somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ভালো মন্দ

০৯ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খালি পকেটে এই শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়াই।
পেটে ক্ষুধা নিয়ে। খুব ইচ্ছা করে রাস্তার পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা খাই। সাথে একটা কেক। খাওয়া শেষে একটা বেনসন সিগারেট হলে তো কথাই নেই। অথচ এই সামান্য জিনিস কিনে খাওয়ার টাকা আমার সাথে থাকে না। জন্মের পর থেকে অভাব আমার পিছু নিয়েছে। অথচ খেয়ে না খেয়ে বড় হয়ে গেলাম। এবং বেঁচে আছি। যারা পেট ভরে ভালো ভালো খাচ্ছে তাদের প্রতি আমার রাগ হয় না। হিংসা হয় না। প্রফেসর আলতাফ স্যার বলেছিলেন, তোমার যদি খুব মন খারাপ হয় অথবা নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়- তাহলে রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' পড়ো অথবা চার্লি চ্যাপলিনের মুভি গুলো দেখো। এই স্যারের উপর আমার অনেক রাগ। এই স্যার সুযোগ পেলেই মানুষের জীবন নিয়ে হাসিতামাশা করেন। প্রফেসর আলতাফ কোনদিন আমার মতো- জমি চাষ করেননি, লাঙ্গল চালাননি, নৌকায় বৈঠা মারেননি। না খেয়ে থাকেননি। তাই উনি আটকে আছেন রবীন্দ্রনাথ আর চার্লি চ্যাপলিনে।

এই শহরে আমার নিজের বাড়ী নেই, গাড়ি নেই।
আত্মীয়স্বজন পর্যন্ত নেই। সত্য কথা বলতে নিশ্চিত থাকার জায়গাও নেই। তবু আমি খুশি। কারন আমি বেঁচে আছি। করোনাতে কত লোক মারা গেলো। আল্লাহ্‌ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি খুশি। অন্যের গাড়ি বাড়ি, বিলাসিতা দেখে আমি আনন্দ পাই। অন্যের হাসিমুখ দেখে আমি আনন্দ পাই। একটা মেয়ে বাবার হাত ধরে বেড়াতে যাচ্ছে। দেখে অনেক ভালো লাগে। আমি ওদের জন্য দোয়া করি। অথচ আমি ওদের চিনি না, জানি না। সকালবেলা এক মেয়ে টিফিন বক্স নিয়ে গার্মেন্সের দিকে যাচ্ছে। মেয়েটা কিছুটা সেজেছে। তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি মেয়েটার জন্য প্রার্থনা করি। অথচ এই মেয়েটার সাথে বাকি জীবনে হয়তো আর দেখাও হবে না। সেই গল্পটার মতো, বিশাল জমিদার বাড়ির পাশে এক কুঁড়ে ঘর। সেই কুঁড়ে ঘরে থাকেন চালচুলোহীন এক বুড়ো। সেই বুড়ো বলে- এই যে জমিদারের বিশাল বাড়ি, সিংহ দ্বার, বাঁধানো পুকুর ঘাট, এই যে ফুলের বাগান, এগুলোর মালিক আমি। হ্যাঁ কাগজে কলমে জমিদার বাবুই মালিক কিন্তু এসবের সৌন্দর্য আমি সমান ভাবে উপভোগ করি। উপভোগ করতে দলিল লাগে না।

জীবনে কষ্ট কম করি নাই। সবচেয়ে বেশি পেয়েছি ভাতের কষ্ট।
একবেলা কোনো ভাবে পেট ভরে খেতে পারলেও, পরের বেলা খাবারের চিন্তায় মন ভার হয়ে থাকতো। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বৃষ্টির স্কুলে যেতাম। টানা তিন মাইল হাঁটতে হতো। বইখাতা যেন ভিজে না যায় সেজন্য পলিথিনে করে জামার ভিতরে বইখাতা রাখতাম। তবু ভিজে যেত। ঢেপা নদীতে আমি মাছ ধরতাম। প্রফেসর আলতাফ কি কোনদিন নদীতে জাল ফেলে আমার মতো মাছ ধরেছেন? উনি মনে হয় ঢেপা নদীর নামই শুনেন নাই। কোথাও একটা গাছের চারা ফেলে দিলে, সেই চারা একসময় বড় হয়ে যায়। আমার অবস্থা হয়েছে সেরকম। বাবা মা শুধু জন্ম দিয়েছেন। তারপর তাঁরা হারিয়ে গেছেন। কেউ আমার পাশে নেই। অথচ আমি বেঁচে আছি, টিকে আছি। এটা আমার এক ধরনের অহংকার। যেহেতু আল্লাহ এখনও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার মানে উনি আমাকে দিয়ে আরো অনেক কিছু করিয়ে নেবেন। আমি সেই অপেক্ষায় আছি। সূতা তো আমার হাতে নেই। সূতা আল্লাহর হাতে। আমি অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।

আমার এক খালা আছেন। তার কোনো ছেলেমেয়ে ছিলো না।
সে খালা আমাকে শুধু বলতেন, বেঁচে থাক বাবা। তোর কাছে আমি আর কিচ্ছু চাই না। শুধু বেঁচে থাক। সেই থেকেই আমার শুধু একটাই চিন্তা আমাকে বেচে থাকতে হবে। হ্যাঁ আমি বেঁচে আছি। অথচ খালা বেঁচে নেই। আমার খালা বেঁচে থাকলে আমি জীবনে হাতী ঘোড়া কিছু একটা হয়তো হয়ে যেতাম। খালা জোর করে আমাকে নজরুল পড়িয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ পড়িয়েছেন। শ্রেক্সপিয়ার পড়িয়েছেন, তখন আমার তেরো বছর বয়স। এরপর আমি নিজের তাগিদে মাওলা রুমী পড়লাম, শেলী পড়লাম, ফ্রস্ট পড়লাম, লেনিন পড়লাম। পড়তেই থাকলাম। পড়ার চেয়ে, জানার চেয়ে আনন্দ আর কোনো কিছুতে নেই। চিনলাম চে গুয়েভারাকে, এরিস্টটলকে, লালনকে, মেন্ডেলাকে, মহাত্মা গান্ধীকে, আইনস্টানকে, শেখ মুজিবকে, মাদার তেরেসাকে, গোর্কিসহ সমস্ত জ্ঞানীগুনী আর ভন্ডদের। শহরের অনেক রাস্তায় সকালে দেওয়ালে পত্রিকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেই পত্রিকার পাঠক আমি। সমস্তটাই পড়ি। একলাইনও বাদ দেই না। আমি বাজার না করেও বাজারের সমস্ত জিনিসপত্রের দাম জানি।

আমি মানুষকে ভালোবাসি।
হয়তো মাদার তেরেসার মতোণ করে নয়। তবু আমি মানুষকে ভালোবাসি। হোক সে একজন চোর, দূর্নীতিবাজ অথবা পকেটমার। হোক সে ধনী অথবা দরিদ্র। কারন, আমি জানি ভালোবাসা দিয়ে মন্দকে, মহৎ করে গড়ে তোলা যায়। একজন মানুষ মন্দ বলেই তাকে দূর দূর করবো আমি সেরকম নই। আমি তাকে ভালবাসবো। ভালোবাসা পেলেই একজন মন্দ মানুষ ভালো হয়ে যাবে। একজন রিকশাচালকের কাঁধে আমি ভালোবেসে হাত রাখি। গতকালের একটা ঘটনা। একলোক রাস্তায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো অযথাই। আমি ময়লার স্তূপে পড়ে গেলাম। আমি লোকটাকে গালমন্দ করি নাই। ক্ষমা করে দিলাম। বাসের ভাড়া দিতে পারি নাই বলে বাসের কন্টাকটর আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়নি। গন্তব্যেই নামিয়ে দিয়েছিলো। আশার কথা হচ্ছে এই সমাজের সব মানুষ এখনও মন্দ হয়ে যায়নি। রবীন্দ্রনাথ যে কেন বললেন, ভারতকে জানতে হলে স্বামী বিবেকানন্দকে জানো। একথাটা আমার কাছে যথাযথ মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:১৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিকার !

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২



একটা শিকার-
শিকার করবো বলে মনে মনে পুষলেও শেষ পর্যন্ত করিনি স্বীকার!
যে লোহার আকশি দিয়ে শিকার গাঁথবো ভেবেছিলাম
প্রান্তরে নেমে দেখি আকশিরও মুখ ভোতা!
সে নাকি নিজেই কবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×