
ছবিঃ আমার তোলা। ছবিতে আমার বন্ধু শাহেদ জামাল।
আমি বই পড়ি। বই পড়তে আমার ভালো লাগে।
বাসায় কেউ না থাকার কারণে লম্বা সময় ধরে একটানা বই পড়তে পারি। মন চাইলে মুভি দেখি। দেখা মুভি গুলোই বারবার দেখি। যেমন ধরুন, 'লাইফ ইজ বিউটিফুল'। এই মুভি কতবার যে দেখেছি হিসাব নাই। তারপর 'দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন'। অসাধারন একটা মুভি। যত বার দেখি বিরক্ত লাগে না। 'ফরেস্ট গাম্প' চমৎকার মুভি। ঘুরেফিরে দেখা মুভি গুলোই বারবার দেখি। ভালোই লাগে। আমার লিখতে বড় ভালো লাগে। অথচ আমি গুছিয়ে সুন্দর করে লিখতে পারি না। আমার লেখা মানেই বড্ড অগোছালো। তারপরও লিখি। লেখালেখির মধ্যে এক ধরনের অকৃত্রিম সুখ আছে। আনন্দ আছে।
গত কয়েকদিন ধরে আমি বাসায় একা।
বউ বাপের বাড়ি গেছে। বাচ্চাদের সাথে করে নিয়ে গেছে। এবার লম্বা সময়ের জন্য বেড়াতে গেছে। আমি প্রতিদিনই আমার কন্যাকে ফোন দেই। ভিডিও কলে কথা বলি। কন্যা ঠিক করে কথা বলে না, খেলায় ব্যস্ত। মাঝে মাঝে গিয়ে ওদের দেখে আসি। আমি একজন সাংসারিক মানুষ। বউ, বাচ্চা নিয়েই আমার দুনিয়া। মূলত আমার একা থাকতে ভালো লাগে না। বিশেষ করে রাতে খুব কষ্ট হয়। দম বন্ধ হয়ে আসে। এমনকি বিছানায় যাওয়া মাত্র ভয় ভয় করে। অথচ আমি জানি ভূত বলে দুনিয়াতে কিছু নেই। কিন্তু আমার মনে হয় ঘরে কেউ আছে। আমাকে লক্ষ্য করছে। হয়তো আমি ঘুমিয়ে গেলে আমাকে বালিশ চাপা দিয়ে অথবা গলা টিপে মেরে ফেলবে। এই টেনশনে আরাম করে ঘুমাতে পারি না।
আমি ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ।
তাছাড়া বাইরে আমার কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। আমার কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। আত্মীয়স্বজন আছে ম্যালা আছে, কিন্তু তাদের সাথে আন্তরিকতা নেই। যোগাযোগ নেই। ভাইদের সাথেও কেমন একটা দূরত্ব হয়ে গেছে। মা আছে। কিন্তু মা ব্যস্ত তার নিজের ভুবন নিয়ে। সারাদিন মা নাটক, সিনেমা, টকশো দেখে। আর ডাক্তার আর ওষুষ এই হচ্ছে মার দুনিয়া। একা থাকা আমার জন্য ভীষন কষ্টের। মাঝে মাঝে রাস্তায় বের হয়ে হাঁটাহাঁটি করি। চায়ের দোকানে বসে থাকি। লোকজন গল্প করে, তাদের গল্প শুনি। আমি ভালো থাকি বা মন্দ থাকি তাতে জগতের কিছুই যায় আসে না। আসল কথা হচ্ছে 'সময়'। সময় থেমে থাকে না। সময় থেমে যাওয়া মানে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। যতদিন সূর্য আছে, তত দিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না।
বাসায় একা থাকলে নিজের চা নিজেকেই বানিয়ে খেতে হয়।
আমি চা বানাতে পারি কিন্তু চা ভালো হয় না। হয় চিনি বেশি হবে অথবা দুধ বেশি হবে। নিজের বানানো চায়ে চায়ের আসল স্বাদ পাই না। ঘন্টার পর ঘন্টা আমি ব্যলকনিতে বসে থাকি। ভাবি। শুধু ভাবি। কত কি যে ভাবি। দেশ নিয়ে ভাবি। বিশ্ব নিয়ে ভাবি। বেকারত্ব নিয়ে ভাবি। আমাদের এই বিপুল জনসংখ্যা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা নিয়ে ভাবি। মানুষ শুধু নিজের যত্ন নেয়। পৃথিবীর যত্ন নেয় না। বরং মানুষ পৃথিবীর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এত এত কলকারখানা করেছে, সমানে গাছ কেটে ফেলছে, মাটি নষ্ট করে ফেলছে, নদী নষ্ট করে ফেলছে। তবু মানুষ ভালো নেই। পৃথিবী দূষিত করতে গিয়ে মানুষ নিজের মন আর আত্মাকে দুষিত করে ফেলেছে। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ৩/৪ ঘন্টা পার হয়ে যায়। এভাবেই হাসি আনন্দে সুখ দুঃখে সময় পার হয়ে যায়।
কথায় বলে যে একা সে-ই সামান্য। আমি মানুষটা মূলত একা।
এই সমাজের মানুষদের সঙ্গ আমার ভালো লাগে না। একজন স্বচ্ছ পবিত্র মানুষ খুঁজে পাই না। সব মানুষের মধ্যে জটিলতা কুটিলতা দিয়ে ভরা। অথচ আমি মানুষকে দেখতে চাই সহজ সরল মানবিক ও হৃদয়বান হিসেবে। একদম একটা খোলা বইয়ের মতোন। যেন ইচ্ছে করলেই পড়ে ফেলা যায়। সমস্ত মহাকাশে ও সমুদ্রের গভীরে যত রহস্য আছে, তার চেয়ে বেশি রহস্যময় ও কুৎসিত হচ্ছে 'মানুষ'। তবু আমি মানুষকে ভালোবাসি। এই মানুষকে আমি আড়ালে কতবার কাঁদতে দেখেছি। দেখেছি তাদের বুকের ভিতরের হাহাকার। তাই আমি সমস্ত মানুষ ও বইকে বুন্ধু বানিয়ে নিয়েছি। আপন করে নিয়েছি। স্বপ্নবাজ সৌরভ ভাই জানতে চেয়েছেন ''আপনি যখন বাসায় একা থাকেন তখন কী কী করেন''? আপনার জন্যই আজকের এই লেখাটা। সৌরভ ভাই একদিন আমার বাসায় আসেন। নিজের চোখেই দেখে যান। ভালোবাসা নিরন্তর।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



