
প্রিয় কন্যা আমার আজ শুক্রবার।
ভর সন্ধ্যায় তুমি আমাকে বললে- বাবা বাইরে যাবো।
কোথায় যাবে?
বাইরে। বাইরে?
আরেহ বাইরে কোথায়? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তুমি তোমার মাকে বললে- আমাকে রেডি করে দাও। বাবার সাথে বাইরে যাবো।
যাইহোক, তোমাকে নিয়ে বাইরে গেলাম।
তুমিই দেখিয়ে দিচ্ছো কোথায় কোথায় যেতে হবে। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে তোমার নির্দেশে যাচ্ছি। এখন তুমি বড় হয়েছো। অনেকক্ষন তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারি না। অথচ তুমি কোল থেকে নামতে চাও না। খুব অনুরোধ করে বলাতে তুমি কিছুক্ষন হাঁটতে রাজী হলে। ফুটপাতের পাশেই একটা গরুর মাংসের দোকান। সেখানে দুটা গরু বাঁধা।
তুমি বললে, বাবা এটা কি গরু?
হ্যাঁ গরু।
গুতো দিবে?
আমি জানি না। দিতেও পারে। আবার না-ও দিতে পারে। তবে তুমি বেশি কাছে যেও না।
আমাকে গুতো দেবে বাবা?
মনে হয় না তোমাকে গুতো দেবে। তবে দুষ্টলোকদের গুতো দেওয়ার সম্ভবনা বেশি।
রাস্তায় একলোক বাদাম বিক্রি করছে।
তুমি বললে- বাবা বাদাম খাবো। আমি দশ টাকার বাদাম নিলাম। ছিলে দিচ্ছি তুমি খাচ্ছো। তুমি ফুটপাত ধরে হাটছো। গান গাচ্ছো আপন মনে। আমি তোমার পেছন পেছন হাঁটছি। এইসব রাস্তা তুমি চিনে ফেলেছো। একটু পর তুমি বললে- বাবা পানি খাবো। দোকান থেকে পানির বোতল কিনে নিলাম। তুমি দুই চুমুক পানি খেলে। এমন সময় আমার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। কথা শেষ করে মোবাইল পকেটে রাখলাম। তুমি জানতে চাইলে কে ফোন দিয়েছিলো?
আমি বললাম, তুমিই বলো কে ফোন দিয়েছিলো?
মা?
হ্যাঁ তোমার মা ফোন দিয়েছিলো। আমি খেয়াল করে দেখেছি কেউ আমাকে ফোন দিলেই তুমি বুঝে ফেলো কে ফোন দিয়েছে। তোমার জ্ঞান বুদ্ধি চমৎকার। তোমার মতো বয়সে আমি এত চটপটে ছিলাম না। বোকা বোকা ছিলাম। অবশ্য আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন তো মোবাইল ছিলো না। ইন্টারনেট ছিলো। ল্যাপটপ ছিলো না। ঘরে একটা সাদা কালো টিভি ছিলো। চ্যানেল মাত্র একটা। তাও রাত দশটায় সেই চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেতো। তোমার বয়স মাত্র দুই বছর দুই মাস। আর তুমি এখনই মোবাইল ব্যবহার করতে পারো। মাথা খাটিয়ে কথা বলতে পারো।
প্রিয় কন্যা ফারাজা-
গতকাল রাত তিনটায় তোমার ঘুম হঠাত ভেঙ্গে যায়। তখন তোমার মা গভীর ঘুমে। সে ক্লান্ত। বাসায় মেহমান এসেছিলো। অনেক রান্না বান্না করে সে ক্লান্ত। তখন আমার চোখেও ঘুম। অথচ তুমি ঘুম থেকে উঠে বসে আছো।
আমি বললাম, ফারাজা ঘুমাও।
ঘুম নাই।
শুয়ে থাকো। ঘুম এসে যাবে।
না আসবে না।
খাবে কিছু? আপেল দিবো?
না।
পানি খাবে?
না।
তাহলে কি চাও?
মোবাইল।
এরপর তোমাকে মোবাইল দিলাম।
টানা আধা ঘণ্টা তুমি মোবাইল চালালে। আমি তোমার পাশে চুপ করে বসে ছিলাম। তোমার হাতে মোবাইল দেখলে তোমার মা রেগে যাবে। তাই আমি তোমাকে বললাম, মোবাইলে চার্জ নেই। এরপর তোমাকে গল্প বললাম। আমি তোমাকে কখনও রুপকথার গল্প বলি না। তোমাকে বাস্তব গল্প বলি। জীবনের গল্প বলি। মানুষের গল্প বলি। তুমি মুগ্ধ হয়ে শোনো। কখনও কখনও হেসে ওঠো। কখনও কখনও মন খারাপ করো। আমি খেয়াল করে দেখেছি আমার গল্প গুলো শুনতে তুমি খুব পছন্দ করো। যাইহোক, আমার গল্প শুনতে শুনতে তুমি কখন ঘুমিয়ে গেছো আমি জানি না। কারন- গল্প বলতে বলতে আমি নিজেও ঘুমিয়ে গিয়েছি।
প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন আমি তোমাকে পাশের ঘর থেকে চিৎকার করে ডাকছিলাম। ফাজজা? ফাজজা বলে। তুমি এসে বললে- আমার নাম ফারাজা। এবং আমার মুখে ফাজজা ফাজজা শুনে তুমি খুব হাসলে। হাসতে হাসতে তোমার মাকে বললে, বাবা ফাজজা বলে। তোমার প্রতিভায় আমি মুগ্ধ! যে পাখি আকাশে উড়ে তার ডানা ঝাপটানো দেখলে বুঝা যায়। ঠিক তেমনি তোমার কথা আর আচার আচরণে দেখে আমি নিশ্চিত- তুমি অন্য দশটা সাধারন মেয়ের মতো হবে না। তুমি হবে সবার থেকে আলাদা। ফারাজা, ব্যক্তিত্ব কিন্তু এমনি এমনি আসবে না।
সেটা তোমাকে অর্জন করতে হবে। ব্যক্তিত্ব জাগিয়ে তোলার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো নিজের কাছে নিজে সৎ থাকা। একজন মানুষ সবজান্তা হতে পারে না। সব বিষয়ে তাকে জানতে হবে এমন কোনো নিয়মও নেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




