
লোকটা বাসার মধ্যে সমানে চিৎকার চেচামেচি করছে।
তার স্ত্রী, আর পুত্র কন্যারা বেশ বিব্রত। এই চিৎকার চেচামেচির কোনো কারন নেই। মেয়েটা বলল, প্লীজ বাবা থামো। এভাবে চিলাচ্ছো কেন? বাবার এমন হইচইতে পুত্র ভীষন চিন্তিত। কারন আর কিছু দিন পর তার বিয়ে। বাসায় নতুন একটা মেয়ে এসে যদি দেখে বয়স্ক একজন মানুষ এমন চিল্লাচিল্লি করছে তাহলে বিষয়টা ভালো লাগবে না। স্ত্রী দৌড়ে এসে বলল, ছেলেমেয়ে এখন বড় হয়েছে। শান্ত থাকো, এত হাউকাউ করার কিছু হয় নাই। এজাজ উদ্দিন বললেন, এই পদ্মাসেতুটা আর ত্রিশ বছর আগে কেন করা হলো না? এটা আমি জানতে চাই। স্ত্রী বললেন, ভাত দিয়েছি, খেয়ে নাও। এজাজ উদ্দিন রেগে গিয়ে বললেন, ভাত বেশি জরুরী না পদ্মাসেতু? ছোট মেয়ে রোমানা বলল, বাবা ভাত বেশি জরুরী। এজাজ উদ্দিন তার কন্যার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
ঘটনা শুরু এভাবে- এজাজ উদ্দিন একজন কাজ পাগল মানুষ।
এজাজ সাহেব বাসা থেকে ফযরের নামাজ পড়ে বের হতেন। ফিরতেন রাত ১১ টায়। তার ডেকোরেটরের ব্যবসা। অফ সিজনে তিনি গাড়ী চালাতেন। বাসায় সাত জন খাওয়ার মানুষ। উপার্জন করেন তিনি একা। তার বসে থাকলে চুলায় হাড়ি বসবে না। শুধু তো খাওয়া না, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। ডাক্তার, ওষুধ। অনেক খরচ। খরচের শেষ নেই। এজাজ সাহেব গত চল্লিশ বছর ধরে একই রুটিন মেনে চলেছেন। কাজ আর কাজ। তিনি বলেন, দুনিয়াতে পুরুষের কোনো বিশ্রাম নাই। পুরুষের বিশ্রাম কবরে। তার বড় মেয়ের বিয়েতে, তিনি মেয়েকে কিছুই দিতে পারেন নাই। কন্যা বিদায় নেবার সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে একটা কোরআন শরীফ কন্যার হাতে দেন। বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ। তোমায় কিছু দেবার ক্ষমতা আমার নেই। বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়েই ধার করতে হয়েছে। এই কোরআনটা তোমায় দিলাম। মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে কোরআন বুকে জড়িয়ে ধরলো।
এজাজ সাহেবের বয়স এখন ৫৯ বছর।
তার একটা লক্কর জক্কর মার্কা ভেসপা আছে। মাঝে মাঝে একআধদিন এজাজ সাহেব নিজের জন্য এক ঘন্টা সময় আলাদা করে রাখেন। এই ঘন্টা তিনি তাঁরা ভেসপা নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গলি ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে ভেসপা থামিয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা খান। কিছুদিন আগে তার ছেলে একটা চাকরি পায়। এজাজ সাহেব অনেক খুশি। ছেলেকে তিনি প্রতিদিন সকালে তার ভেসপা করে অফিসে দিয়ে আসেন। আবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় নিয়ে আসেন। একদিন সকালে ছেলেকে অফিসে পৌঁছে দেন। ফেরার পথে উলটো দিক থেকে আসা একটা পুলিশের গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি তার ভেসপা নিয়ে মাটিতে পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা গেলো পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে গেছে। তার স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে ভিড় করে ফেলল।
ডাক্তার হাসতে হাসতে বলেছেন-
বুড়া বয়সে হাড্ডি ভেঙ্গে গেলে সহজে জোড়া লাগে না। তবু দেখি কি করা যায়। যে পুলিশ তাকে ধাক্কা দিয়েছে, সে পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারপর আর কোনো খোজ নেয়নি। এদিকে চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ধারধেনা করতে হয়েছে। এজাজ সাহেব টানা তিন মাস বাসায় থেকে থেকে পাগলের মতো হয়ে গেলেন। কখন কি বলেন, তিনি নিজেও জানেন না। তিনি কাজ পগল মানুষ ছিলেন। টানা চল্লিশ বছর ফযরের নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হতেন। ফিরতেন রাত ১১ টায়। সেই মানুষ তিন মাস বাসায় থেকে কেমন পাগল পাগল হয়ে গেলেন। সারাদিন বাসায় শুধু চিৎকার চেচামেচি করেন। তার পা সারেনি। ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। বাসার মানুষজন তার চিল্লাচিল্লি আর মেনে নিতে পারছে না। ছেলেমেয়েরা শুধু বলে বাবা চুপ করো। চুপ করো বাবা। এজাজ সাহেব আজ খুব চেতেছেন দুদকের উপর। দুদকের লোকদের সমানে গালাগালি দিচ্ছেন।
ঘটনা চক্রে আমি এজাজ সাহেবকে চিনি।
তার মেয়ের কাছ থেকে তার কথা শুনে তাকে একদিন দেখতে গেলাম। এজাজ সাহেব আমাকে দেখেই চিনতে পারলেন। বললেন, এই রাজীব তুমি কি মনে করো- শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করার মতো যোগ্য লোক? আমি বললাম, আপনি কেমন আছেন? এজাজ সাহেব বললেন, আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। এজাজ সাহেব সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কাউকে ছাড়বো না। চাবকে পিঠের ছাল তুলে ফেলব। আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। এজাজ সাহেব তার স্ত্রীকে ডাক দিয়ে বললেন, দুপুরে খাওয়ার আয়োজন করো। রাজীব এসেছে। চিতল মাছ রান্না করো। লবন কম দেবে। তুমি তো লবন রানী, এত বেশি লবন দাও যে খাবার মুখে দেওয়া যায় না। এখন, দু কাপ চা পাঠিয়ে দাও। এজাজ সাহেব খুব চিন্তিত মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, পুটিন আসলে কি চায়? তোমার কি মনে হয় না পুটিনের সাথে হিটলারের অনেক মিল আছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



