
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যাকাণ্ড হয়।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনিকে হত্যা করা হয় পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায়। ছুরি দিয়ে তাদের বারবার আঘাত করা হয়। ধারনা করা হয় দুজন ব্যাক্তি তাদের হত্যা করেছে। আমার ধারনা দুজন নয়, কমপক্ষে তিনজন হবে। এই হত্যা কান্ড সারা দেশের মানুষকে ভীষন অবাক করেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মেঘ। খুনের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এরকম ফালতু কথা সব মন্ত্রীরাই কম বেশি বলে থাকেন। তাদের কথা সিরিয়াস ধরার বোকামি। রাগ, হিংসা থেকে সাগর রুনিকে হত্যা করা হয়।
খুনের মামলা তদন্ত করছে র্যাব।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৯৫ বার আদালতের কাছে সময় নিয়েছে র্যাব। আমার মনে হচ্ছে সেঞ্চুরী হবে। মূলত এখন মামলাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফরেনসিক ও ডিএনএ টেস্টের নামে ঝুলে আছে। যেটা হাস্যকর। এত লম্বা সময় লাগে না। সাদা চোখে দেখলে এটাকে যে কারো ই অস্বাভাবিকই মনে হবে। এই মামলায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিলো। রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাসার দুজন নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল হক এবং সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাদের সবাই জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছেন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁরা দুধ ভাত। আসল অপরাধী তাঁরা নয়।
কী ছিল সাগর সরওয়ারের ল্যাপটপে?
খুনি চক্রের কী প্রয়োজন রয়েছে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের? আমার ধারনা মোবাইলে এবং ল্যাপটপে কিছুই ছিলো না। খুনীরা এটা ইচ্ছা করে করেছে। যেন গোয়েন্দাদের নজর অন্যদিকে থাকে। হাস্যকর চেষ্টা। খুনিরা চলে গেলে মেঘ ৭টার দিকে তার নানুকে ফোন করে। খুনিরা তাহলে ৭টার কিছুক্ষন আগে বাসা ত্যাগ করে। খুন করার পর, বাসা ত্যাগ করার আগে গ্রিল কাটে। গ্রিল কাটাও একটা হাস্যকর কাজ হয়েছে। তাঁরা গ্রিল দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেনি। গোয়েন্দাদের নজর ঘুরানোনোর চেষ্টা মাত্র। এই খুনের হত্যাকারীদের ধরা খুব কঠিন কিছু না। আমার ধারনা ব্যাক্তিগত আক্রোশ থেকেই তাদের খুন করা হয়েছে।
সাগর রুনি হত্যাকান্ডটি যদি রাষ্ট্রীয় খুন হয়-
যদি এর সাথে সরকারের গোয়েন্দারা জড়িত থাকে, যদি এর সাথে 'র' বা মোসাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে, যদি এর সাথে দেশী বা বিদেশী বড় কোম্পানীর স্বার্থ তাহলে আসামী ধরা কঠিন কিছু না। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন রুনি। সাগর রুনী দুজনেই এনার্জি নিয়ে কাজ করতেন। সাংবাদিক হিসেবে সাগরের স্পেশালিটি ছিল এনার্জি। সাগর-রুনি খুন হওয়ার পর বাসা থেকে কিছুই খোয়া যায়নি। শুধু দু'টি মোবাইল ফোন এবং দু'টি ল্যাপটপ পাওয়া যায়নি। সাগর একটি বই লিখেছেন- ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি'। পার্বত্য এলাকার আদিবাসীদের নিয়ে তাঁর এই লেখা। এই হত্যাকান্ডের সবচেয়ে বড় রহস্য সরকার কেন আসামীকে ধরছে না।
খুনীকে ধরা এই আধুনিক যুগে কোনো ঘটনাই না।
এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। বাঙ্গালীরা খুবই চতুর, মূর্খ, ধান্দাবাজ এবং ইতর একটি জাতি। বিনা দ্বিধায় বলা যায়- এই হত্যা কান্ড হুট করে করা হয়নি। পরিকল্পিত। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে অনেক গুলো মোটিভ পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী মেঘ ও দাড়োয়ান। তারা নিশ্চয় দেখেছে কারা এসেছিল। বন্ধু বা পরিচিত কেউ না হলে রাত ২ টা পর্যন্ত বাসায় থাকতে পারে না। নাকি খুনীরা অন্য ফ্লাটে লুকিয়ে ছিলো? সিগারেট এ খুনির লেগে যাওয়া ডিএনএ স্যাম্পল টেস্ট করে এবং ওই দিন যারা ফ্ল্যাটে এসেছিল তাদের প্রত্যেকের ডিএনএ'র সাথে মিলিয়ে খুনি ধরা যেতে পারে। এই প্রযুক্তির যুগে কেউ অপরাধ করে পার পেতে পারে না।
সাগর রুনির ফেবু সহ অন্যান্য এ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যাতে পারে।
আটকৃত নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল জিজ্ঞাসাবাদে কি তথ্য দিয়েছে তা জানানো হচ্ছে না। এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। সক্রেটিসের সময়কার একজন স্বল্প খ্যাত দার্শনিক থ্রেসিমেকাস বলেছিলেন- 'শক্তিমানের স্বার্থরক্ষাই ন্যায়'। মোটিভবিহীন হত্যাকাণ্ডের কোন কুল কিনারা পায় না তদন্তকারিরা। পুলিশ, র্যাব ও ডিবি, এটিএন বাংলা ও মাছরাঙ্গা টেলিভিশন কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল দফায় দফায়। কিন্তু কোন ক্লু পাওয়া যায় নি। সাগর রুনি বিখ্যাত কেউ না। কে তাদের হত্যা করতে পারে? অবশ্যই তাদের পরিচিত কেউ। যে তাদের হত্যা করেছে। সে অবশ্যই সাইকো।
(ছবি ও তথ্যঃ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




