
শাহেদ জামাল সকালে মেসে খায় না।
সকালবেলা বুয়া ডাল ছাড়া খিচুড়ি রান্না করে। মসুরির ডাল ১৪০ টাকা কেজি। হলুদও দেয় না। সাদা খিচুড়ি। ভাত হয় সাদা, খিচুড়ি নয়। সাথে রসুন আর মরিচ ভর্তা। মিথ্যা বলব না মাঝে মাঝে বুয়া ডিম ভাজি, আলু ভর্তাও দেয়। যাইহোক, বুয়ার প্রতিটা রান্না অতি অখাদ্য। অথচ মেসের লোকজন এই অখাদ্য আগ্রহ নিয়ে খায়। এমনকি খাবার টান পড়ে যায়। মেসের লোকজন বলে আর একটু বেশি করে রান্না করো। শাহেদ জামাল বুঝে না এরকম ফালতু খাবার লোকজন কি করে খাচ্ছে? শাহেদ মেস মেম্বারদের বলেছে, সবাই মিলে কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলে সকলে মিলে ভালো মন্দ খাওয়া যায়। কেউ শাহেদ জামালের কথা শুনেনি। তাঁরা চায় টাকা বাঁচাতে। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবে। অথচ একটু বুদ্ধি করলেই প্রতিবেলা আরাম করে খাওয়া যায়। নির্বোধ গুলো বুঝে না। বুদ্ধি না থাকলে এই সমাজে টিকে থাকা যাবে না। নিজের পথে নিজেকেই বেছে নিতে হয়।
শাহেদ জামাল সকালে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে।
তার পকেটে টাকা না থাকলেও সমস্যা নাই। হোটেল মালিক শাহেদ জামালকে অত্যাধিক স্নেহ করেন। তিনি বলেছেন, যখন ইচ্ছা তুমি আমার হোটেলে এসে খেয়ে যাও। মাস শেষে টাকা দিলেই হবে। হোটেল মালিকের নাম আলামিন। উনি নামাজি মানুষ। তার কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসে গেছে। এরকম মানুষ অতি সহজেই বোকা বানানো যায়। শাহেদ জামাল একদিন হোটেলে এসে দেখে আলামিন সাহেবের মন খারাপ। তখন শাহেদ তাকে দুটা হাদীস বলে। হাদীস শুনে আলামিন সাহেবের মন ভালো হয়ে যায়। তিনি শাহেদ জামালকে বুকে জড়িয়ে ধরে। এরপর একদিন শাহেদ ফযরের সময় মসজিদে যায়। মসজিদে দেখা হয় আলামিন সাহবের সাথে। আলামিন সাহেব শাহেদকে মসজিদে খুব খুশি হয়। শাহেদ নরম কমল গলায় বলে- আল্লাহপাক সবার আগে নামাজের হিসাব নেবেন। নামাজ না পড়লে তাকে কি জবাব দিবো। আসলে শাহেদ আলামিন সাহেবকে খুশি করার জন্য এই ভোরবেলা আরামের ঘুম বাদ দিয়ে মসজিদে যায়। তার চিন্তা অন্য জায়গায়। শাহেদ সফল হতে পেরেছে।
এখন সে আলামিন সাহেবের হোটেলে খেতে পারে।
টাকা না থাকলেও সমস্যা নাই। এমনকি হোটেলের মেসিয়াররা পর্যন্ত শাহেদ জামালকে খাতির করে। তাদের মালিক খাতির করে। তাঁরা তো করবেই। শাহেদ জামাল খেতে বসলো। নেহারি নিলো। রুটি নিলো। বেশ স্বাদ। হোটেল বয় বলল, আজ কিন্তু কলিজা ভূনা করা হয়েছে। সেটা খেয়ে দেখুন। শাহেদ বলল, আনো। তাড়াতাড়ি আনো। কলিজা ভূনা ভালোই হয়েছে কিন্তু ঝাল বেশি। সব শেষে স্পেশাল চা। মালাই চা। দুধের সর জমিয়ে রাখে। কাউকে দেয় না। তাঁরা জানে শাহেদ আসবে। যে লোক চা বানায় সে একবার বিরাট বিপদে পড়েছিলো। তার মোবাইল কিছুতেই অন হচ্ছিলো না। তখন শাহেদ জামালের কাছে আসে। শাহেদ সেই মোবাইল অন করে দেয়। এরপর চায়ের কারিগর লোকমান শাহেদের ভক্ত হয়ে যায়। মোবাইলের কিছু হয় নাই। চার্জ ছিলো না। শাহেদ মোবাইল চার্জ দিলো। এরপর অন করে দিলো। এভাবে সে অনেকের সমস্যার সনাধান করেছে।
শাহেদ জামালের টাকার দরকার।
বিকেলে সে নীলার সাথে দেখা করতে যাবে। অথচ পকেটে কোনো টাকা নেই। শাহেদ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো। ভাবছে কিভাবে টাকা ম্যানেজ করা যায়। এমন সময় দেখা গেলো আলামিন সাহেব আসছেন। হোটেল মালিক আলামিন সাহেব। শাহেদ তাকে সালাম দিলো। বলল, একটা কোরআন শরীফ আছে। সবুজ মলাটের কোরআন। এই কোরআন মক্কা শরীফ থেকে আনা হয়েছে। এর আগে এই কোরআনটা ছিলো মদীনায়। আপনি শুনলে অবাক হবেন এই কোরআনটা এখন আছে বাংলাদেশে। আলামিন সাহেব বললেন, আমার নবীর দেশে থেকে আনা কোরআনটা যদি একবার হাতে নিতে পারতাম! শাহেদ বলল, এটা সম্ভব। খুব সম্ভব। আপনি ইচ্ছা করলে এই কোরআন আপনার নিজের কাছেও রাখতে পারেন। আমি ব্যবস্থা করে দিবো। আলামিন সাহেব বললেন, তাহলে তো খুব ভালো হয়। কত টাকা লাগবে বলো আমি দিচ্ছি। শাহেদ বলল কোরআন শরীফের কোনো দাম হয় না। দামের কথা বলে আপনি গুনাহ করলেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। আলামিন বললেন, আমি পাপী। আমি ক্ষমা চাই।
শাহেদ বলল, কোরআনটা আছে এখন সিলেট শাহজালাল মাজারের খাদেমের কাছে।
সেই খাদেমের সাথে আমার বিশেষ খাতির আছে। আমি বিকেলের প্লেনে সিলেট চলে যাই। আপনি আগামীকাল আছরের নামাজের পর কোরআন শরীফ আপনার হাতে পাবেন। আলামিন সাহেব বললেন, সুবাহানাল্লাহ। শাহেদ বলল, প্লেনে যাতায়াত করবো বেশ খরচ আছে। আলামিন সাহেব বলল, খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি তোমার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আলামিন সাহেব চলে গেলেন। শাহেদ জামাল আরেকটা সিগারেট ধরালেন। পুরো ঘটনা আচমকা বানানো। আলামিন সাহেবকে দেখেই কোরআনের কথাটা বানিয়ে বানিয়ে বলা। মূলত প্রয়োজন মানুষকে মিথ্যা বলতে শেখায়। শাহেদের এরকম কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। এখন বায়তুল মোকাররম থেকে একটা কোরআন কিনে বই বাধানোর দোকান থেকে সবুজ মলাট লাগিয়ে নিলেই হবে। আলামিন সাহেব দিল দরিয়া মানুষ। বিকাশে ভালো পরিমানের টাকাই পাঠাবেন।
সন্ধ্যা ঘনায়মান। উত্তরার স্টিভ অস্টিন রেস্টুরেন্ট।
চমৎকার রেস্টুরেন্ট। লোকে বলে এই রেস্টুরেন্টে খাবার বানাতে যা যা দরকার সবই বিদেশ থেকে আনা হয়। এমনকি পানির বোতল পর্যন্ত। আলামিন সাহেব বিকাশে টাকা পাঠিয়েছেন। অনেক টাকা। নীলা আর শাহেদ মুখোমুখি বসে আছে। নীলাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। সে অফ হোয়াইট শাড়ি পড়েছে। মনে হচ্ছে নীলা পৃথিবীর কোনো মানবী নয়। এই মাত্র বেহেশত থেকে এসেছে। শাহেদ জামাল আজ তাকে একটা চুমু দিবেই। নইলে জীবন বৃথা। একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে! হু। নীলা বলল, আমরা আর কতদিন এভাবে পার্কে- রেস্টুরেন্টে দেখা করবো? একটা চাকরী তুমি যোগার করতে পারছো না? শাহেদের হাতে একটা আংটি। সুন্দর পাথর বসানো। পাথরটা ঝকমক করছে। শাহেদ নীলার আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিলো। বলল, আমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেলো। খুব শ্রীঘই বিয়ে হয়ে যাবে। এখন কি আমি রাজকুমারীকে একটা চুমু খেতে পারি? প্লীজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




