somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মাইক্রো মাইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার মন মেজাজ খারাপ হলেই-
বিভিন্ন বিষয়ের উপর আমি কোর্স করি। ছোট ছোট কোর্স। ৮/১০ ঘন্টা অথবা এক দুই দিন সময় লাগে। সুরভি বাসায় নেই। কন্যাও সুরভির সাথে গিয়েছে। আমি গুলশান চলে গেলাম স্যারের বাসায়। পান্না স্যার। গিয়ে দেখি কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা কোর্স শুরু হবে। নানান বয়সী ছেলেমেয়ে বসে আছে। জানলাম যে কোর্স হবে সেটার নাম- 'মাইক্রো মাইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং'। বড় অদ্ভুত নাম। এই টাইপ কোর্স আমি আগে কখনও করি নাই। পান্না স্যার সম্পর্কে জানি উনি আমেরিকাতে লেখাপড়া করেছেন। কানাডাতে এক ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন। উনার বয়স এখন সত্তর। উনি এখন বাংলাদেশেই থাকেন। ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর কোর্স করান। আমার ধারনা ছিলো আজ স্যার 'ফিকোয়েন্সি'র উপর ক্লাস করাবেন।

ঠিক করলাম- আজ 'মাইক্রো মাইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং' কোর্সটা করবো।
ছয়শ' টাকা জমা দিয়ে বসে গেলাম। দুই ঘন্টার ক্লাশ। ক্লাশ নিবেন পান্না চৌধুরী স্যার। সব মিলিয়ে ৩০/৪০ জন আমরা। আমি এই ৩০/৪০ জন এর কাউকেই চিনি না। স্যার এসেই বোর্ডে কি কি যেন চিত্র আঁকলেন। কোয়ান্টাম সম্পর্কে কিছু বললেন, ফোটন সম্পর্কে কিছু বললেন। যা বললেন, এগুলো আমি জানি। নতুন কিছু না। স্যার কিছু কিছু কথা এত দ্রুত বলে যাচ্ছেন আমার বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাত ঘরের আলো বন্ধ করে দেওয়া হলো। স্যার একটা মোমবাতি জ্বালালেন। সবাইকে বললেন, মন দিয়ে মোমবাতির আলোর দিকে তাকাও। সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বললেন, একটু পর আবার চোখ খুলতে বললেন। স্যারের কথার সাথে তাল মিলাচ্ছি। পরিস্কার ভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি স্যারের দিকে মনোযোগ বাদ দিলাম। অন্ধকারের মধ্যে ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। দেয়ালে নানান রকম বানী টানী লেখা।

পান্না স্যার একজন ধার্মিক মানুষ।
ছন্দোবদ্ধ বাংলা কোরআন লিখেছেন তিনি। উনি ক্লাশ থ্রিতে পড়ার সময় অলিভার টুইস্ট পড়ে ফেলেছিলেন। তাও ইংরেজিতে। যদিও ডিকশনারির সহযোগিতা নিতে হয়েছিলো। ছোটবেলা থেকেই উনি চিন্তা করলেন আমাকে দশজনের মতো হলে হবে না। আমাকে হতে হবে আলাদা। ৭৪ সালে দেশের অবস্থা ভালো ছিলো না। তখন উনি আমেরিকা চলে গেলেন। স্যার খেলাধূলা পছন্দ করেন না। নাটক সিনেমা পছন্দ করেন না। তার ধারনা প্রতিভাহীনরা ক্রিকেট খেলে এবং অভিনয় করে। খেলোয়াড়দের খেলাধূলা না করে এবং অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় না করে মহৎ কিছু করা উচিৎ। স্যার চান সবাই বড় বড় স্বপ্ন দেখুক। এই ক্ষেত্রে স্যার বারাক ওবামার একটা উদাহরণ দেখান। স্যার বললেন, গরীব থাকা যাবে না। ধনী হতেই হবে। যেভাবেই হোক ধনী হতে হবে।

যাইহোক, ক্লাসে ফিরে যাই।
স্যার বললেন, আজ তোমাদের একটা জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের জীবন বদলে যাবে। আজ যা তোমাদের শেখাবো সেটা শুধু মাত্র পৃথিবীর একটা মাত্র ইউনিভার্সিটিতে শেখানো হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটি। মনে মনে 'মাইক্রো মাইন্ড ইঞ্জিনিইয়ারিং' বুঝার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাত ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো। কিছুতেই চোখ মেলে তাকাতে পারছিলাম না। আমার পাশে এক মোটা মহিলা বসেছেন। আমার মায়ের চেয়েও বেশি বয়স। ইচ্ছা করছে তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম পাবার কারন আছে। গতকাল রাতে একেবারেই ঘুম হয়নি। ফারাজা তার নানা বাড়ি গেছে। আমি তাকে সারাদিনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু সে খেলায় ব্যস্ত। আমার ফোন পেয়ে সে বিরক্ত। অথচ আমি ভেবেছিলাম মেয়ে আমার ফোন পেয়ে ভীষন খুশি হবে। মেয়েটা চোখের আড়াল হলেই বাবাকে ভুলে যায়। আজিব!!

আমার ভাগ্য ভালো- স্যার ঘুমের সুন্দর ব্যবস্থা করে দিলেন।
ঘরের লাইট বন্ধ করে দিলেন। একটা ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলেন। হালকা একটা মিউজিক ছেড়ে দিলেন। ঘুমের জন্য দারুন পরিবেশ। স্যার সমানে মাইক্রো ফোনে কি কি বলে যাচ্ছেন। সেদিকে আমি মন দিতে পারছি না। ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। ঘুমের মধ্যেই মাঝে মাঝে স্যারের কথা শুনছি। হাতের মুঠি বন্ধ করো। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনে হাতের মুঠি খুলে দাও। এবার জোরে শ্বাস নাও। ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দাও। দুনিয়াদারি সব ভুলে যাও। তোমাদের কেউ নেই এই দুনিয়াতে। স্যারের ঘরের এসিটা ভালো। পুরো ঘর ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। আমি গভুর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। খুব শান্তির ঘুম। এরকম ঘুমের জন্য প্রতিদিন স্যারের ক্লাশ করতে রাজী আছি। মাঝে মাঝে তন্দ্রা কেটে যাচ্ছে। তখন স্যারের কথা শুনতে পাই। মনটা শান্ত হয়েছে? শান্তি শান্তি লাগছে না?

একসময় ঘরের মিউজিক বন্ধ হয়ে গেলো।
শুরু হলো সমুদ্রের গর্জন। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে ফিরে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে। কিন্তু স্পিকারটা ভালো না। শব্দটা ক্লিয়ার না। কানে যেন শব্দ দুষন হচ্ছে। স্যার চিৎকার দিয়ে উঠলেন। সমুদ্র দেখতে পাচ্ছো? যাও সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেটে যাও। হাটতেই থাকো। টানা পনের মিনিট হাঁটো। এ বলে স্যার ঘরের বাইরে গেলেন। আমি এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। স্যার মাইক্রো ফোনে বেশ জোরে চিৎকার দিলেন আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমার পাশে বসা মহিলাটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। চোখ ডলে ভালো করে তাকিয়ে দেখি- রুমের সবাই একজন আরেকজনের সাথে হাতে হাত মিলাচ্ছে। দুই ঘন্টা কিভাবে পার হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
রাজীব আজকের ক্লাসটা কেমন লাগলো? আমি বললাম, স্যার এত সুন্দর ক্লাশ আমি আমার জীবনে করিনি। এই কোর্সটা আমার আরো বিশ বছর আগে করা উচিৎ ছিলো। স্যার খুশি হলেন। বললেন, বিকেলে আরেকটা সেশন আছে। সেটা করবে? টাকা না থাকলে সমস্যা নাই, পরে দিয়ে দিও। আমি বললাম, স্যার আজ আমার একটু তাড়া আছে। অন্যসময় এসে আপনার সব গুলো কোর্স করবো। আর আপনি যে ছন্দময় কোরআন লিখেছেন সেটাও এক কপি সংগ্রহ করবো। স্যার হঠাত বললেন, আমেরিকার জাতীয় কবি কে? আমি বললাম, Walt whitman। আর আমাদের জাতীয় কবি? কাজী নজরুল ইসলাম স্যার। স্যার বললেন, নজরুল বলেছেন, দারিদ্য তাকে মহান বানিয়েছেন। কথাটা ভুল ও মিথ্যা। দারিদ্যতা মানুষকে চোর বানায়। আর আমেরিকার কবি হুইটম্যান কি বলেছেন জানো? আমি বললাম, স্যার আজ আমার খুব তাড়া আছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৯:৩২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×