা। তুমি অনেক কিছু বুঝ। যা এই বয়সে অনেক বাচ্চা বুঝে না। জানে না। তোমাকে কোনো একটা কথা বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝ। শোনো। মানো। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। সেদিন ছিলো ফ্রেরুয়ারীর ১৪ তারিখ। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তুমি এক দোকানের ভেতর যেতে চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে গেলাম। সেই দোকানে এক পুতুল দেখে তোমার খুব পছন্দ হয়ে গেলো। তুমি পুতুলটা নিতে চাইলে। আমার কাছে টাকা ছিলো না। আমি তোমাকে বুঝিয়ে বললাম। তুমি আমার কথা মানলে। এবং পুতুলটা রেখে দিলে। কান্না করো নাই। তোমার জায়গায় অন্য বাচ্চা হলে কান্নাকাটি করতো। কিন্তু তুমি আমার কথাটা হাসি মুখে মেনে নিলে।
ফারাজা তাবাসসুম-
ইদানিং আমার সময় খারাপ যাচ্ছে। শরীরটাও ভালো নেই। চোখে সমস্যা। রাতে ঘুম আসে না। এলোমেলো স্বপ্ন দেখি। বেশির ভাগ স্বপ্নই ভয়ঙ্কর। তোমাকে দুই একটা স্বপ্নের কথা বলি। তোমাকে যা বলি, সে কথা তোমার মাকেও বলি না। যাইহোক, স্বপ্নে দেখি আমাকে একটা ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়েছে। ঘর অনেকখানি অন্ধকার। সেই ঘরে কে বা কারা অনেক গুলো বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দিয়েছে। বাস্তব জীবনে আমি সাপ খুব ভয় পাই। এরপর স্বপ্নে দেখি, একদল লোক ছুরি, চাকু আর রামদা হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করছে। তাঁরা আমাকে ধরতে পারলেই মেরে ফেলবে। এরকম ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন দেখি। অনেকদিন হয়ে গেলো সুন্দর স্বপ্ন দেখি না। মূলত আব্বা মারা যাওয়ার পর এরকম স্বপ্ন বেশী দেখছি। তোমার জন্মের সতের দিন আগে আব্বা মারা যায় করোনাতে। আব্বা হঠাত মরে যাওয়াতে আমার জীবন অনেকখানি বদলে গেলো। কমপক্ষে আরো দশ বছর আব্বার বেঁচে থাকা দরকার ছিলো। আব্বাকে তুমি দেখলে না, আব্বাও তোমাকে দেখলে না। ভীষন কষ্ট হয় আমার।
প্রিয় কন্যা আমার-
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম পুতিন। গত ২২ বছর ধরে পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। সাহসী লোক। আর আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন- আব্দুল হামিদ সাহেব। খুব রসিক মানুষ। হঠাত কেন তোমাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কথা বলতে গেলাম জানি না। যাইহোক, আমি বেঁচে থাকি আর না থাকি তুমি নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলবে। তোমাকে হতে হবে ইউনিক। তোমাকে হতে হবে সবার থেকে আলাদা। নিজেকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যেন এলেবেলে লোক তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে না পারে। তোমাকে চলার পথে অনেকে বাঁধা দেবে। ভয়ভীতি দেখাবে। তোমার মনোবল ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করবে। অন্যের কথা শুনে তুমি থেমে যেও না। সব সময় মনে রেখো বাংলাদেশের মানুষ গুলো ভালো না। বেশির ভাগই ইতর শ্রেনীর। ঘর থেকে বাইরে পা দিলেই দেখবে চারিদিকে অসংখ্য ইতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তোমার যাকে ভালো মনে হবে, আসলে সে-ও ভালো না। মুখোশ পড়ে আছে বলে তুমি বুঝতে পারছো না। মানুষ চেনাটা খুব গুরুত্বপূর্ন। নইলে পদে পদে ঠকতে হবে।
ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)-
বাংলাদেশে ধার্মিকের সংখ্যা অনেক বেশী। অথচ দেখো- আমাদের দেশে শিক্ষা দীক্ষা ও উন্নতিতে কত পিছিয়ে। যার দাড়ি যত লম্বা সে তত বড় ধার্মিক। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলানোকে আমরা ধার্মিকতার চিহ্ন হিসাবে দেখি। যেখানে সব ধর্ম অনুসারে সত্যবাদিতা, সততা, পরোপকার, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি হওয়া উচিৎ ছিল ধার্মিকের পরিচয়। ধার্মিকেরা ইহকালে ও পরকালে পরিশ্রম ছাড়াই যেন তেন ভাবে সাফল্য পেতে চায়। নামাজ পড়লেই যদি বেহেশতে যাওয়া যায়, ৬ টি সুন্নত রোজা রাখলেই যদি সারা বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়, পাথরে চুমু খেলে পূর্বের সকল গোনাহ মুক্ত হয়ে নিষ্পাপ হওয়া যায়, ফেসবুকে নবীর জুতায় লাইক দিলে যদি হাজারটা গোনাহ মাফ হয়ে যায়, তাহলে আর ধর্মের নির্দেশ মত মানুষ সত্যবাদী, সৎ, পরোপকারি হবে কেন? পাপ করতে দ্বিধা করবে কেন? যাইহোক, ফারাজা দেশে বিদেশে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা কম হয়নি। ধর্ম বিষয়ে তোমাকে সাবধান থাকতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




