বাসায় কেউ নেই। সকলে ঢাকার বাইরে গেছে।
শাহেদ জামাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো। সে রাত তিনটা পর্যন্ত গ্রহ নক্ষত্র দেখেছে। আকাশ পরিস্কার নয় বলে সে লাল গ্রহ (মঙ্গল) দেখতে পায়নি। ভোরের দিকে শাহেদ বিছানায় যায় এবং সাথে সাথে তার ঘুম এসে পড়ে। সে ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্নটা এই রকমঃ শাহেদ জামাল পৃথিবী থেকে তিন কোটি মাইল দূরে চলে গিয়েছে। সে যে মহাকাশযানে করে গেছে, সেটা নাসা'র কোনো যান নয়। সেই যানটা দেখতে অনেকটা ঘোড়ার গাড়ির মতোণ। সে মঙ্গল গ্রহ নিজ চোখে দেখলো। দেখতে কেমন লালচে। তার ইচ্ছা করছে দুটো দিন মঙ্গলে থেকে যেতে। সমস্যা হলো তার সাথে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। তাছাড়া সে যে মহাকাশযানে এসেছে তার ফুয়েল শেষ হওয়ার আগেই তার ফিরে যেতে হবে। মঙ্গলের গ্রহের ইংরেজি নাম মার্স। মার্স আবার এক রোমান দেবীর নাম। মঙ্গলে শাহেদ নামবে কিনা বুঝতে পারছে না। তার বেশ শীত শীত লাগছে। শাহেদ মুগ্ধ হয়ে মঙ্গল গ্রহটি দেখছে! অপার বিস্ময়! চাঁদ দেখা যাচ্ছে দুটো।
মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর মতোন বড় নয়।
শাহেদ জানে- সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর লাগে এক বছর। মঙ্গলের লাগে প্রায় দুই বছর। নাসা মঙ্গলের থেকে পাথর সংগ্রহ করেছে অনেক আগেই। শাহেদ যখন মুগ্ধ হয়ে মঙ্গল দেখছিলো। তখন তার সাথে একটি মেয়ে ছিলো। মেয়েটির নাম নীলা। শাহেদ নীলা এখন পৃথিবীতে ফিরে আসবে। তাদের মহাকাশযানে লাল আলো জ্বলে উঠেছে এবং শব্দ করছে। ফিরে যাবার শব্দ। শেষ বারের মতো তাঁরা প্রান ভরে মঙ্গল গ্রহটা দেখে নিচ্ছে। ফিরে আসার সময় তাঁরা মহাকাশে অদ্ভুত একটা বিষয় জানতে পেরেছে। তাঁরা কিছু একটা দেখেছে। অবশ্যই অলৌকিক কিছু একটা। স্বপ্নটা এই পর্যন্তই। শাহেদের ঘুম ভাঙ্গল। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা। সে একটা স্বপ্ন দেখেছে। বুঝতে পারছে না এরকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার কারন কি? রাতে সে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের তাঁরা দেখেছে। এজন্যই কি সে এরকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছে? কলিং বেল বাজছে। কে এলো? নিশ্চয়ই ভিক্ষুক। আজকাল ভিক্ষুকেরা মনে করে ভিক্ষা তাদের দিতেই হবে। এটা তাদের দাবী। করোনার পরে দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
শাহেদ দরজা খুলে অবাক। তিনজন লোক এসেছেন।
এদের মধ্যে একজন নারী। সবাই কালো কোট প্যান্ট পরা। তবে টাই টা লাল। তাদের চোখে কালো চশমা। শাহেদ এদের চিনে না। মেয়েটা বলল- গুড মর্নিং স্যার। আমরা আমেরিকা থেকে এসেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম 'নাসা'। আমার নাম নাদিয়া। শাহেদ জামাল এতটাই অবাক হয়েছে যে সে কোনো কথা বলতে পারলো না। মেয়েটা বলল, এই যে আমাদের আইডি কার্ড। তাঁরা তিনজনই তাদের কার্ড দেখালো। শাহেদ দেখলো হ্যাঁ সত্যি সত্যি নাসার লোগো আছে। তাদের নাম দেখা। শাহেদ বলল, আপনারা আমার কাছে কি চান? মেয়েটা বলল, আমি বাঙ্গালী। এবং আমি নাসাতে কাজ করা একজন বাংলাদেশী নারী। এজন্য নাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে পাঠিয়েছে। যেন বিষয়টা আমি আপনাকে ভালো করে বুঝাতে পারি। শাহেদের একবার মনে হলো- এটা হয়তো স্বপ্ন। সে আসলে এখন ঘুমিয়ে আছে। নাদিয়া বলল, মিস্টার শাহেদ জামাল আপনি স্বপ্ন দেখছেন না। নাসা আবেগে কোনো কাজ করে না। তাঁরা প্রতিটা কাজ অনেক হিসাব নিকাশ করেই করে। আপনি ভাগ্যবান মানুষ।
শাহেদ বলল, আপনারা কি চা খাবেন?
নাদিয়া বলল, হ্যাঁ চা খাওয়া যেতে পারে। আমরা জানি, আপনি সকালে দাঁত ব্রাশ করার আগেই এক কাপ চা খান। শাহেদ বলল- কিভাবে জানলেন? নাদিয়া সামান্য হেসে বলল, আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমরা 'নাসা' থেকে এসেছি। আমরা আপনার বিষয়ে সকল তথ্য জানি। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য দেই। আপনি যে মেয়েটাকে ভালোবাসেন তার নাম নীলা। নীলার সাথে আপনার প্রতিমাসে দুবার দেখা হয়। মাঝে মাঝে আপনি নীলার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এবং তাকে ফোন করে ব্যলকনিতে আসতে বলেন। প্রায়ই আপনি রমনা পার্কে গিয়ে বসে থাকেন। আল মদীনা নামে একটা ভাতের হোটেলে আপনি বাকিতে খাওয়া দাওয়া করেন। এবং সন্ধ্যার পর সোলেমানের চায়ের দোকানে চা খেতে যান। আপনি বেকার জীবনযাপন করছেন। আপনার ওজন ৭৫ কেজি। আপনার Extrasensory perception বা Sixth Sense প্রবল। কি আরো শুনতে চান? শাহেদ বলল, ধন্যবাদ আমি আর কিচ্ছু জানতে চাই না। শাহেদ জামালকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সবাই একটা টেবিলে বসলো।
শাহেদ বলল, নাদিয়া আপনাদের বিষয়টা কি আমাকে বুঝিয়ে বলুন। নাদিয়া কোনো রকম ভনিতা না করে বলল- আপনি একজন ভাগ্যবান মানুষ। নাসা থেকে আপনাকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হবে। শাহেদ বলল, আমাকে কেন? পৃথিবীতে কি আর কোনো লোক নেই? নাদিয়া বলল, নাসার কাছে পৃথিবীর সব লোকের তথ্য আছে। নাসার তথ্য মতে আপনি সবার থেকে আলাদা। আপনার মধ্যে কিছু ব্যাপার আছে, যা সচারচর দেখা যায় না। এজন্য নাসা আপনাকে মঙ্গলে পাঠাবে। আমাদের রকেট এর নাম ফ্যালকন হেভি। এটা বিশ্বের সেরা রকেট। অনেক শক্তিশালী রকেট। ফ্লোরিডা থেকে এটা আগামী মাসের সাত তারিখ যাত্রা শুরু করবে। আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য 'ফ্যালকন হেভি' প্রস্তুত। তবে দুঃখজনক কথা হচ্ছে এই রকেট টি পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না। অর্থ্যাত আপনিও আর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন না। নাসার উদ্দেশ্য হচ্ছে- মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা। শাহেদ বলল- মহাকাশে অনুসন্ধান ও গবেষণার কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে!
নাদিয়া বলল, আমাদের হাতে সময় কম।
আগামীকাল রাতে আপনাকে নিয়ে নিউইয়র্ক রওনা দেবো আমাদের নাসার বিশেষ বিমানে করে। আপনার এই মহান ত্যাগের জন্য ইতিহাস আপনাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে। আর আপনার বান্ধবী নীলাকে নাসা'তে চাকরী দেওয়া হবে। নাসা থেকে আসা তিনজন বিদায় নিলো। শাহেদ নীলাকে ফোন করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু নীলা ফোন ধরছে না। শাহেদ ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো। হঠাত তার মনে হলো- মহাকাশে গিয়ে কি সিগারেট খাওয়া যাবে? নাদিয়া কি যেন নাম বলল রকেটের 'ফ্যালকন হেভি'। রকেটের ভেতর সিগারেট খাওয়া যায়? জেনে নিতে হবে। শাহেদ জামাল টানা সাত তিন বঙ্গোপসাগরে ছিলো জাহাজে করে। কিন্তু তার মহাকাশের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। রাশিয়ানরা বহু বছর আগে একটা কুকুর পাঠিয়েছিলো মহাকাশে। কুকুরটার নাম ছিলো লাইকা। আগে মহাকাশে কুকুর পাঠানো হতো। এখন পাঠানো হচ্ছে মানুষ। আফসোস। শাহেদ আবার নীলাকে ফোন দিলো। রিং হচ্ছে। নীলা কি ঘুমাচ্ছে মোবাইলের সাউন্ড বন্ধ করে? নীলা ঘুম থেকে ওঠো। আমার হাতে সময় কম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১:০৬