
আপনার নাম?
শাহেদ।
শুধু শাহেদ?
শাহেদ জামাল।
বয়স?
৩৩।
ঠিকানা?
জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড। জিন্দা পীরের গলি।
এই ফ্লাট কি আপনার?
না, ভাড়া থাকি।
আপনার নিজের কোনো বাড়ি নেই?
না নেই।
আপনি কোথায় চাকরী করেন?
আমি কোথায় চাকরী করি না। আমি বেকার।
চলে কিভাবে?
চলে যায়। বাপ দাদার সম্পত্তি আছে কিছু।
আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
বিক্রমপুর।
আপনি বিয়ে করেছেন?
না বিয়ে করিনি।
প্রেম করেছেন?
হ্যাঁ করছি।
সেই মেয়েটার নাম?
নীলা।
নীলার সাথে আপনার বিয়ে হলো না কেন?
ভাগ্যে ছিলো না।
নীলাকে আপনি খুন করছেন?
না আমি খুন করিনি।
কিন্তু নীলা খুন হওয়ার দশ মিনিট আগেও আপনি তার বাসায় ছিলেন।
বাসায় আরো অনেকেই ছিলো। সেদিন একটা অনুষ্ঠান ছিলো।
আমার নাম মঞ্জুর আলম। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে আছি।
নীলা খুনের রহস্যের সমাধান আমাকে করতে হবে। উপর থেকে খুব চাপ আসছে। প্রশাসন আমাকে সাত দিন সময় দিয়েছে। কাজেই শাহেদ জামাল কোনো ধানাই পানাই করবেন না। আপনি আমাকে সহযোগিতা করুণ। নইলে আপনি ফেঁসে যাবেন। আপনার ফাঁসিও হয়ে যেতে পারে। আমি চাইলে আপনাকে থানায় ধরে নিয়ে যেতে পারতাম। উত্তম মাধ্যম দিতেও পারতাম। কিন্তু আমি অন্যসব অফিসারদের মতোণ না। হিংস্রতা আমার পছন্দ নয়। আমি আলাপ আলোচনা করে, মাথা খাটিয়ে আসামী ধরি। কাজেই আপনাকে প্রশ্ন করবো। সরাসরি সঠিক জবাব দিবেন। আমার হাতে সময় খুব কম। কোনো লুকোছাপা করবেন না।
প্রেমিকা হিসেবে নীলা কেমন ছিলো?
অতি সহজ সরল একটা মেয়ে। তার মধ্যে কোনো ভান বা ভনিতা ছিলো না।
আপনাদের প্রেমের সম্পর্ক কত দিনের?
পাঁচ বছর।
কখনও শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে?
না হয়নি।
কেন হয়নি?
আমরা চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটা সহজ সরল থাকুক। স্বচ্ছ থাকুক। পবিত্র থাকুক।
আপনারা কোথায় কোথায় ডেটিং করতেন?
আমরা সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতাম।
যেমন?
রমনা পার্ক। ফুলার রোড। ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বর। মিরপুর চিড়িয়াখানা। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ।
ঢাকার বাইরে কখনও যাননি?
হ্যাঁ গিয়েছি।
তাহলে সেটা বাদ দিলেন কেন? আপনাকে আবারও বলছি। ডিটেলস বলবেন। নইলে কপালে দুঃখ আছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, আপনি আর নীলা কক্সবাজার গিয়েছেন। শ্রী মঙ্গল গিয়েছেন। বান্দরবন গিয়েছেন। আপনারা তো কলকাতাও যেতে চেয়েছিলেন।
নীলা ধনী বাবার কন্যা তার জন্য কি আপনি তার সাথে প্রেম করেছেন?
না।
নীলার কাছ থেকে আপনি কখনও টাকা নিয়েছেন?
হ্যাঁ নিয়েছি।
নীলা কি টাকা আপনাকে ক্যাশ দিতো? না আপনার একাউন্টে পাঠিয়ে দিতো?
সামান্য টাকা। দুই হাজার। তিন হাজার এরকম? জোর করেই পকেটে খুঁজে দিতো?
নীলার বাবার সাথে আপনার কখনও দেখা হয়েছে?
অনেকবার দেখা হয়েছে?
কোথায় দেখা হয়েছে?
নীলাদের বাসাতেই।
নীলার বাবা আপনাকে পছন্দ করতেন?
খুব পছন্দ করতেন। তিনি আমাকে ফোন করে প্রায়ই ডাকতেন।
কেন ডাকতেন?
দাবা খেলতে।
দাবা খেলায় কে জিততো?
কখনো আমি, কখনো তিনি।
নীলা তখন কোথায় থাকতো?
কখনও আবার পাশে বসে দাবা খেলা দেখতো। কখনও রান্না ঘরে।
নীলার হাতের রান্না খেয়েছেন?
অসংখ্যবার খেয়েছি।
নীলার হাতের রান্না কেমন? সে কোনটা খাবারটা সবচেয়ে ভালো করতো?
নীলার হাতের রান্না অসধারন। তার হাতের কলিজা ভূনা আর ডিমচপ টা দারুন হতো।
নীলা মৃত্যুর আগে আপনার একাউন্টে কত টাকা পাঠিয়েছে?
৫০ লাখ।
কেন পাঠালো?
সেটা আমি জানি না।
আপনি চেয়েছিলেন?
না। আমি কখনও নীলার কাছে টাকা চাইনি।
শুনুন, আপনি আগামী সাত দিন ঢাকার বাইরে যাবেন না। আপনাকে আবার জেরা করা হবে। প্রতিদিন একবার করে থানায় গিয়ে হাজিরা দেবেন। আমার মনে হচ্ছে আপনি কিছু লুকাচ্ছেন। শুনুন আমার নাম মঞ্জুর আলম। আমি মানুষের পেট থেকে কথা বের করতে জানি। মানুষ দেখলেই আমি অনেক কিছু বলে দিতে পারি। শাহেদ জামাল বলল, কিন্তু আপনি তো আমাকে বেশির ভাগ প্রশ্নই অযথা করেছেন। ফালতু প্রশ্ন করেছেন। অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন বেশী করেছেন। মঞ্জুর আলম একটা সিগারেট ধরালেন। লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন, আমার স্টাইল একমই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




