somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

অতি প্রাকৃত গল্প

০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১। রাত বেশি না। মাত্র সাড়ে ন'টা।
সোলেমান সন্ধ্যা থেকেই দেবযানি খালের কাছে বড় একটা তেঁতুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সে খুবই টেনশনে আছে। কাজটা শেষ না করা পর্যন্ত তার শান্তি হবে না। চেয়ারম্যান খালেক ভূইয়া এই পথে দিয়েই যাবে। আজ তাকে গলা কেটে খুন করবে সোলেমান। এজন্য সে পাবে পঁচিশ হাজার টাকা। একটা জলজ্যান্ত মানুষের গলা কেটে ফেলা চারটেখানি কথা নয়। অবশ্য একাজ সে একা পারবে না। তার সহকারী আছে বজলু। বজলু গিয়েছে সিগারেট আনতে। টেনশনে থাকলে ঘন ঘন সিগারেট খেতে হয়। এর আগেও সোলেমান একবার চেয়ারম্যান খালেক ভূইয়াকে খুন করে ছিলো। মূরগী কাটার মতো করে চেয়ারম্যানের গলা কেটেছিলো। তবু হারামিটা বেঁচে যায়। ডাক্তার চেয়ারম্যানের গলা সেলাই করে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

এবার সোলেমান আর এই ভুল করবে না।
গলা কেটে মৃত্যু একদম নিশ্চিত করে তারপর সে দেবযানি খালে নৌকা করে মুক্তারপুর হয়ে ঢাকা চলে যাবে। বজলু সিগারেট নিয়ে এনেছে। তার চোখে মুখে অস্থিরতা। অবশ্য বজলুর অভিজ্ঞতা কম। এই কাজে সে নতুন। প্লান প্রোগ্রাম সব ঠিক করা আছে। সোলেমান চেয়ারাম্যানকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিবে। তখন বজলু তার বুকের উপর উঠে বসবে। সোলেমান সময় অপচয় না করে সোজা গলায় ছুরি চালিয়ে দেবে। এখন রাত দশটা। গ্রাম দেশে রাত দশটা মানে নিশুতি রাত। ওই তো দেখা যাচ্ছে। চেয়ারম্যান আসছে। সোলেমান তার পকেট থেকে ছুরিটা বের করলো। বজলু দুই হাতের মুঠি শক্ত করে অপেক্ষা করছে। উত্তেজনায় সে কাঁপছে। ঠিক এই সময় তেঁতুল গাছ থেকে কেউ একজন নেমে এলো তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। চারপাশ কেমন আলোকিত হয়ে গেলো! সোলেমান এবং বজলু দুজনেই হঠাত খুব ভয় পেয়ে গেলো।

২। বাসায় আজ কেউ নেই।
সবাই সিলেট গিয়েছে। রাতে আমি হোটেল থেকে খেয়ে বাসায় ফিরেছি। খালি বাসায় কিছুই ভালো লাগছে না। কিছুক্ষন টিভি দেখলাম। বই পড়লাম। গান শুনলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। চোখে ঘুম নেই। সময় যেন কাটছেই না। মাত্র রাত ১২টা। অথচ আমি ভেবেছিলাম রাত তিনটা বেজে গেছে। ঘরে সামান্য ব্র্যান্ডি আছে। ঝটপট দুই পেগ খেয়ে নিলাম। যদি ঘুম আসে। প্রস্বাব চেপেছে। ওয়াশ রুমের দরজা খুলতেই দেখি কমোডে রফিক বসে আছে। রফিক আমার বন্ধু। সে আজ থেকে চার বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। রফিককে দেখে আমি মোটেও ভয় পাইনি। ভয় পাওয়ার কি আছে? সে আমার বন্ধু। আমার কাছে আসতেই পারে। কিন্তু কথা হলো সে কমোডে বসে আছে কেন? সে কি আমার বাসায় পায়খানা করতে এসেছে? মৃত মানুষ কি পায়খানা করে?

আমি যথেষ্ঠ বিরক্ত হলাম বন্ধু রফিকের উপর।
বসার ঘরে আসতেই দেখি, এক মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী। আমি নিজেকে নিজেই বললাম, শালা এসব কি ব্র্যান্ডির গুণ? ব্র্যান্ডি খেয়ে এসব দেখছি? মেয়েটা বলল, আমি মৃত মানুষ। আমি চেয়েছি বলেই আপনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। আমি মেয়েটাকে বললাম, তুমি কি ব্র্যান্ডি খাবে? দেবো তোমাকে সামান্য? মেয়েটা হাসলো। এই হাসির মানে আমি কিছুই বুঝলাম না। আমার বেশ গরম লাগছিলো। আমি ছাদে এলাম। ছাদে বেশ ঠান্ডা আছে। আমি একটা সিগারেট ধরালাম। লম্বা একটা টান দিয়ে দেখি- রফিক আর সেই মেয়েটি ছাদে চলে এসেছে? বললাম, কি চাই? রফিক বলল, সিগারেট টা শেষ করো। তারপর তোমার মৃত্যু হবে। আমি ভীষণ অবাক হলাম। দুজন মৃত নারী পুরুষ কি বলছে? হঠাত আমার খুব ভয় করছে।

৩। দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজন আমাকে লুকিয়ে দেখে।
কে সে? তাকে দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। অথচ আমি জানি সে আছে। একবার আমি গ্রামের বাড়ী গেলাম। ভাবলাম এবার বুঝি সেই অশরীরি থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু না। রাত তখন দুটা। হঠাত শুনি কে যেন আমার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি বুঝে গেলাম সেই অশরীরি। অথচ আমি তাকে কোনোদিনই পুরোপুরি দেখি নি। শুধু আমি বুঝতে পারি কেউ একজন দূর থেকে আমাকে দেখছে। এই অনুভূতিটা খুবই তীব্র। এই অশরীরির কথা আমি কাউকে কোনোদিন বলি নি। বলে লাভ নেই। বিজ্ঞানের জামানায় কেউ বিশ্বাস করবে না। সবাই বলবে বিজ্ঞান এসব মানে না। যারা এদের দেখে, যারা এদের অনুভব করে তাঁরা জানে এরা আছে। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো- দিনের বেলা এদের দেখা যায় না। এদের অনুভব করতে পারি না। এই অশরীরি কি ঈশ্বরের প্রেরিত কেউ?

আমার ধারনা এদের জন্ম আয়না থেকে।
আয়নার ওপারে অন্য একটা জগত আছে। আমার তো মনে হয়- আমি এই জগতের কেউ না। আমি এসেছি আয়নার জগত থেকে। একদিন মধ্যরাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানায় বসে থাকি। হঠাত আয়নাতে চোখ যায়। স্পষ্ট দেখলাম- আয়নার ভেতর থেকে কেউ একজন আমায় ডাকছে। আমি যেতে চাইনি। নিয়তি আমাকে আয়নার কাছে নিয়ে গেলো। এরপর থেকে সেই অশরীরি দূর থেকে আমার পিছু নিলো। আমি বুঝতে পারি যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন আমি এই অশরীরী থেকে মুক্তি পাবো। এক ধরনের অদেখা-অজানা 'যন্ত্রনা' আমৃত্যু আমাকে বইতে হবে। আমি অসুস্থ নই। কোনো অসুখ নেই আমার। ডাক্তার দেখিয়েছি। অথচ একজন অশরীরি আমার সকল আনন্দ মাটি করে দিচ্ছে। ঐ তো দেখা যাচ্ছে তাঁরা ছায়া। সে কি কোনো নারী? না পুরুষ? এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- ''চিরকাল এইসব রহস্য আছে নীরব/ রুদ্ধ ওষ্ঠাধর, জন্মান্তের নব প্রাতে/ সে হয় তো আপনাতে পেয়েছে উত্তর'!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:৩৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×