
যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।
এরিস্টটল, পিথাগোরাস এদের জন্মের বহু বছর পর জন্ম নেন আমাদের নবীজি।
নবীজি জন্মের বহু বছর পর জন্ম নেন, মাওলানা রুমী। রুমীকে এখন সারা বিশ্ব চিনে, জানে। এখন পর্যন্ত আমেরিকাতে রুমীর বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। রুমী নামের আরবিক অর্থ বলা যেতে পারে রোমান। ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর বর্তমান (আফগানিস্তান) বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ এবং মুইমিনা খাতুনের কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে সন্তান। পিতা তার নাম রাখেন জালাল উদ্দিন। রুমী পড়তে পছন্দ করতেন। প্রচুর পড়াশোনা আর দুনিয়াকে জানার চেষ্টাই রুমী যেতে পেরেছেন জ্ঞানের গভীরতম শাখায়। রুমির সাহিত্যকর্ম বেশির ভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও রচনা করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা লেখক ও ব্যক্তিরা রুমির লেখা দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। রুমির বয়স যখন ২৫ বছর তখন তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা রুমির জন্ম অত্যন্ত সচ্ছল পরিবারে।
১২২৫ সালে রুমি গওহর খাতুনকে বিয়ে করেন।
তাদের দুজন ছেলে- সুলতান ওয়ালাদ এবং আলাঊদ্দিন চালাবী। এরপর গওহর খাতুন মারা গেলে রুমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করেন, যার আগে একটি মেয়ে ছিল, কিমিয়া খাতুন নামে। এখানে রুমির এক ছেলে আমির আলিম চালাবী এবং এক মেয়ে মালাখী খাতুনের জন্ম হয়। মাওলানা রুমির বয়স যখন মাত্র ১১ বছর, সে সময় মঙ্গোলরা মধ্য এশিয়ায় আক্রমণ করে। ফলে মাওলানা রুমির বাবা তার কিছু অনুসারীসহ তাদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র রওয়ানা হন। সে সময় রুমি চলার পথে অনেকের সান্নিধ্যে আসেন, যা তার জ্ঞানের গভীরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। মাওলানা রুমি প্রাথমিক জীবনে সারা দিন হাদিস, তফসির ইত্যাদি ধর্ম গ্রন্থের কিতাব পাঠে সময় ব্যায় করতেন। মাওলানা রুমির আশে পাশে লক্ষ লক্ষ মুরিদান, আলেম, মুহাদ্দিস বসে থাকতেন শুধু তার মুখের একটু বানী শোনার জন্য।
১২৪৪ সালের ১৫ই নভেম্বর তার সাথে পরিচয় হয়ে যায় 'শামস তাবরিজি'র।
শামস তাবরিজি ছিলেন একজন চালচুলোহীন ভবঘুরে সাধু, লোকে যাকে ‘পাখি’ বলে ডাকতো। শামস তাবরিজির সংস্পর্শে এসে রুমির আমুল পরিবর্তন হয়। ১২৪৮ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রুমি এবং শামস কথা বলছিলেন, এমন সময় কেউ শামসকে পিছনের দরজায় ডাকে। তিনি বের হয়ে যান এবং এরপর আর কোথাও কখনো দেখা যায়নি। গুজব শোনা যায় যে রুমির পুত্র আলাউদ্দিন এর মৌন সম্মতিতে শামসকে হত্যা করা হয়। রুমি প্রায়ই তার অনুসারীদের নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃতির মাঝে ঈশ্বর অদৃশ্য জগতের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। রুমি প্রকৃতিকে ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতিফলন রূপে দেখতেন এবং সেখান থেকে কবিতা গজল রচনা করার অনুপ্রেরণা পেতেন।
রুমি জীবনের শেষ পঞ্চাশটি বছর কাটিয়েছেন তুরস্কের কোনিয়ায়।
রুমি আনন্দ ও প্রেমের কবি। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এই সাধক ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দে ৬৮ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। আজও যেখানে তাঁর মাজার, সেই কোনিয়াতে রুমী ফেস্টিভ্যাল হয় প্রতি বছর। সারা পৃথিবী থেকে সেখানে মানুষ জড়ো হোন। রুমির জানাজায় অংশ নিতে প্রায় সব ধর্মের মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, রুমির কবিতা তাঁদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আরও গভীরভাবে বিশ্বাসী করে তুলেছে। রুমির কবিতার শক্তি এ জায়গাতেই।
রুমি আমাদের দেশে অবহেলিত।
খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশে কেউ ঘরের মধ্যে রুমির ছবি টানিয়ে রাখে না। কিন্তু অনেক পরিবারে আপনি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখতে পাবেন। এমনকি কবি কাজী নজরুলের ছবিও দেখতে পাবেন। কলকাতায় অনেক বাড়িতে আপনি রবীন্দ্রনাথ আর স্বামী বিবেকানন্দের ছবি দেখতে পাবেন। মহাত্মা গান্ধীর ছবিও পাবেন। কিন্তু রুমিকে খুঁজে পাবেন না। রুমি কি দেখতে সুন্দর ছিলেন না? আমাদের দেশের সাধারন মানুষ লালনকে চিনে কিন্তু রুমিকে চিনেন না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে জাতির উন্নতি হচ্ছে না। আমেরিকার মানুষ রুমি পড়ে কিন্তু আমরা পড়ি না। আফসোস। রুমি যা বলে গেছেন তা আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ। তার কথা হৃদয়ে ধারন করলে আমরা পাপ থেকে মুক্তি পাবো। আমাদের ভালো হবে। আমাদের হৃদয় শীতল হবে।
রুমির পাঁচ টি জনপ্রিয় বই-
১। মসনবী, (৬ খণ্ড)
২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন)
৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য)
৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা)
৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



