জমিদার প্রতাপ চন্দ্র দাস।
চব্বিশ পরগণার নদীয়া জেলায় তার জমিদারি। প্রতাপ একজন ভালো জমিদার। জমিদারদের যেসব খারাপ অভ্যাস থাকে প্রতাপের সেসব কিছুই নেই। তিনি প্রজাদের উপর কোনদিন অত্যাচার জুলুম করেন নি। যে কোন প্রজা যে কোনো সময় তার অন্দর মহলে প্রবেশ করতে পারে। কোনো বাঁধা নিষেধ নেই। জাতপাত প্রতাপ মানেন না। প্রতাপ ঘোড়ায় চড়ে প্রজাদের বাড়ি বাড়ি যেতেন। তাদের খোজ খবর রাখতেন। প্রতাপের বেশির ভাগ প্রজাই মুসলিম। মুসলিম প্রজাদের জমিদার হিন্দু। প্রতাপ তার প্রজাদের বললেন, আমাকে তোমরা ধর্ম দিয়ে বিচার করো না। আমি মানুষ। এটাই আমারা আসল পরিচয়। এক প্রজা সাহস করে বলেই ফেলল- তাহলে আপনি হজ্ব করুণ। হজ্বে যান। আমরা অনেক খুশি হবো। প্রতাপ বললেন, আমার প্রজারা খুশি থাকলেই আমি খুশি।
জমিদার প্রতাপ তার প্রজাদের খুশির জন্য হজ্ব করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
একদিন জমিদার প্রতাপ তার দল নিয়ে জাহাজে চেপে বসলেন। টানা তিন মাস নদী পথে থাকতে হলো তাকে। এক বছর পর প্রতাপ তার রাজ্যে ফিরলেন। ইংরেজ সরকার প্রতাপের কর্মকান্ডে ভীষন অবাক। সেই সময়ে এই ঘটনা একটা ইংরেজি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো। শিক্ষিত মহলে বেশ আলোচিত হয়েছিলো একজন হিন্দুর হজ্ব করা নিয়ে। এদিকে প্রতাপের প্রজারা ভীষন খুশি। তাদের জমিদার সুন্দর ভাবে হজ্ব করে ফিরে এসেছেন। তাদের জন্য রেশমি কাপড় এনেছেন, জমজম পানি এনেছেন। আর এনেছেন খেজুর। এর আগে চব্বিশ পরগনায় কেউ খেজুর খায়নি। অতি মিষ্ট স্বাদ। প্রজারা আরব দেশের ফল খেয়ে খুশি। প্রজারা জানেন আরব দেশ নবীর দেশ। নবীর দেশে গিয়েছে তাদের জমিদার। এবার তাদের ভাগ্য ফিরবে।
দলে দলে প্রজারা আসছে রাজ দরবারে।
তাঁরা আরব দেশের গল্প শুনতে চায়। প্রতাপ রাজ দরবারে বসে প্রজাদের আরব দেশের গল্প শুনাচ্ছে। মরুভূমির দেশের গল্প শুনে প্রজারা মুগ্ধ। প্রতাপ আরব দেশ থেকে এক মেয়েকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটা মুসলমান। তাকে সে রক্ষিতা হিসেবে নিজের কাছে রেখেছে। রক্ষিতার নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে পদ্মাবতী। প্রজাদের ধারনা পদ্মাবতী কোনো সাধানর মেয়ে নয়। এই মেয়ে বেহেশতের হুর। এমন রুপ পৃথিবীর কারো হতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহকে প্রতাপকে এই হুর উপহার দিয়েছেন। এবার নদীয়া জেলায় আর কোনো অঘটন ঘটবে না। দেখা গেলো- নদীয়া জেলায় মানুষের ভাগ্য বদলে যেতে শুরু করলো। ফসল ফলতে শুরু করলো আগের চেয়ে দ্বিগুন। নদীতে জাল ফেললেই বড় বড় মাছ ধরা পড়ে। ঝড় তুফান হয় না। এক বছর পর দেখা গেলো দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় কেউ দরিদ্র রইলো না।
পদ্মাবতী মরুভূমির দেশ থেকে এই দেশে এসে মুগ্ধ।
এই দেশে নদী আছে। চারদিক কি গাঢ় সবুজ! রোদ আছে কিন্তু রোদে তেজ নেই। মিষ্টি বাতাস। বাতাসে ধুলো উড়ে না। এই দেশে সারা বছর নানান রকম ফল ফলে। সেই ফলের স্বাদের তুলনা হয় না। মানুষ গুলো সহজ সরল। সবার মুখে হাসি। এই দেশের নারীরা ঘরের মধ্যে বন্ধী থাকে না। তাঁরা মাঠে ঘাটে কাজ করে। এরকম দেশ যে পৃথিবীতে আছে পদ্মাবতী জানতো না। অথচ পদ্মাবতীর জন্ম এক বেদুইন পরিবারে। তার বাবা মা তাকে লুকিয়ে রাখত। ভাগ্যিস প্রতাপ নামে একজনের সাথে তার দেখা হয়েছিলো। প্রতাপ তাকে ছিনিয়ে আনে নি। সে তার বাবা মার কাছ থেকে চেয়ে এনেছে। পদ্মাবতীও বুঝতে পেরেছিলো প্রতাপ দুষ্টলোক নয়। প্রতাপ তাকে স্ত্রীর সম্মান দিয়েছে। এখন সে জমিদারের স্ত্রী। মরুভূমিতে তাকে তাঁবু গেড়ে লুকিয়ে থাকতে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা সে এখন স্বাধীন।
ইংরেজদের মধ্যে বেশ কিছু দুষ্টলোক ছিলো।
তাঁরা নদীয়া জেলার এত পরিবর্তন থেকে অবাক! তাঁরা একদিন দক্ষিন চব্বিশ পরগনায় আক্রমণ করলো। রাজকোষ লুট করলো। প্রজাদের ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলো। গবাদি পশু গুলো আগুনে পুড়ে মরলো। ফসলের মাঠ নষ্ট করে দিলো। পুকুরে বিষ ছেড়ে দিলো। তাঁরা প্রতাপকে খুন করলো। এবং পদ্মাবতীকে অপহরন করলো। পদ্মাবতীকে নীল কুঠিতে নিয়ে যাওয়া হলো। টানা সাত দিন তাকে ধর্ষন করা হলো। এবং পদ্মাবতী মারা গেলো। এক কথায় বলা যায়- নদীয়া জেলাটাকে ইংরেজরা ধ্বংস করে দিলো। প্রজাদের দিয়ে জোর করে ইংরেজরা নীল চাষ করিয়ে নিচ্ছে। নিজের জমিতে ইংরেজদের ইচ্ছায় চাষ করতে হচ্ছে। অথচ প্রজারা সারা বছর খেয়ে না খেয়ে আছে। প্রথম পর্ব এখানেই লেখা শেষ। দ্বিতীয় পর্বে আর বিস্তারিত লেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮